Home / জাতীয় / ডাকটিকিট স্পর্শ করলেই বঙ্গবন্ধু’র ৭ মার্চের ভাষণ বাজবে
Shiek Mojib

ডাকটিকিট স্পর্শ করলেই বঙ্গবন্ধু’র ৭ মার্চের ভাষণ বাজবে

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনে দেশ-বিদেশে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত সময়কে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করে বিশাল পরিসরে উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।

বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে মুজিববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা,বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কো। শুধু বাংলাদেশের সীমানার মধ্যেই নয়, বছরব্যাপী নানা আয়োজনে মুজিববর্ষ উদযাপিত হবে বিশ্বের ১৯৫টি দেশেও।

আগামি বছর ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১০ জানুয়ারি শুরু হবে কাউন্টডাউন বা ক্ষণগণনা। আগে বাস্তবায়ন কমিটি জানিয়েছিল, ১০০ দিন আগে অর্থাৎ ৮ ডিসেম্বর জন্মশতবার্ষিকীর কাউন্টডাউন শুরু হবে। পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু যেদিন (১০ জানুয়ারি) ঢাকায় ফিরে এসেছিলেন,সে ঐতিহাসিক দিনটিকেই কাউন্টডাউনের জন্য বেছে নেয়া হয়েছে।

জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১৭ মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড ময়দানে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন দেশ-বিদেশের অতিথিরা।

এর মাঝেই মুজিববর্ষ উপলক্ষে বছরব্যাপি বিশেষ আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। প্রস্তাবিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী টেলিযোযোগ বিভাগ ২০২০ সালের প্রথম দিন থেকেই মুজিববর্ষ পালন করবে এবং তা শেষ করবে ১৬ ডিসেম্বর বা তার কাছাকাছি সময়ে।

বছরব্যাপী আয়োজনের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো জানুয়ারির ১ তারিখে দেশের সব মোবাইল ফোনে ভয়েস রেকর্ডের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ সম্প্রচার।

বিশেষায়িত ডাকটিকিট প্রকাশ করা হবে যাতে স্পর্শ করলেই বঙ্গবন্ধুর ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ শোনা যাবে। এ ছাড়া এযাবৎ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যত ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়েছে তা নিয়ে একটি অ্যালবামও প্রকাশ করা হবে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রস্তাবিত কর্মপরিকল্পনা থেকে জানা গেছে, জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে মুজিববর্ষ পালন করতে চায় বিভাগটি। এদিন রাত ১২ টা ১ মিনিটে মোবাইল ফোনে ভয়েস রেকর্ডের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ সম্প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

একই দিন ‘মেহনতি মানুষের বন্ধু’ শিরোনামে বিশেষ ভয়েস ও ডেটা প্যাকেজ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। বাস্তবায়ন করবে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটক। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। একই দিন বঙ্গবন্ধুর সচিত্র আত্মজীবনীমূলক ই-বুক প্রস্তুতকরণ শুরু হবে এবং তা দোয়েল ল্যাপটপে বিনামূল্যে সংযোজন করা হবে। এ জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ লাখ টাকা।

৭ মার্চ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ‘টকিং স্ট্যাম্প’ প্রকাশ করবে। এটি হবে একটি বিশেষায়িত ডাকটিকিট যাতে স্পর্শ করলে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ শোনা যাবে। সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা।

১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর দিনে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোল্ড ফয়েল যুক্ত এ ডাকটিকিট অবমুক্ত করবেন। এজন্য বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে ২ কোটি টাকা।

একই দিন পোস্টকার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানো হবে। এতে থাকবে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা ও স্বাক্ষর। দেশের ৯ হাজার ৮৮৬টি ডাকঘরের মাধ্যমে দেশের ৪ কোটি পরিবারে পাঠানো হবে। এর জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি টাকা।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ টেলিগ্রাফের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর পাঠানো স্বাধীনতার বার্তাটি পাথরে মুদ্রিত ভাস্কর্য তৈরি করে শেরে বাংলা নগরে বিটিসিএলের কার্যালয় প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হবে ২৬ মার্চ। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা।

১৪ এপ্রিল (পহেলা বৈশাখ) দেশের সব মোবাইল অপারেটরদের অংশগ্রহণে ঢাকা শহরসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরে গ্র্যান্ড র্যালি আয়োজন করা হবে। যার সম্ভাব্য ব্যয় ১০ লাখ টাকা।

১২ মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর উৎক্ষেপণ দিবসে আয়োজন করা হয়েছে ‘নক্ষত্রের দেশে বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। এদিন গাজীপুরের সজীব ওয়াজেদ জয় উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাতব্যাপি অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা।

