Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / ফরিদগঞ্জে ভাগাভাগি দ্বন্দ্বে ঝুলে আছে আর্সেনিকমুক্ত ৮৪৪ গভীর নলকূপ
tubewel
ফাইল ছবি

ফরিদগঞ্জে ভাগাভাগি দ্বন্দ্বে ঝুলে আছে আর্সেনিকমুক্ত ৮৪৪ গভীর নলকূপ

চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে আর্সেনিক মুক্ত পানি সংগ্রহের জন্য সরকারি ভাবে বরাদ্দ হওয়া মোট ৮’শ ৪৪টি গভীর নলকূপ গত প্রায় দেড় বছরেও স্থাপনা কনতে পারছে না । ফলে নানা প্রতিবন্ধকতার কারনে আর্সেনিকমুক্ত পানি সংগ্রহে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে উপজেলার বিশাল জনগোষ্টিকে।

সাবেক এমপি ড.মোহাম্মদ সামছুল হক ভূঁইয়া’র সময় বরাদ্দ হওয়া ওইসব টিউবওয়েল ভাগাভাগি নিয়ে সরকারি দলের দু’পক্ষের টানাটানির কারণে সকল ইউনিয়নে ওইসব টিউবওয়েল বসানো সম্ভব হচ্ছে না বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এ নিয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এড.জাহিদুল ইসলাম রোমান বলেন, আর্সেনিক নিরসন প্রকল্পের ৮’শ ৪৪টি ডিপটিউবওয়েল মূলত গত সরকারের আমলে ১৫টি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যানদের নামের বরাদ্দ হয়েছিল।

এ টিউবওয়েল ভাগাভাগি নিয়ে এমপির গ্রুপের সাথে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সাথে সৃষ্ট বিরোধের বিয়টি জনপ্রতিনিধিরা উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায়ও উত্থাপন কারা হয়েছে। গত এক বছরেও ওই টিউবওয়েলগুলো জনস্বার্থে স্থাপন না করার বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি ভাবে বরাদ্দ হওয়া ডিপটিউবওয়েল ভাগাভাগি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে টানাটানির কারণে যথাসময়ে সেগুলো বসাতে না পেরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও প্রতিটি এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা কার্যত এখন পড়েছে বিপাকে। তবে কবে নাগাদ ওইসব টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ শেষ হবে তা সুষ্পষ্টভাবে কেউ বলতে পারছে না।

সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা বলেন, গত সরকারের সময় স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন প্রকল্পের ৮’শ ৪৪ টিউবওয়েল বরাদ্দ করা হয়েছিল। বরাদ্দের পর-পর প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা স্থান নির্ধারণ করে তালিকা জমা দিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের ফরিদগঞ্জের উপ-সহকারী শফী মোহাম্মদ হাসানের কাছে।

কিন্তু এসব টিউবওয়েল ভাগাভাগি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার কারনে মূলত আর্সেনিকমুক্ত টিউবওয়েলগুলো বসানো নিয়ে বিপাকে আছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিরা।

জানা যায়, বর্তমান এমপি ও কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে বিভিন্ন ভাবে সমজোতা করে এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত ৬টি ইউনিয়নে মোট ১শ ৯৪টি ডিপটিউবওয়েল বসানো হয়েছে।

ইউনিয়নগুলো হচ্ছে ১নং বালিথুবা (পশ্চিম), ২নং বালিথুবা (পূর্ব) ১৪ নং ফরিদগঞ্জ (দক্ষিন), ১৫ নং রুপসা (উত্তর), ১০ নং গোবিন্দপুর (উত্তর), ও ৬ নং গুপ্টি (পশ্চিম) ইউনিয়নে টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে।

