কুমিল্লার মুরাদনগরে চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত জোড়া খুনের পলাতক আসামীকে ৭ বছর পর ফটিকছড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১। ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে মাজেদা বেগম নামে ওই আসামীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর একটি আভিযানিক দল।
গ্রেপ্তারকৃত আসামী মাজেদা বেগম (৪৫) পারিবারিক বিরোধের জের ধরে ২০১৪ সালে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার লাজৈর গ্রামের দুই শিশুকে জবাই ও শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করে। হত্যার পর থেকে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে ফটিকছড়ির দুর্গম একটি পাহাড়ি এলাকায় পলাতক ছিলো।
কুমিল্লা র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর উপ-পরিচালক, কোম্পানী অধিনায়ক, মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, ২০১৪ সালের ২১ এপ্রিল কুমিল্লার মুরাদনগর থানার লাজৈর গ্রামের মোঃ বিল্লাল হোসেনের ছেলে আরাফাত (৬) ও শাহ আলমের ছেলে জসিম (৭) নামে দুই অবুঝ শিশুকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। হত্যা শেষে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় জনতা হত্যাকারী ইয়াসমিনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। হত্যাকারী নিহত আরাফাতের আপন চাচী এবং নিহত জসিমের জেঠাতো ভাবী। হত্যাকারী ইয়াসমিন স্বীকার করে সে তার চাচী শাশুরী মাজেদা বেগম (৪৫), স্বামী সেলিমের উপস্থিত সহযোগিতায় আরাফাতকে ভুট্টাক্ষেতে নিয়ে গলা কেটে এবং জসিমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে খালের কচুরি পানার নিচে ফেলে রাখে।
এই হত্যাকান্ডের পর থেকেই মাজেদা বেগম পলাতক ছিল। উক্ত ঘঁনায় ২০১৪ সালের ২১ এপ্রিল মুরাদনগর থানায় ইয়াসমিনকে ১ নম্বর, মাজেদা বেগমকে ২য় ও অজ্ঞাত ২/৩ জনকে আসামী করে নিহত আরাফাতের পিতা বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার পর ৭ বছরের অধিক সময় ধরে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিজের নাম বদলে কখনো গৃহকর্মী, কখনো গার্মেন্টসকর্মী আবার কখনো মহিলা ওঝার ছদ্মবেশে আত্নগোপন করে ছিলেন মাজেদা বেগম। সর্বশেষ তিনি গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকের ছদ্মবেশে গাঢাকা দিয়ে ছিলেন। কিন্তু করোনা মহামারীর প্রভাবে গার্মেন্টস কর্মী ছাটাই হওয়ায় চাকরি হারিয়ে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার পাহাড়বেষ্টিত ইউনিয়ন দক্ষিণ চিকনছড়ার দুর্গম পাহাড়ী গ্রাম বাগমারার রাবার বাগানের পার্শ্বে অবস্থিত ভাইয়ের বাসায় আত্নগোপনে ছিলেন। আত্নগোপনে থাকাঅবস্থায় কতিপয় দালালের মাধ্যমে ভূয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনাও করেন মাজেদা বেগম।
সম্প্রতি র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা ক্যাম্প চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার দীর্ঘদিনধরে পলাতক এ আসামীকে আটকে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। প্রযুক্তির সাহায্যে এবং মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা নজরদারীর সূত্র ধরে অবশেষে র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা মাজেদা বেগমের অবস্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
এরই প্রেক্ষিতে ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর একটি আভিযানিক দল চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার দক্ষিণ চিকনছড়া ইউনিয়নের বাগমারা নামক দুর্গম পাহাড়ি গ্রামের একটি বাড়ী থেকে মাজেদা বেগমকে আটক করতে সক্ষম হয়।
কুমিল্লা র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর উপ-পরিচালক, কোম্পানী অধিনায়ক, মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন আরো জানান, উক্ত বিষয়ে গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যতাকে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন।
প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২