Home / জাতীয় / অদম্য সাহসিকতায় এগিয়ে যাওয়া নারী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ফাইল ছবি।

অদম্য সাহসিকতায় এগিয়ে যাওয়া নারী শেখ হাসিনা

৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস। নারীদের অবদান আর তাদের কাজের স্বীকৃতি দিতেই আলাদা করে এই দিবসটি পালন করা হয়। একজন নারী কারো মা, বোন, স্ত্রী, প্রেমিকা অথবা সহকর্মী। যে রূপেই থাকেন না কেন নারী একজন মমতাময়ী হিসেবেই তার চারপাশ আগলে রাখেন।

আর এই বিশেষ দিনটি আমাদের চারপাশের সেই সব নারীদের জন্য যারা নিজেদের সবটুকু দিয়ে সবাইকে আগলে রেখেছেন। অনেক সময় তারা সবার কথা ভাবতে গিয়ে নিজেদের দিকেও তাকানোর এতটুকু সময় পান না।

এমন বিশেষ নারীদের কথা বললে চট করেই একজন মমতাময়ীর কথা মাথায় চলে আসে। যিনি তার রাজনৈতিক জীবনের পুরোটাই দেশের কথা ভেবে কাটিয়ে দিয়েছেন, দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এই মমতাময়ী নেত্রী আর কেউ নন, তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ফোর্বস ম্যাগাজিনে বিশ্বের ১শ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় রয়েছেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দ্য ফরেন পলিসির বিশ্বের শীর্ষ ১০০ চিন্তাবিদের তালিকায়ও স্থান পেয়েছেন তিনি।

চলতি বছর বিশ্বের প্রভাবশালী ১শ নারীর তালিকায় ২৯তম অবস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালে তার অবস্থান ছিল ২৬তম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে ফোর্বসের ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ছিলেন ৩০তম। ২০১৬ সালের করা তালিকাতে ৩৬তম অবস্থানে ছিলেন তিনি। তাছাড়া ২০১৪ সালে এশিয়ার প্রভাবশালী শীর্ষ ১০০ ব্যক্তির তালিকায় ২২তম অবস্থানে ছিলেন বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশের ইতিহাসে দীর্ঘকালীন সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি চতুর্থবারের মতো জয়ী হয়ে টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত নির্বাচনে তার দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংসদের ৩শ আসনের মধ্যে ২৮৮টিতেই জয় লাভ করে।

১৯৮১ সাল থেকে টানা প্রায় ৩৮ বছর ধরে বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন প্রথমবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। এরপর থেকেই শক্ত হাতে দলকে নিয়ন্ত্রণ করছেন শেখ হাসিনা। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষার উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যসেবার প্রতি জোর দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। অদম্য সাহসিকতায় এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

অপরদিকে প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দ্য ফরেন পলিসি গত দশ বছরের সামগ্রিক ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে মোট দশটি ক্যাটাগরিতে ১০ জন করে সেরা ব্যক্তিত্ব নিয়ে যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে ‘প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা’ ক্যাটাগরিতে ১০ জনের মধ্যে নবম স্থানে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ফরেন পলিসির তালিকায় রোহিঙ্গা ইস্যু মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। সেখানে বলা হয়, লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের নিয়ে মারাত্মক নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়লেও বেশ ভালোভাবে তা সামাল দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার। মিয়ানমার থেকে আনুমানিক ৭ লাখ রোহিঙ্গা দেশটিতে আশ্রয় নিয়েছে। শেখ হাসিনা তাদেরকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং তাদের বাংলাদেশে থাকার অনুমতি দিয়েছেন।

তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী। তার রাজনৈতিক কর্মজীবন প্রায় চার দশকেরও বেশি। তিনি ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ এবং ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত বিরোধী দলের নেতা এবং ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৮ সালে জনগণের বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসেন।

২০১৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনে তিনি তৃতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রী হন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তিনি বিশ্ব নারী নেত্রী পরিষদ-এর একজন সদস্য, যা বর্তমান ও প্রাক্তন নারী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীদের একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক।

সম্প্রতি নারী দিবসকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা (ভোয়া)। পোস্টে তারা আপন ক্ষেত্রে প্রভাবশালী বিশ্বের সাত নারী রাজনীতিকের নাম উল্লেখ করেছে। এই তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গত বছরের এপ্রিলে বিশ্বের সেরা পাঁচ নীতিমান নেতার একজন হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম প্রকাশ করে নাইজেরিয়ার প্রভাবশালী দৈনিক ডেইলি লিডারশিপ। এছাড়া গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিশ্বের শীর্ষ নারী নেতৃত্বের তালিকায় স্থান পান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারপ্রধান হিসেবে তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, যুক্তরাজ্যের মার্গারেট থ্যাচার ও শ্রীলঙ্কার চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন।

ইউনাইটেড নিউজ অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৫ বছরের বেশি ক্ষমতায় ছিলেন। মার্গারেট থ্যাচার যুক্তরাজ্য শাসন করেছেন ১১ বছর ২০৮ দিন। আর চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় ছিলেন ১১ বছর ৭ দিন।

অপরদিকে, শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৫ বছর পূর্ণ করেছেন এবং এখন তিনি তার চতুর্থ মেয়াদের সময় পার করছেন।

১৯৭৫ সালের আগস্ট ১৫ আগস্ট ভোরে নৃশংসভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে ঘাতকরা। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের ১৮ জনকে হত্যা করা হয়। সে সময় দেশের বাইরে অবস্থান করায় এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড থেকে প্রাণে বেঁচে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা। এতবড় শোক সহ্য করেও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। শক্ত হাতে দেশের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

ঢাকা ব্যুরো চীফ,৮ মার্চ ২০২০