অপরদিকে স্থান নির্ধারনের জন্য তালিকা ফরিদগঞ্জের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগে দেয়া হয়েছে। তবে বর্তমান এমপি মুহম্মদ শফিকুর রহমানের সম্মতি না থাকার অজুহাত দেখিয়ে বাকী ৯টি ইউনিয়নে টিউবওয়েল বসানোর কাজ পুরোদমে চালু করতে পারছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চেয়ারম্যান ও মেম্বারগন।

এ নিয়ে সাবেক এমপি ড. শামছুল হক ভুঁইয়ার নিজ ইউনিয়ন ১৬নং (দক্ষিন) রুপস ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসকান্দার আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন প্রকল্পের অধীনে মন্ত্রনালয় আমার ইউনিয়নের জনসাধারনরে জন্য মোট ৫৬টি ডিপটিউবওয়েল সরকারি ভাবে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। ফরিদগঞ্জের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর সাথে গত প্রায় এক বছর যাবৎ বহুবার যোগাযোগ করেও আমার ইউনিয়নে একটি টিউবওয়েল স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
১২ নং চর দুখিয়া ইউপির চেয়ারম্যান হাছান আবদুল হাই বলেন, আমার ইউনিয়নের জন্য ৪০টি টিউবওয়েল বরাদ্দ পাওয়া গেলেও দু’পক্ষের টানাটানির কারনে এখনো কোন স্থান নির্ধারনের তালিকা দিতে পারছি না।

৯নং গোবিন্দপুর ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল চৌধুরী বলেন, আমার ইউনিয়নের জন্য ৬৪টি ডিপটিউবওয়ের বরাদ্দ পেলেও এখনো ডিপটিওবয়েলগুলো বসানো হয়নি। তবে জনস্বার্থে বর্তমান এমপির নির্দেশনা নিয়েই আমার ইউনিয়নে টিউবওয়েল বসানোর বিষয়টি সুরাহা হয়ে গেছে। আশা করি অল্প কয়দিনের মধ্যে এ গুলো বসবে।

১১ নং চরদুখিয়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা বাছির আহাম্মেদ বলেন, এই ইউনিয়নে ৫৩টি টিউবওয়েল বরাদ্দ হলেও গত প্রায় এক বছরেও একটি টিউবওয়েল স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

সুত্র জানা যায়, প্রতিটি আর্সেনিকমুক্ত টিউবওয়েল পেতে উপকারভোগী থেকে সরকারি কোষাগারে ৭ হাজার ৫ শ টাকা জমা দিতে হয়। সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় ৬০ হাজার টাকা সহ প্রতিটি টিউবওয়েল স্থাপনে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা।

এ নিয়ে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ফরিদগঞ্জের প্রকৌশলী শফী মোহাম্মদ হাসান বলেন, গত সরকারের সময় বরাদ্দ হওয়া মোট ৮শ ৪৪টি ডিপ টিউবওয়েলের মধ্যে এ পর্যন্ত ৬টি ইউনিয়নে ১৯৪ টি টিউবওয়েল বসানো সম্ভব হয়েছে। বাকী ডিপটিউবওয়েল বসানোর জন্য বর্তমান এমপি মহোদয়ের দিকনির্দেশান নিয়েই পর্যায়ক্রমে বাকী ইউনিয়নগুলো টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য অনুমতি চেয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান এড. জাহিদুল ইসলাম রোমান বলেন, গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বরাদ্দ হওয়া ৮৪৪টি ডিপ টিউবওয়েলগুলো জনস্বার্থে জরুরী ভিত্তিতে বসিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা হউক একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি এটাই আশা করি ।

স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, আর্সেনিকমুক্ত ডিপ টিউবওয়েলগুলো স্থাপনের জন্য অচিরেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ সংক্রান্ত আগের প্রতিবেদন- ফরিদগঞ্জে আর্সেনিকমুক্ত সাড়ে ৮শ’ নলকূপ নিয়ে ‘টানাহেঁচড়া ও ঘুষ বাণিজ্য’

প্রতিবেদক: মো.শিমুল হাছান, ০১ রোববার ২০১৯