আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক :
ক্লিনিকের সামনে রাস্তার উপর সন্তান জন্ম দিচ্ছেন অসহায় এক মা। সে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য।
মেক্সিকোর দক্ষিণে ওয়াক্সাকা প্রদেশে ঘটনাটি ঘটে। শুধু মেক্সিকোতেই নয় সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ঘটনাটি। ইরমা লোপেজ (২৯) নামের ওই প্রসূতি মাকে ভর্তি না করে ফেরত পাঠানোর জন্য ক্লিনিকের পরিচালক ড. আদ্রিয়ান ক্রুজকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
রাস্তার উপর শিশু জন্ম দেয়ার পর যন্ত্রণায় কাতর মার ছবি উঠে আসে এক পথচারীর ক্যামেরায়। ওয়াক্সাকার প্রাদেশিক সরকার বুধবার ক্লিনিকের পরিচালককে বরখাস্ত করার ঘোষণা দেয়। সরকারি আদেশে ওই ঘটনায় রাষ্ট্রীয় তদন্ত চলছে।
তিন সন্তানের জননী ইরমা জানান, স্বামীর সঙ্গে তিনি সান ফেলিপে জালাপা দিয়াজ গ্রামের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গেলে ক্লিনিকের নার্স তাকে বলে সে এখনও ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং এখনও প্রসবের সময় আসেনি। প্রকৃতপক্ষে ইরমা পূর্ণকালীন গর্ভবতী ছিলেন।
ইরমা ও তার স্বামী উভয়েই মাজাটেক নামক আদিবাসী গোত্রের এবং তারা মেক্সিকোয় প্রচলিত স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলতে পারেন না। কাজেই নার্সের কথার তেমন কিছু বুঝতে পারেননি তারা। শুধু এতটুকু বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাদেরকে ‘না’ বলা হয়েছে।
নিরুপায় হয়ে তারা ক্লিনিক থেকে চলে যান। ঘটনাটি পরবর্তীতে এত বড় আকার ধারণ করবে হয়তো বুঝতে পারেননি ক্লিনিকের কর্তব্যরত নার্সরা। এখন তারা ঘটনার দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন ভাষাগত প্রতিবন্ধকতার উপর। এছাড়াও তারা দাবি করছেন মহিলাকে সেবা দেয়ার মতো লোকবল তখন ছিল না। কেননা, তখন নাকি ক্লিনিকের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল।
এর দেড়ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ইরমার প্রসব বেদনা শুরু হয়। ক্লিনিকের বাইরে একখণ্ড ঘাসের উপর বিল্ডিংয়ের দেয়াল ধরে যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন তিনি। উন্মুক্ত স্থানে একাকী এভাবে সন্তান জন্ম দিতে চাননি ইরমা। কোন মা-ই এমনটি চাইবেন না- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার কিছুই করার ছিল না। একদিকে তার স্বামী ক্লিনিকের নার্সদেরকে সাহায্যের জন্য অনুরোধ করেছিলেন অন্যদিকে রাস্তার উপর একাকী দুঃসহ যন্ত্রণা সয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হন ইরমা লোপেজ।
ইরমার আর্তচিৎকারে অনেকে জড়ো হয় ঘটনাস্থলে। এরই মধ্যে একজন ইলয় প্যাচেকো লোপেজ, যিনি ছবি তুলে একজন সংবাদকর্মীর কাছে দিয়ে দেন।
অনেকগুলো জাতীয় পত্রপত্রিকায় ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ট্যাবলয়েড পত্রিকা লা রেজন ডে মেক্সিকো তাদের পুরো কভার পেজে ছবিটি প্রকাশ করে। ওয়াক্সাকা মেক্সিকোর সব থেকে দরিদ্র প্রদেশ। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাসও এ প্রদেশে সব থেকে বেশি। প্রসূতি মায়েদের মৃত্যুর ঘটনাও এখানে অনেক বেশি শোনা যায়। সৃষ্টিকর্তার অসীম কৃপায় ইরমার সঙ্গে এমনটি ঘটেনি।
সে ও তার সন্তান দুজনই সুস্থ আছেন। ইরমা তার নবজাত পুত্র সন্তানের নাম রেখেছেন ‘সালভেদর’ যার অর্থ রক্ষাকারী। ইরমার ভাষায়, সে সত্যিই নিজেকে নিজে রক্ষা করে পৃথিবীতে এসেছে।