Home / উপজেলা সংবাদ / চাঁদপুর সদর / চাঁদপুর সদর সমবায় অফিসারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
Durniti ghush
প্রতীকী ছবি

চাঁদপুর সদর সমবায় অফিসারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

চাঁদপুরে উপজেলা সমবায় অফিসার মুহাম্মদ ফারুক আলমের বিরুদ্ধে সরকারের দেয়া গরিব-দুঃখীদের জন্য বরাদ্দের কয়েক লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে নিরলসভাবে কাজ করলেও সরকারের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে সরকারের এমন উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

খবর নিয়ে জানা যায়, সরকারের অর্থায়নে অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “উন্নত জাতের গাভী পালনের মাধ্যমে সুবিধা বঞ্চিত মহিলাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন”

শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সদর রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে বলাশিয়া নারী উন্নয়ন সমবায় সমিতি ও গোয়াল নগর নারী উন্নয়ন সমবায় সমিতির ৫০ জন সদস্যকে উন্নত জাতের বকনা বাছুর ক্রয়ের জন্য সোনালী ব্যাংক চাঁদপুর শাখায় হিসাব খুলে প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী সুবিধাভোগীদের চূড়ান্ত তালিকা জেলা সমবায় অফিস বিভাগীয় দপ্তর চট্টগ্রামে প্রেরণ করা হয়।

প্রকল্প পরিচালক দপ্তর স্মারক নং ৬/১৭(মহিলা) /৮৬ (৫০), ১৮.২.১৮ মূলে জন প্রতি ১ লাখ টাকা করে সুবিধাভোগীদের নামে ২৬ চেকের মধ্যে ১২টি চেক ও পরবর্তীতে প্রকল্প পরিচালকের ৫.৭.১৮ মূলে ২০ হাজার টাকা করে ২৬টি চেক ও ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে ২৪ টি চেকের মধ্যে ১৯টি চেকে মহিলাদের নাম গড়মিল রয়েছে।

সম্ভবত,পূর্বে প্রেরিত সুবিধাভোগীদের চূড়ান্ত তালিকায় এ ১৯ জনের নাম ছিল না।

এ বিষয়ে যুগ্ম-নিবন্ধন বিভাগীয় সমবায় দপ্তর চট্টগ্রাম কর্তৃক উক্ত গড়মিলের কারণ জানতে চাইলে তিনি সুবিধাভোগী নির্বাচনের একটি সংশোধিত তালিকা প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর প্রেরণের কথা বলেন।

গড়মিলকৃত ১৯ টি চেক ৮.৮.১৮ তারিখে বিতরণ না করে স্থগিত রাখার জন্য জেলা সমবায় অফিসার চাঁদপুর ও বিভাগীয় সমবায় দপ্তর চট্টগ্রাম এর স্বাক্ষর জাল করে ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ভূয়া সংশোধিত তালিকা প্রকল্প দপ্তরে প্রেরণ করেন ওই অফিসার।

ফারুক আহমেদ উক্ত অপরাধ ঢাকতে উল্লেখিত ২ নারী উন্নয়ন সমিতির ১৯ জন সদস্য যারা সমিতির নিবন্ধনকালীন সদস্য তাদেরকে সমিতির সদস্যপদ থেকে প্রত্যাহার করেছে মর্মে তাদের পদত্যাগপত্র ও সুবিধাভোগী নির্বাচনের সংশোধিত তালিকা দাখিল করেন। উক্ত পদত্যাগপত্রগুলো প্রকল্প পরিচালক সমিতির বরাবরে লেখা।

সমিতির কোনো সদস্য পদত্যাগ করলে সমিতির উপ-আইনের বিধান মোতোবেক কেবলমাত্র সমিতির সভাপতি বরাবরে আবেদন করার বিধান রয়েছে।

উক্ত আবেদনপত্র সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় অনুমোদনের পর সদস্য পদত্যাগকারী ব্যক্তিগণ সমিতিতে রক্ষিত সঞ্চালনা ফেরত নিয়ে যাবে। কিন্তু ২টি সমিতির পূর্বে প্রেরিত ৫০ জনের তালিকা হতে ১৮ জনের সদস্যের নাম বাদ দিয়ে একটি নতুন তালিকা জেলা সমবায় অফিসার চাঁদপুরের স্বাক্ষর জাল করে তিনি তালিকা প্রকল্প দপ্তরে প্রেরণ করেছেন।

