Home / ফিচার / সাংবাদিক আলম পলাশের অসুস্থতা : মাহবুবুর রহমান সুমন
সাংবাদিক আলম পলাশের অসুস্থতা : মাহবুবুর রহমান সুমন

সাংবাদিক আলম পলাশের অসুস্থতা : মাহবুবুর রহমান সুমন

চাঁদপুরের বিশিষ্ট সাংবাদিকদের মধ্যে আলম পলাশ একজন। ২ যুগেরও বেশি সময় তিনি সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত। সদা হাসিমুখ বন্ধুবর পলাশ আমার অত্যন্ত কাছের একজন। সেই পলাশ আজ দুরারোগ্য রোগে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন।

শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় কাজের ফাঁকে ফেসবুক ঘুরতেই দেখলাম ‘জাগো নিউজ’ অনলাইনের একটি প্রতিবেদন- ‘দুরারোগ্য ব্যাধি: আলম পলাশের সাংবাদিকতা কি থেমে যাবে?’ দ্রুত পড়লাম। একটি মানবিক আবেদন। চমৎকারভাবে উপস্থাপন করায় প্রতিবেদনটি হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

চাঁদপুরের বিভিন্ন বয়সী সাংবাদিকদের আপনজন, অনেক অসহায়ের সহযোগিতাকারী আলম পলাশ আজ গুরুতর অসুস্থ। তাই চাঁদপুরের পত্রিকা পাঠকদের উদ্দেশ্যে জাগো নিউজের বিশেষ সংবাদদাতা মনিরুজ্জামান উজ্জ্বলের সংবাদটি হুবহু নিচে পত্রস্থ করলাম

দুরারোগ্য ব্যাধি: আলম পলাশের সাংবাদিকতা কি থেমে যাবে?

চাঁদপুর জেলার অতি পরিচিত মুখ পেশাদার সাংবাদিক আলম পলাশ দুরারোগ্য গুলিয়ান বেরি সিনড্রোম রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। মাত্র কিছুদিন আগে পর্যন্ত তিনি খবরের সন্ধানে চাঁদপুর জেলার আনাচে-কানাচে চষে বেড়িয়েছেন।

যেখানে খবরের সন্ধান পেতেন সেখানেই মোটর সাইকেল হাঁকিয়ে হাজির হতেন। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় দু’টি সংবাদপত্র দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের চাঁদপুর প্রতিনিধি।

কিন্তু বিধাতার ইশারায় সদাব্যস্ত সেই মানুষটির দিনরাত এখন বিছানায় শুয়ে ও হুইল চেয়ারে বসে কাটছে। দু’পায়ে দু’কদমও নিজে হাঁটতে পারছে না। পাঁচ আঙুলে মুখে খাবারও তুলতে পারছেন না। স্ত্রী অথবা অন্যদের সহায়তায় বাথরুমে যেতে হয়।

চিকিৎসকের পরামর্শে তার চিকিৎসা চলছে। দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসায় রাজধানীর খ্যাতনামা চিকিৎসকরা তাকে এ রোগের চিকিৎসার ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন পরামর্শ দিচেছন। একজন চিকিৎসক তাকে ১২ লাখ টাকা দামের একটি ইনজেকশন শরীরে পুশ করতে বলেছেন। অন্য চিকিৎসক ওষুধের পাশাপাশি কমপক্ষে ছয়মাস ফিজিওথেরাপি চালিয়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন। আপাতত: দ্বিতীয় পরামর্শ মতে রাজধানীতে বড় ভাইয়ের বাসায় চিকিৎসা চলছে ।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আলম পলাশ জানান, ২৫ বছর যাবত তিনি সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৯২ সালে সাংবাদিকতা শুরু করেন।
দৈনিক আজকের কাগজ ও ভোরের কাগজ হয়ে প্রথম আলোতে চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন। পাশাপাশি একই গ্রুপের ডেইলি স্টারের পক্ষেও নিয়মিত খবর পাঠাতেন।

