Home / ফিচার / ‘এসো মিলি প্রাণের স্পন্দনে, ঐক্যের বন্ধনে’
প্রাণের

‘এসো মিলি প্রাণের স্পন্দনে, ঐক্যের বন্ধনে’

”এসো মিলি প্রাণের স্পন্দনে, ঐক্যের বন্ধনে” -এই শ্লোগানকে ধারণ করে চাঁদপুর জেলার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের প্রাণের সংগঠন ‘চাঁদপুরে ঢাবিয়ান’ এর জন্ম হয় ২০২৩ সালে। একটা দীর্ঘ সময় কিছু সমমনা, বন্ধুভাবাপন্ন, চিন্তাশীল মানুষের কাছাকাছি থেকে জীবনটাকে উপভোগ করার যে নিদারুণ অভিজ্ঞতা তা হলো ক্যাম্পাস লাইফ, হল লাইফ। আর সেই ক্যাম্পাস যদি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাহলে তো আর কিছুই বলার অপেক্ষা রাখে না।

স্কুল কলেজে পড়াকালীন অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের বুনন শুরু হয়ে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছা দিয়ে। এই ক্যাম্পাসের স্বাদ নিতে চায় হাজারো শিক্ষার্থী। কিন্তু সবাই হয়তো সুযোগ পায় না কিংবা হয়তো সৃষ্টিকর্তা সবাইকে সেই সুযোগ দেন না।

কারণ এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে হাজারো শিক্ষার্থীর রাত জাগা স্বপ্নের আরেক নাম। কত শত শিক্ষার্থীর নির্ঘুম রাতের সাক্ষী হয় প্রিয় এই ক্যাম্পাস। এই ক্যাম্পাস এক ভালোবাসার নাম, যেখানে মিশে আছে হাজারো মানুষের স্বপ্ন, আবেগ, ভালোবাসা আর উৎকন্ঠা। প্রিয় এই ক্যাম্পাসের নৈসর্গিক সৌন্দর্য যেনো আকৃষ্ট করে প্রতিটা স্তরের মানুষকে।

সেই ক্যাম্পাস জীবন শেষে, জীবনের সবচেয়ে রূঢ় বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয় চাকরি জীবনে। পছন্দমতো ক্যারিয়ার পাওয়া না পাওয়ার দোলাচলে সেই হাসিখুশি জীবনটাই যেন হারিয়ে যায়। নয়টা পাঁচটার একঘেয়ে জীবনটা শুরু হয়ে গেলে আর যেন ছুটি নেই।

ক্যাম্পাসকে ফেলে আমরা যারা ঢাকা শহরের বাইরে নিজেদের জেলা শহর চাঁদপুরে জীবন কাটাব বলে ফিরে আসি, একটা অন্যরকম অনুভূতি আমাদের নাড়া দেয়। একদিকে প্রিয় ক্যাম্পাস, দীর্ঘ অভ্যস্ততা, কিছু প্রিয় মুখ পেছনে ফেলে আসা, অন্যদিকে নিজ শহরে আসা, ব্যস্ত জীবন, সংসার আর সন্তানের দায়িত্বে চাইলেও আর তেমনি করে ফেরা হয় না ক্যাম্পাসে।

সেই একটা অনুভুতি, একটা শূন্যতা থেকেই জন্ম আমাদের প্রিয় সংগঠন ” চাঁদপুরে ঢাবিয়ান” এর। কর্মসূত্রে হোক, জন্মভূমি হিসেবে হোক যারা আমরা স্হায়ীভাবে এই শহরে আছি, এই সংগঠন যেন তাদের সেই অপূর্ণতাকে বিলীন করে দিয়েছে। ফিরিয়ে দিয়েছে অতীতের কিছু স্মৃতিকে রোমন্থনের সুযোগ।

যেই ক্যাম্পাসের সাথে জড়িয়ে আছে শত বছরের ইতিহাস,যেই ক্যাম্পাস দেশের প্রতিটি ক্রাইসিসে রেখেছিল অগ্রগন্যা ভূমিকা, তাঁর একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে কিছু দায় আমাদের সবার আছে। শুধু নিয়েই ক্ষান্ত হওয়া নয়, বিলিয়ে দিতে চাই আমরাও কিছু,এই সমাজে,এই দেশে,এই শহরে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয একটি আবেগের নাম, স্বপ্ন বুনিয়াদের আঁতুড়ঘর। এই ঘরে স্বপ্নদেখা মানুষগুলো আজ আকাশ ছুঁয়েছে। প্রতিটি সাবেক শিক্ষার্থী তাদের নিজেদের কর্ম আর নিষ্ঠার গুনে দেশকে করেছেন উজ্জ্বল ‌। সেই উজ্জ্বল মুখগুলো যখন তখন একই ফ্রেমে বন্দী হবার সময় পান না। সে জন্য প্রয়োজন একটা আয়োজনের,যে আয়োজনের যোগসূত্র তৈরি করে চাঁদপুরে ঢাবিয়ান।

যারা আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই মধুর সময় পাড়ি দিয়ে এসেছি, তাঁরা জানি কত নির্ঘুম রাত আমরাও কাটিয়ে এসেছি। দিনের পর দিন হলে সিট না পাওয়া, বাড়ি থেকে টাকা পাঠাতে সমস্যা, নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে সমস্যা, পড়াশোনার চাপ,সব মিলিয়ে হতাশাগ্রস্থ এই আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেবার মতো আশেপাশে খুব বেশি কেউ ছিল না। নিজেদের সেই অভিজ্ঞতার সামনে যেন আমাদের সন্তান,ভাই,বোন কিংবা পরের প্রজন্মকে পড়তে না হয় সে জন্য পরবর্তী প্রজন্মের সাথে সেতু বন্ধন নিয়ে ও কাজ করছে এ সংগঠনটি। অর্থের অভাবে যেন কারো পড়াশোনা বন্ধ হয়ে না যায়, সেজন্য হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছেন আমাদেরই কিছু অগ্রজ পথিক।

এ শহরের নয়, কিন্তু কর্মসূত্রে এ শহরে এসে যারা খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন, তাদের হাতটাও শক্ত করে ধরে নিয়েছে চাঁদপুরে ঢাবিয়ান। তারা একা, এ কথাটি ভাবার সুযোগ দিতে চায়না চাঁদপুরে ঢাবিয়ান।

ক্যাম্পাস লাইফ হয়তো আর ফিরে আসবে না, কিন্তু একটা গন্ডি,একটা আত্নার বন্ধন দীর্ঘ দিন যাদের সাথে ছিল, তাদের একই ছাদের নিচে এনে, বিপদে আপদে, সুখে দুঃখে পাশে পাবার একটা প্ল্যাটফরম রেডি করে দিয়েছে চাঁদপুরে ঢাবিয়ান।

লেখক : নাদিয়া রওশন, উদ্যোক্তা, চাঁদপুর