১৭ মে টেলিযোগাযোগ উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যসংঘ দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে। এ অনুষ্ঠানের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ টাকা।

১৪ জুন মহাকাশ যাত্রা শীর্ষক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বেতবুনিয়ায় বাংলাদেশের প্রথম উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র স্থাপন উপলক্ষে জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণের উপস্থিতিতে রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় স্থানীয় উপজাতিদের অংশগ্রহণে রাতব্যাপি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

২৯ থেকে ৩১ জুলাই বিশ্ব ডাক দিবস উপলক্ষে ডাকটিকিট প্রদর্শনী করা হবে ৩ দিনব্যাপি ‘মুজিব পেক্স-২০২০’ শীর্ষক আয়োজনে। এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রকাশিত সব ডাকটিকিটি নিয়ে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করা হবে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি টাকা।

১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে খুলনায় নির্মিতব্য বঙ্গবন্ধু পোস্টাল মিউজিয়াম উদ্বোধন করা হবে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিটও প্রকাশ করা হবে। সম্ভাব্য ব্যয় ৬ কোটি টাকা। ২৩ সেপ্টেম্বর ‘বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আমরা’ শীর্ষক স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ টাকা।

১৮ থেকে ২১ অক্টোবর স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’-এর ওপর নির্মিত বিশেষ তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী করা হবে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ লাখ টাকা।

৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প সংস্থা খুলনার প্রধান কার্যালয় প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর পূর্ণ অবয়বের ভাস্কর্য স্থাপন করা হবে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা।

২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর অথবা কাছাকাছি সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের অভ্যুদয় শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে। এ আয়োজনে থাকবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতি। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ টাকা।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন,‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমাদের আয়োজন থাকবে বছরব্যাপী। মুজিব বর্ষকে ঘিরে পরিকল্পনায় অনেক কিছুই আছে। আরো কিছু যুক্ত হতে পারে। যাই করি না কেন সবকিছুতেই বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করা হবে।’

তিনি আরো বলেন,‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রাষ্ট্রীয় আয়োজনের পাশাপাশি আমরা ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকেও পৃথকভাবে আয়োজন রেখেছি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ খাতে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদান রয়েছে। আমরা তা’গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবো।’

জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ও প্রধান সমন্বয়ক ড.কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন,’বঙ্গবন্ধুর জীবনের আদর্শ আমরা তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে চাই। তাতেই সহযোগী হয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ, অর্জন, জীবন ও সংগ্রাম এবং আদর্শ সবার কাছে তুলে ধরতে বছরব্যাপী জন্মশতবার্ষিকী পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে আমরা বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানাদিক তুলে ধরে চাই। দেশ-বিদেশে নানা কর্মসূচি পালনেরও উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। তিনি বলেন, জন্মশতবার্ষিকী পালনে আমাদের ৮টি উপকমিটি কাজ করছে। এর মধ্যে আলোচনা সভা, সেমিনার, স্মারক বক্তৃতা, তথ্যচিত্র নির্মাণ, বই প্রকাশ ইত্যাদি রয়েছে।

কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, বলেন, ‘আমরা ঠিক করেছি, প্রতিটি জেলায় ক্ষণগণনার জন্য আলাদাভাবে একটি স্থাপনা হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে ক্ষণগণনাটি প্রধানমন্ত্রী ১০ জানুয়ারি উদ্বোধন করবেন। ঢাকায় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউসহ মানুষের সমাগম ঘটে, এমন বিভিন্ন স্থানে ক্ষণগণনার ডিসপ্লে স্থাপন করা হবে।’

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন,‘ মুজিববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠান আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হতে হবে। বঙ্গবন্ধু এ মাটির সন্তান, কাজেই এটা (অনুষ্ঠান) কোনো রংচটা অনুষ্ঠানে রূপ নিতে পারবে না ।’

তিনি বলেন,‘আমাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য। যার অংশ হয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।’

প্রসঙ্গত,২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। ইতোমধ্যে আগামী বছরকে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করেছে সরকার। মুজিববর্ষ উদযাপনে বছরব্যাপি অনুষ্ঠানমালার নানা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বিশ্বের ১৯৫টি দেশে অনুষ্ঠানমালা আয়োজনের পাশাপাশি ঢাকার আয়োজনে যোগ দিতে আসবেন বিশ্বনেতারা।

বার্তা কক্ষ, ২০ ডিসেম্বর ২০১৯
এজি