৯ এপ্রিল ভোরে ফজরের নামাজের জন্য ঘুম থেকে ওঠার পর তিনি দাঁড়াতে গিয়ে অনুভব করেন হাটুর ওপর ভর করে দাঁড়াতে পারছেন না। সে দিন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে নির্বাচন থাকায় বিষয়টিকে প্রথমে আমলে নেন নি। দাঁড়াতে কষ্ট হলেও তিনি মনের জোড়ে মোটর সাইকেলে চেপে ১৫ কিলোমিটার দূরে নির্বাচনের ভোট গ্রহণ দেখতে যান। মোটর সাইকেল থেকে নামতে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন তার পা সহ সারা শরীরই যেন অবশ হয়ে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে সহকর্মীরা তাকে চাঁদপুরের স্থানীয় চিকিৎসককে দেখালে তিনি কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ও স্যালাইন লিখে দেন।

বাসায় ওষুধ খাওয়া শুরু করেন। একদিন পরই বিছানা থেকে নামতে গিয়ে তিনি পড়ে যান। পরিবারের সদস্যরা আর দেরি না করে তাকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে হাই ডিপেনডেন্সি ওয়ার্ডে তার চিকিৎসা শুরু হয়।

বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা জানান, তিনি জিবিএস ব্যাধিতে আক্রান্ত। ইউনাইটেড হাসপাতালের একজন চিকিৎসক তাকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ১২ লাখ টাকা দামের একটি ইনজেকশন পুশ করার পরামর্শ দেন। সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসা শেষে খ্যাতনামা দু’জন মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ দেখান। তারা ওষুধের পাশাপাশি তাকে তিন বেলা প্রশিক্ষিত ফিজিও থেরাপিস্টের মাধ্যমে থেরাপি দিতে বলেছেন।

চাঁদপুর শহরের মোমিনপাড়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী ও নাজমা আক্তার দম্পতির সাত ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে কেবল আলম পলাশই চাঁদপুরে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন। তিনি বিবাহিত , দু’ মেয়ে ও এক ছেলের জনক। তার পরিবারের সবাই প্রতিষ্ঠিত। তার সেজ ভাই দেশের প্রখ্যাত গীতিকার ও সাংবাদিক কবীর বকুল।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে পারিবারিক ঐহিত্য, পরিচিতি ইত্যাদি হিসাব নিকাশ করে আর্থিক দুর্বলতার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন পলাশ। তিনি না বললেও জানা গেছে, ইউনাইটেডে দু’ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করতে হয়েছে।

প্রতিদিন দামি ওষুধ ও ফিজিওথেরাপিস্টকে নগদ টাকা প্রদানে অনেক টাকাই খরচ হচ্ছে। যদিও ভাইবোনরা তাকে সহায়তা করছেন।

আলম পলাশ সাংবাদিকতায় ফিরে আসার আকাক্সক্ষার পাশাপাশি গ্রামে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতে ফিরে যেতে চান বলে জানান। ১২ লাখ টাকা দামের ইনজেকশন দিতে পারলে হয়তো দ্রুত ভালো হয়ে যেতে পারেন- চিকিৎসকের এমন আশ্বাসে আশায় বুক বাঁধছেন তিনি।

কিন্তু ১২ লাখ টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয় । পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও হয়তো টাকার জোগাড় হবে। মুখ ফুটে না বললেও কেউ প্রতিভাবান পেশাদার এ সাংবাদিকের পাশে দাঁড়ালে আপত্তি করবেন না বলে তা কথায় বুঝিয়ে দেন। সহৃদয় ব্যক্তিদের কেউ কি আছেন, যিনি পেশাদার এ সাংবাদিকের পাশে দাঁড়াবেন ।

অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান পলাশ আমার সাংবাদিকতার প্রেরণা। সাংবাদিকতা পেশায় আসার আগে তাকে দেখেই কেন যেন সাংবাদিক হতে আগ্রহ জাগলো। প্রায়’ই তাকে বলতাম ‘দোস্ত, তোর সাথে সাংবাদিকতা শিখতে চাই’। অবশেষে তার হাত ধরে এবং গুরু কাজী শাহাদাতের প্রশিক্ষণে আজ আমার সাংবাদিকতা। আমি পলাশকে দেখে সৎ সাংবাদিকতার প্রেরণা পাই। মহান আল্লাহপাকের কাছে দোয়া করি যেনো আল্লাহ তাঁকে দ্রুত সুস্থ করে তোলেন ।

সাংবাদিক আলম পলাশের অসুস্থতা : মাহবুবুর রহমান সুমন

About The Author

লেখক – মাহবুবুর রহমান সুমন, প্রধান সম্পাদক, দৈনিক ইলশেপাড়, জেলা প্রতিনিধি, বাংলামেইল

: আপডেট ৮:২০ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০১৬, শনিবার
ডিএইচ