প্রসঙ্গত,সংশোধিত তালিকা জেলা সমবায় দপ্তর চাঁদপুরে প্রেরণের কোনো প্রমাণ অত্র দপ্তরের নথি ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে পাওয়া যায় নাই। তবে ১৪.৮.১৮ তারিখে ২ টি সমিতির সংশোধিত তালিকায় তিনি স্বাক্ষর করে কার্যালয়ে প্রেরণ করেন। প্রকল্প দপ্তর হতে ইতিমধ্যে প্রাপ্ত ১৮ টি চেকের মাধ্যমে প্রাপ্ত সমপরিমাণ টাকা তিনি আত্মসাতের পাঁয়তারা করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সমবায়ী বলেন,উপজেলা সমবায় অফিসার ফারুক আলম সমিতির নিবন্ধন দিয়ে, অডিট ও পরিদর্শন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে চাঁদপুর সদরে ৩ বছরের অধিক সময় বহাল রয়েছে।

এ বিষয়ে তৎসময়ের জেলা ভারপ্রাপ্ত সমবায় অফিসার রফিকুল ইসলাম জানান, চাঁদপুর সদর ও মতলব উত্তরে “উন্নত জাতের” গাভী পালনের মাধ্যমে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মহিলাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন নামের একটি প্রকল্প আসে। তার মধ্যে চাঁদপুর সদরের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের দু’টি মহিলা সমিতি গঠন করা হয়। সমিতিগুলো গোয়ালনগর নারী উন্নয়ন সমবায় সমিতি ও বলাশিয়া নারী উন্নয়ন সমবায় সমিতি।

উক্ত গোয়ালনগর হতে ২৫ জন বলাশিয়া সমিতি ২৫ জন সুবিধাভোগীর নাম নির্বাচন করে উপজেলা, জেলা ও যুগ্ম-নিবন্ধকের স্বাক্ষরে প্রকল্প দপ্তরে তালিকা প্রেরণ করা হয়। কিন্তু ৫০ জনের নামে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে জনপ্রতি চেক আসার পরে দেখা যায় ১৯ টি চেকের নাম প্রেরিত তালিকার বাহিরে।

রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায় উপজেলা সমবায় অফিসার মুহাম্মদ ফারুক আলম জেলা সমবায় অফিসার ও যুগ্ম নিবন্ধক চট্ট্গ্রামের স্বাক্ষর জাল করে সুবিধাভোগীদের একটি সংশোধিত তালিকা প্রকল্প দপ্তরে প্রেরণ করেন।

যা জেলা সমবায় অফিসার (তৎকালীন) ও যুগ্ম নিবন্ধক চট্টগ্রাম অবগত ছিলেন না। স্বাক্ষর জাল করার কারণে উপজেলা সমবায় অফিসার মুহাম্মদ ফারুক আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে। বিষয়টি বর্তমানে তদন্তে রয়েছে।

বর্তমান জেলা সমবায় অফিসার মোমেন হোসেন ভূইয়া বলেন, ‘উপজেলা সমবায় অফিসার ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত গত সেপ্টেম্বরে উপ- নিবন্ধক চট্টগ্রাম মোঃ গিয়াসউদ্দীন তদন্ত করে গেছেন। কি বিষয়ে তদন্ত করে গেছেন তা আমি জানি না। তবে সদর উপজেলা সমবায় অফিসারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে’

চাঁদপুর সদর উপজেলা সমবায় অফিসার মুহাম্মদ ফারুক আলম তার অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ‘আমি কোন ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি করিনি। প্রতিটি চেক তালিকাভূক্ত নামের ব্যক্তিদেরকে প্রদান করা হয়েছে। চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এমনকি নামের গড়মিল থাকায় প্রকল্প দপ্তরে ৫টি চেক ফেরত পাঠানো হয়েছে।’

প্রতিবেদক:কবির হোসেন মিজি
অক্টোবর ০৭,২০১৮

Leave a Reply