Home / চাঁদপুর / শতভাগ নরমাল ডেলিভারিতে চাঁদপুর মাতৃমঙ্গল : এক বছরে সহস্রাধিক মায়ের চিকিৎসা
mother-and-child-welfare-center
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন ডা. লতিফা নাসরিন। ছবি : কবির হোসেন মিজি

শতভাগ নরমাল ডেলিভারিতে চাঁদপুর মাতৃমঙ্গল : এক বছরে সহস্রাধিক মায়ের চিকিৎসা

গত এক বছরে সিজার বিহিন ১ হাজার প্রসূতী মায়ের নরমাল ডেলিভারি করালেন চাঁদপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। এর মধ্যে গতমাসে ৮০ টি নরমাল ডেলিভারি করিয়ে প্রায় শতভাগ সফল হয়েছেন মাতৃমঙ্গল নামে পরিচিত এ সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রটি।

এটি চাঁদপুর প্রেসক্লাবে রোডে (সাবেক জেলা কারাগারের বিপরীত) দ্বিতল বিশিষ্ট ভবনে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানটি গ্রামীণ নারী সমাজের মাজে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন।

যেখানে বর্তমান যুগে গর্ভধারিণী মায়েদের প্রসবের দিনক্ষণ আগেই নির্ধারিত হয়ে যায় এবং বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হলে বেশির ভাগ রোগীকেই সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো হয়। ওইসব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বাণিজ্যিক কৌশল হিসেবে নানা প্ররোচনায় অনেকক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই সিজার করাতে বাধ্য হন মায়েরা।

যার বিস্তর অভিযোগ শুধু জেলা নয় দেশব্যাপি রয়েছে। গেলো বছর এক জরিপে বলা হয়েছে ৮০ ভাগ সিজার হয় চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বাণিজ্যিক চিন্তার কারণে

কিন্তু বর্তমান সিজারীয়ানের যুগে ব্যাতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন চাঁদপুর (মাতৃমঙ্গল) মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রের চিকিৎসকরা। তাঁরা প্রায় শতভাগ রোগীকে গর্ভবতী মাকে নরমাল ডেলিভারি করিয়ে থাকেন পাশাপাশি রোগী ও তার স্বজনদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উৎসাহ দিয়ে থাকার তথ্য সরেজমিনে পাওয়া গেছে।

এ খবরটি গ্রামগঞ্জে প্রতিনিয়ত ছড়াচ্ছে এবং সরকারি এ প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র চাঁদপুর জেলা নয় পাশ্ববর্তী জেলার গর্ভবর্তী নারীরা ও চিকিৎসা সেবা নিতে এখানে আসেন।

mother-and-child-welfare-center..

চাঁদপুর প্রেসক্লাবে রোডে (সাবেক জেলা কারাগারের বিপরীত) দ্বিতল বিশিষ্ট ভবনে অবস্থিত মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র

প্রতিষ্ঠানটির রেজিস্টারে থাকা তথ্যানুযায়ী প্রতি মাসে প্রায় ৮০/৯০ জন গর্ভবতী নারী এতে ভর্তি হন। এদের মধ্যে যাদের কে সিজার না করালেই নয়, শুধু তাদেরকেই বাধ্য হয়েই সিজার করাতে হয়।

হিসেব করে দেখা গেছে প্রতি মাসে কখনো ৫০ জন, কখনো ৬০, কখনো বা ৭০/৮০ জন রোগীর নরমাল ডেলিভারি হয়ে থাকে। ভর্তিকৃত রোগীর মধ্যে ৫ থেকে ৭, অথবা ৮ থেকে ১০/১২ জন রোগীর সিজার হয়ে থাকে।

গত অক্টোবর মাসে ৮০ জন মা,কে নরমাল ডেলিভারি করানো হয়। একই ভাবে গত এক বছরে পর্যায়ক্রমে সর্বমোট ৯, শ, ৮০ জন রোগীর নরমাল ডেলিভারি হয়েছে বলে জানা গেছে।

চাঁদপুর মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রের রেজিস্ট্রি থেকে আরো জানা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে মোট নরমাল ডেলিভারি হয় ৫১ জন। তারপর থেকে প্রতিমাসে পর্যায়ক্রমে নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে যেসব মাস গুলোতে চিকিৎসকরা প্রশিক্ষনে ছিলেন, শুধুমাত্র ওইসব মাস গুলোতে ডেলিভারির সংখ্যা কমছিলো।

এরপর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মোট নরমালি ভেলিভারি হয় ৩৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪০ জন, মার্চ মাসে ৬৫ জন, এপ্রিল মাসে ৬১ জন, মে মাসে ৬৪ জন, জুন মাসে ৫৯ জন, জুলাই মাসে ৬২ জন, আগস্টে ৭৩ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ৮৯ জন, অক্টোবরে ৮০ জন এবং চলতি মাসের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৩০ জন নরমাল ডেলিভারি হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিষয়টি চাঁদপুর টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ( ক্লিনিক) ডাক্তার লতিফা নাসরিন।

লতিফা চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘ডেলিভারি ছাড়াও প্রতিমাসে প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসাসেবার জন্য প্রায় ৮,শ ১ হাজার রোগী এখান থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন। গত মাসে যেখানে ৮০ গর্ভবতী নরমাল ডেলিভারি করানো হয়েছে, সেখানে সিজারে ডেলিভারি হয়েছে মাত্র ৫ জন। একই ভাবে প্রতি মাসে রোগীর সংখ্যা অনুযায়ী নরমাল ডেলিভারির পাশা পাশি যাদেরকে সিজারের প্রয়োজন হয় তাদেরকে সিজার করানো হয়ে থাকে।

গুরুতর রোগীদের বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেয়া হয় এমন প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘রোগীর অবস্থা অনুযায়ী যেটি তারা না করতে পারেন সেসব রোগীকে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতাল কিংবা কুমিল্লা অথবা ঢাকায় প্রেরণ করা হয়।’

তবে চিকিৎসক লতিফা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে এসব রোগীদের এমন সু চিকিৎসার কৃতিত্ব পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক ডাঃ মোঃ ইলিয়াস মিয়াকেই দিয়ে বলেন, ‘ডাক্তার ইলিয়াস মিয়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন থেকে সার্বিকভাবে পরিচালনা করে আসছেন। তার দক্ষতা আর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কারণে প্রসূতি মায়েদেরকে সু চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে ‘

মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে যারা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় দায়িত্ব পালন করছেন, তারা হলেন, মেডিকেল অফিসার ডাক্তার লতিফা নাসরিন, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ৫ জন। এরা হলেন, কানন রাণী বর্দ্ধন, বিলকিস বানু, নাছিমা আক্তার, শংকরী রাণী, রহিমা বেগম। এছাড়া ২ জন সহকারী নার্স ও ৩ জন আয়া নিয়মিত কাজ করছেন।

প্রতিবেদক : কবির হোসেন মিজি, ১২ নভেম্বর ২০১৯