অচল হয়ে পড়েছে ফেনী জেলার ৯২ শতাংশ মোবাইল টাওয়ার। একদিকে বিদ্যুৎসংযোগ না থাকা, অপরদিকে টাওয়ার এলাকা ডুবে যাওয়ায় নেটওয়ার্ক সচল করা যাচ্ছে না। এদিকে সারা দেশে বন্যাকবলিত ১০ জেলার প্রায় ১১ শতাংশ মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) বন্যাকবলিত অঞ্চলের মোবাইল নেটওয়ার্ক পরিস্থিতি নিয়ে এ কথা জানিয়েছে।
বিটিআরসি আরও জানায়, সেনাবাহিনীর সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় টাওয়ার সচল করতে সমন্বয়ের কাজ চলছে। তবে যেসব টাওয়ার এলাকা ডুবে গেছে, পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত সচল করার কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
অপরদিকে ফেনী জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত টাওয়ার সচল করার কাজ চ্যালেঞ্জিং ও সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া সিলেট ও মৌলভীবাজার এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সেখানে যোগাযোগ স্থাপন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছে বিটিআরসি।
বিটিআরসি জানায়, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার ১৩ হাজার ২৪০টি টাওয়ারের মধ্যে আজ বিকাল তিনটা পর্যন্ত ১ হাজার ৪৬১টি টাওয়ার অচল ছিল।
এর মধ্যে ফেনী জেলার ৯১ দশমিক ৯ শতাংশ টাওয়ারই অচল হয়ে গেছে। এরপর নোয়াখালী জেলার ২১ শতাংশের বেশি, খাগড়াছড়ির ১৫ শতাংশের বেশি ও কুমিল্লার প্রায় ১৪ শতাংশ টাওয়ার অচল।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে ১১টি জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এ জেলাগুলোয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬২৯টি পরিবার।
এদিকে টানা ভারি বৃষ্টি ও বাঁধ খুলে দেওয়ায় ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। বন্যার পানিতে লাখ লাখ মানুষের বাড়িঘর-ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। সেসব এলাকায় তৈরি হয়েছে মানবিক বিপর্যয়।
এসব জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। এখন পর্যন্ত ১৩ জন মারা গেছেন। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দুপুর ১২টার পর সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান।
বন্যাকবলিত এলাকায় আবহাওয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে শুক্রবার সকালে আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, সারা দেশেই কমবেশি বৃষ্টি হবে। চট্টগ্রাম বিভাগসহ কিছু অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারি ও অতি ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী রোববার পর্যন্ত এ পরিস্থিতি থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলে বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও শঙ্কা কাটেনি। আখাউড়ার সীমান্তবর্তী এলাকা জয়নগর দিয়ে ভারতের পাহাড়ি ঢলের পানি তীব্র বেগে আসছে। মূলত উপজেলার হাওড়া নদীর ও আগরতলা সংযুক্ত আখাউড়া ইমিগ্রেশনের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জাজিরা, কাটা ও কালন্দি খাল দিয়ে ভারত থেকে পানি ঢুকছে।
জানা গেছে, ভারি বৃষ্টি না হওয়ায় সিলেটে নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে। তবে এখনো জেলার কুশিয়ারা নদীর চার পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটে বৃষ্টিপাত খুব বেশি না হওয়ায় পানি কমতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যার শঙ্কা রয়েছে।
এদিকে, দীর্ঘ ৮ দিন পর নোয়াখালীতে রোদের দেখা মিলেছে। ভাটায় পানি মেঘনা নদীতে নামতে শুরু করলেও এখনো পানিবন্দি আছেন ২০ লাখ মানুষ। জেলা আবহাওয়া অফিস বলছে, গত ১৬ আগস্ট থেকে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে জলাবদ্ধতা বাড়ে এবং মুহুরী নদীর পানি প্রবেশ করায় তা বন্যায় রূপ নেয়। শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/ ২৩ আগস্ট ২০২৪