সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বৃহস্পতিবার থেকে চাঁদপুরের ৪০ গ্রামে রমজান শুরু হচ্ছে। জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা দরবার শরিফের অনুসারীরা প্রতি বছরই আগাম রোজা ও দুই ঈদ উদযাপন করেন।
সাদ্রা দরবার শরীফের বর্তমান পীর শায়েখ মো. আরিফ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা গতকাল রাতে তারাবি পড়েছি, সেহরি খেয়ে আজ থেকে রোজা পালন শুরু করেছি। ২৯ শাবান কোথাও চাঁদ দেখা যায়নি। ৩০ শাবান শেষ। এরপরতো আর মাস হয় না। আজ থেকে পহেলা রমজান।’
বৃহস্পতিবার থেকে রোজা রাখছেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল, শ্রীপুর, মনিহার, বরকুল, অলীপুর, বেলচোঁ, রাজারগাঁও, জাকনি, কালচোঁ, মেনাপুর, ফরিদগঞ্জ উপজেলার শাচনমেঘ, খিলা, উভারামপুর, পাইকপাড়া, বিঘা, উটতলী, বালিথুবা, শোল্লা, রূপসা, বাশারা, গোয়ালভাওর, কড়ইতলী, নয়ারহাট, মতলবের মহনপুর, এখলাসপুর, দশানী, নায়েরগাঁও, বেলতলীসহ কচুয়া ও শাহরাস্তির বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ।
জানা গেছে, হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা গ্রামে ১৯২৮ সাল থেকে একদিন আগে এই প্রথা চালু করলেও এখন লক্ষাধিক মানুষ সারা দেশের মানুষের পালনের একদিন আগে রোজা-ঈদ উদযাপন করছেন।
১৯২৮ সালে হাজীগঞ্জ উপজেলার রামচন্দ্রপুর মাদ্রাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইছহাক খান আরব দেশসমূহের সাথে সঙ্গতি রেখে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু স্থানীয় গ্রামবাসী অসহযোগিতা করলে সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়। দেশে সরকারি নিয়মের বাইরে একদিন আগে ঈদ পালনের উদ্যোগ গ্রহণের দায়ে মাওলানা খানকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
ধর্ণাঢ্য ও প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান মাওলানা খান ওই বছরই চলে আসেন নিজ গ্রাম একই উপজেলার সাদ্রায়। আরব দেশসমূহের রীতিনীতি অনুযায়ী ধর্ম-কর্ম পালনের জন্য প্রথমে নিজ গ্রামে শুরু করেন ব্যাপক গণসংযোগ। গ্রামের অসহায়, দুঃস্থ মুসলমানদের প্রচুর আর্থিক সাহায্য দিয়ে আরব দেশগুলো সাথে সংগতি রেখে একদিন আগে ঈদসহ সব প্রকার ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদ্যাপন প্রথা চালু করেন।
মাওলানা খানের মতে হানাফি, মালেকি ও হাম্বলী মাজহাবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদসহ সর্বপ্রকার ধর্মীয় কার্যক্রম বিশ্বের সব দেশে একসাথে পালিত হবে। বাংলাদেশ পবিত্র কাবা ঘর থেকে ৫০.১২ দ্রাঘিমাংশ পূর্বে অবস্থিত। মক্কার সাথে রাজধানী ঢাকার সময়ের ব্যবধান ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড। সময়ের ব্যবধান এত অল্প হলে একসঙ্গে রোজা রাখা ঈদ উদযাপন করতে বাধা থাকার কথা নয় বলে তাদের দাবি।
মাওলানা ইছহাক খান ১৯৮৫ সালে ১৩ নভেম্বর ইন্তেকাল করলে তার কবরকে ঘিরে গড়ে উঠেছে মাজার। তার ৬ ছেলে ও ১ মেয়ে। তারা হচ্ছেন- মাও. আবু জাফর হাই, আলহাজ্ব মাও. আবু বকর, মো. ঈসমাঈল, মাও. আবুল খায়ের, মাও. মো. শেখ ইলিয়াস, আলহাজ্ব মাও. আবু ইয়াহিয়া, মো. জাকারিয়া আলমাদানী, হাফেজ মাও. আহাম্মদ হোসাইন, মাও. শাহ মোঃ হাসান ও ওয়াহরেহা ফাতেমাতুজ জোহরা।
৬ সন্তানই পিতার মতবাদ প্রচারে সদা নিবেদিত। সেই সাথে ওই মতবাদ প্রচারে কাজ করছেন মাও. ইছহাক খানের অসংখ্য মুরীদ। তার মৃত্যুবার্ষিকীতে ওরস মাহফিলও হয় পৃথক পৃথকভাবে।
স্টাফ করেসপন্ডেট, ২৩ মার্চ ২০২৩