Home / আন্তর্জাতিক / বিশ্বে প্রতি ৫ সেকেন্ডে ১ শিশুর মৃত্যু : জাতিসংঘ
uno

বিশ্বে প্রতি ৫ সেকেন্ডে ১ শিশুর মৃত্যু : জাতিসংঘ

ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগ ও বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপ প্রকাশিত শিশু মৃত্যুর নতুন হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৬৩ লাখ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি ৫ সেকেন্ডে মারা গেছে একজন শিশু। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব মৃত্যু হয়েছে প্রতিরোধযোগ্য কারণে।

বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ শিশুদের একটি বড় অংশের মৃত্যু হয়েছে তাদের জীবনের প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যে, যা সংখ্যায় ৫৪ লাখ। মৃত্যুবরণকারী এ শিশুদের মধ্যে নবজাতকের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক।

ইউনিসেফের তথ্য, গবেষণা ও নীতিমালা বিষয়ক পরিচালক লরেন্স চ্যান্ডি বলেন, ‘জরুরি পদক্ষেপ নেয়া না হলে এখন থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময়ে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৫ কোটি ৬০ লাখ শিশুর মৃত্যু হবে। ওষুধ, পরিষ্কার পানি, বিদ্যুৎ ও টিকার মতো সহজ সমাধান নিশ্চিত করে আমরা এ বাস্তবতা বদলে দেয়া সম্ভব।’

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপি ২০১৭ সালে মৃত্যুবরণকারী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রায় অর্ধেকই সাব-সাহারান আফ্রিকার এবং আরও ৩০ শতাংশ এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের। সাব-সাহারান আফ্রিকায় প্রতি ১৩ শিশুর একজন তার বয়স পাঁচ বছর হওয়ার আগেই মারা যায়। উচ্চ-আয়ের দেশগুলোতে এ সংখ্যাটি ছিল প্রতি ১৮৫ শিশুতে একজন।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে অনূর্ধ্ব-পাঁচ বছর বয়সী শিশুর মৃত্যুহার ছিল প্রতি হাজারে ৩২ জন। শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ১৯৯০ সালের ৫ লাখ ৩২ হাজার থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে ২০১৭ সালে এক লাখে নেমেছে। মৃত্যুবরণ করা এসব শিশুর অর্ধেকের কিছু বেশি নবজাতক, যাদের মৃত্যু হয় জন্মের প্রথম ২৮ দিনের মধ্যেই।

নবজাতকের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব পদক্ষেপের মধ্যে জাতীয় নবজাতক ক্যাম্পেইন অন্যতম। এ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সরকার প্রতিটি নবজাতকের জন্য ব্যয়-সাশ্রয়ী জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কমিউনিটি ও বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চেষ্টা করছে।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুতে সরকার জাতীয় নবজাতক স্বাস্থ্য কর্মসূচি শুরু করে যা জরুরি কার্যক্রমগুলোকে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় সম্প্রসারণ করে। জরুরি মাতৃ ও নবজাতকের সেবাকে যথাযোগ্য অগ্রাধিকার দিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়,ইউনিসেফ ও অংশীদার সংস্থা বাংলাদেশের জেলাসমূহে অসুস্থ নবজাতকের অত্যাবশ্যকীয় সেবা নিশ্চিত করতে স্ক্যানু প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। স্ক্যানুর মাধ্যমে অসুস্থ নবজাতকদের অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ৫ বছরের কম বয়সী বেশিরভাগ শিশুর মৃত্যু হয় জন্মকালীন জটিলতা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, নবজাতকের সংক্রমণজনিত সমস্যা ও ম্যালেরিয়ার মতো প্রতিরোধযোগ্য অথবা নিরাময়যোগ্য কারণে।

তুলনামূলকভাবে, ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর একটি বিশেষ কারণ হচ্ছে আঘাত, বিশেষ করে পানিতে ডুবে যাওয়া এবং সড়ক দুর্ঘটনার মাধ্যমে। এ বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক পার্থক্যও বিদ্যমান- ইউরোপের তুলনায় সাব-সাহারান অঞ্চলে একই বয়সী শিশুদের মৃত্যুর ঝুঁকি ১৫ গুণ বেশি।

সর্বত্রই শিশুদের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময় হচ্ছে তাদের জীবনের প্রথম মাস—এ তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে ২৫ লাখ শিশু তাদের জীবনের প্রথম মাসে মৃত্যুবরণ করে।

উচ্চ-আয়ের দেশগুলোতে জন্মগ্রহণকারী একটি শিশুর তুলনায় সাব-সাহারান আফ্রিকা অথবা এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলোতে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের জীবনের প্রথম মাসেই মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল ৯ গুণ বেশি। এছাড়া পাঁচ বছরের কম বয়সী অন্য শিশুদের তুলনায় নবজাতকদের বাঁচানোর ক্ষেত্রে অগ্রগতি ১৯৯০ সাল থেকে বেশ ধীরগতির।

এক্ষেত্রে এমনকি দেশের ভেতরেও বৈষম্য রয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার গড়ে ৫০ শতাংশ বেশি। এছাড়া মাধ্যমিক বা আরও উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণ করা মায়ের সন্তানের তুলনায় অশিক্ষিত মায়ের সন্তানের বয়স পাঁচ বছর হওয়ার আগেই মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ।

বার্তা কক্ষ
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শুক্রবার

Leave a Reply