Home / উপজেলা সংবাদ / শাহরাস্তি / পরিত্যক্ত কাঠ, শেকড়-বাকড় দিয়ে সমীরণের ‘মন বাগান’
কাঠ

পরিত্যক্ত কাঠ, শেকড়-বাকড় দিয়ে সমীরণের ‘মন বাগান’

কুড়িয়ে আনা কাঠের টুকরো, ছোট-বড় মৃত কিংবা কেটে ফেলা গাছের শিকড়-বাকড়, পরিত্যক্ত সামগ্রী নিয়েই নিত্য নিভৃতচারী শিল্পী সমীরণ সাজিয়েছেন এক স্বপ্নের বাগান। চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় ঘুঘুশাল গ্রামে গেলেই চোখে পড়বে দৃষ্টিনন্দন সব শিল্পকর্ম। সাধারণের চোখে যা অকেজো পরিত্যক্ত গাছের শেকড়, গুঁড়ি বা কাঠ। সেগুলোই সমীরণের হাতের ছোঁয়ায় হয়ে ওঠে এক একটি শিল্পকর্ম। আর যার নাম দিয়েছেন ‘মন বাগান’।

চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার ঘুঘুশাল গ্রামের বাসিন্দা সমীরণ দত্ত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে নিজ এলাকায় ৫৭ শতক জমি ভাড়া নিয়ে শুরু করেন তার শিল্পকর্ম। প্রায় ২৪ বছর ধরে এই শিল্পকর্মের সাথে জড়িত থাকা সত্ত্বে ও আনুষ্ঠানিকতায় কখন উপস্থাপন করতে চাননি। তার শিল্পকর্মগুলোর সবই কুড়িয়ে আনা কাঠ আর শিকড় দিয়ে তৈরি। টেবিল-চেয়ার-সোফা, ডাইনিং টেবিল, বাচ্ছদের নানা রকম খেলনা, কাঠের তৈরি হাতি, ঘোড়া, মাছ, পাখি ও অন্যান্য জীবজন্তু অবয়ব আকৃতি দিয়ে তৈরি করেছন নান্দনিক এসব আসবাবপত্র।

কাঠ

সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শিশু থেকে কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা সেখানে আনাগোনা দেখা যায়। শখের বসে কেউ কেউ নিজের পছন্দের আসবাবপত্রটি কিনে নিয়ে যান। সবুজের মাঝে শিকড়ের আবিস্কার-দুয়ে মিলে গ্রামীণ জনপদের এক শৈল্পিকতা মন কড়ে নেয় সবার।

মণ বাগানে ঘুরতে আসা অভিজিত ও সায়মা বলেন, কাছের শেকর-বাকড় দিয়ে যে এত সুন্দর ভাস্কর্য তৈরি করা যায়, তা এখানে না আসলে বুজতে পারতাম না। সমীরণ তার শিল্পকর্ম দিয়ে সাজিয়েছেন মন বাগান। এখানে যে কেউ আসলে মুগ্ধ হবে। তার এই শিল্পকর্ম আন্তজার্তিক মানের। আশা করি একদিন দেশে ছেড়ে বিদেশেও তার শিল্পকর্ম পরিচিতি পাবে।

এ বিষয়ে ভাস্কর শিল্পী সমীরণ দত্ত বলেন, ফেলে দেয়া কাঠ, শেকড়-বাকড় দিয়ে মূলত সাজানো মণ বাগান। শিরীষ কাগজ দিয়ে ঘষে তৈরি করা হয় অবয়ব শিল্পকর্ম। গত ২৪ বছরে প্রায় ৩ হাজারেরও বেশি ভাস্কর্য এবং ব্যবহারের শিল্পকর্ম তৈরি করা হয়েছে। এখন শিল্পকর্ম করছি, সামনে আরো করবো। মন বাগানে বাচ্চাদের জন্য আলাদা খেলার যায়গা রয়েছে। বর্তমানে ‘মন বাগানে’ প্রবেশ করতে কোন টাকা লাগে না। তবে সহসাই সাধারণের জন্য প্রবেশ ফি করা হবে।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, আমি নিজেও সমীরণ দত্তের মন বাগানে ঘুরে এসেসি। কাঠ, শেকড়-বাকড় দিয়ে ব্যতিক্রমী চিন্তা ভাবনা ফুঁটিয়ে তুলছেন তিনি। যারা শিল্প-সাহিত্য নিয়ে কাজ করেন, সরকারি সহায়তার পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তারাও যেনো এগিয়ে আসে। জেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন মেলা অনুষ্ঠানে সমীরণ দত্তের এই শিল্পকর্ম তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি।

প্রতিবেদক:শরীফুল ইসলাম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২