চাঁদপুর

নির্যাতনের তথ্য বাইরে প্রকাশের ভয়ে খুন হন শিক্ষিকা জয়ন্তী : চাঁদপুর পিবিআই

শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তীর চাঞ্চল্যকর হ*ত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে চাঁদপুর পিবিআই। রোববার (১৮ আগস্ট) পিবআই কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় এএসপি ইকবাল হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ে হত্যার বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পিবিআই জানায়, চাঁদপুর শহরের ষোলঘরস্থ পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্টাফ কোয়ার্টারে একটি ঝরাজীর্ণ ভবনের ৪ তলায় স্বপরিবারে বসবাস করতেন জয়ন্তী চক্রবর্তী। আশেপাশে কোনো পরিবার বাস করতো না।

চাঞ্চল্যকর হ*ত্যা মামলা হিসেবে তদন্ত কার্যক্রম পিবিআইয়ের হাতে আসে। ৪ আগস্ট মামলার নথি পিবিআই এর তদন্তকারী অফিসারের নিকট হপ্তান্তর করা হলে এসএসপি চট্টগ্রাম বিভাগ মোঃ ইকবাল এর তদারকি ও পিবিআই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শংকর কুমার দাস এর সার্বক্ষণিক নির্দেশনায় তদন্তকারী অফিসার মোঃ কবির আহমেদ এর নেতৃত্বে পিবিআই চাঁদপুর এর একটি টিম তদন্ত চালায়।

তদন্ত টিমের জিজ্ঞাসাবাদে আসামী জামাল হোসেন ঘটনার সম্পৃক্ততা স্বীকার করে ধর্ষণ ও হত্যার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে। জামাল তার পিতার চাকুরীর সুবাদে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোয়াটারে দীর্ঘদিন বসবাস করেছে। ঘটনার দিন দুপুরে জামালের অপর সহযোগী আনিছুর রহমানকে সাথে নিয়ে অপরাধের পরিকল্পনা নেয় এবং কোয়ার্টারে ভেতরে পরিত্যক্ত স্কুল ঘরে দু’জনে ইয়াবা’ সেবন করে। বাইরে এসে কৌশলে ডিশ লাইন তার নিয়ে নাড়াচাড়া করে যাতে জয়ন্তীর বাসায় ডিশ দেখতে অসুবিধা হয়।

তাদের পরিকল্পনার ফাঁদে পড়ে যায় জয়ন্তী। বাইরে এসে ডিশ লাইনের সমস্যা হচ্ছে বলে তাদেরকে জানাতেই তারা বাসায় গিয়ে ঠিক করার প্রয়োজনীয়তা জানায় এবং বাসায় প্রবেশ করে। বাসায় ঢুকে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে আনিছ জয়ন্তীর সাথে ধস্তধস্তি শুরু করলে জামালও সাথে যোগ দেয়। একপর্যায়ে জয়ন্তীর মুখ চেপে ধরে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর ভিকটিম ঘটনাটি সবার কাছে বলে দেয়ার কথা বললে আসামীরা ক্ষীপ্ত হয়ে জয়ন্তীকে পুনরায় ঝাপটে ধরে ঘরের র‌্যাকে থাকা একটা ছোরা দিয়ে জামাল ভিকটিমকে গলায় জবাই করে হত্যা করে।

পরে আনিছ বাথরুম থেকে মগে করে পানি এনে রক্তমাখা ছোরাটি লাশের উপর ধুয়ে ফেলে এবং ধর্ষণের আলামত বিনষ্টের উদ্দেশ্যে লাশের গোপনাঙ্গে পানি ঢেলে দেয়। পরে ছোরাটি পূর্বের স্থানে রেখে দিয়ে হত্যাটিকে ক্লু-বিহীন করার চেষ্টা করে।

পিবি আই আরো জানান, আসামী জামাল হোসেনের দেখানো মতে ওই বাসা থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছোরাটি উদ্ধার করে জব্দ করা হয়েছে। আসামী জামাল হোসেন আদালতে তার দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

বিষয়টি এখনো তদন্ত চলছে, আরো কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানায় পিবিআই।

এসময় চাঁদপুর পিবিআই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শংকর কুমার দাস, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শহীদ পাটোয়ারী, সাধারণ সম্পাদক লক্ষণ চন্দ্র সূত্রধরসহ স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দসহ পিবিআইয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ২১ জুলাই পরিবারের অন্য সদস্যদের অনুপস্থিতিতে শহরের ষোলগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিক জয়ন্ত্রী চক্রবর্তী খুন হন। নিহতের স্বামী পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মচারী আলোক গোস্বামী পরদিন ঢাকা থেকে চাঁদপুরে এসে অজ্ঞাতনামা আসামী করে সদর থানায় (মামলা নং-৪১ তাং-২২/০৭/২০১৯ ধারা ৩০২/৩৪) মামলা দায়ের করে।

মামলা অনুযায়ী সদর মডেল থানার এসআই অনুপ চক্রবর্তী ২৩ জুলাই সন্দেভাজন হিসেবে জামাল হোসেন (২৮) ও আনিছুর রহমান(৩২) কে আটক করে আদালতে প্রেরণ করে।

এ বিষয়ে অনুপ চক্রবর্তী চাঁদপুর টাইমসকে জানায়, ‘মামলা হওয়ার পর স্থানীয়দের মাধ্যমে আমরা খোঁজ খবর নেই। আটককৃত দু’জন ওই এলাকার মাদকাসক্ত হিসেবে তথ্য আমাদের কাছে আগ থেকেই ছিলো। সে হিসেবে ওই দিনে ওখানকার মোবাইল কললিস্ট ট্র্যাকিং করে ১১ টা নাগাদ বাইরের লোক হিসেবে জামাল ও আনিস কোয়ার্টার এলাকা প্রবেশ করেছে এমন তথ্য মিলে। সে সূত্রে আমি তাদেরকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে প্রেরণ করি।’

এ সংক্রান্ত আগের প্রতিবেদনটি দেখুন- চাঁদপুর শহরে সরকারি কোয়ার্টারে স্কুল শিক্ষিকাকে জবাই করে হত্যা

প্রতিবেদক: দেলোয়ার হোসাইন, ১৮ আগস্ট ২০১৯

Share