চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে বিদ্যালয়ের ক্লাস ছুটির পর বাথরুমের আটকা থাকায় ১১ ঘন্টা পরে বাক প্রতিবন্ধী শারমিনকে উদ্ধার করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী।
১৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ক্লাস ছুটির পর সবাই বাড়ি গেলেও বিদ্যালয়ের বাথরুমের আটকা থাকায় বাড়ি ফিরতে পারেনি বাক প্রতিবন্ধী শারমিন।
বিষয়টি রাতে রাস্তায় ঘুরতে আসা এক তরুণের দৃষ্টিগোচর হলে রাত ১০টার পর বাথরুমের তালা ভেঙে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। এলাকার লোকজন এ ঘটনাকে ১৯৮০ সালের শিশুতোষ চলচ্চিত্র ছুটির ঘন্টা সাথে তুলনা করে বলেন, সেখানে ১১ দিন পর স্কুলের বাথরুম হতে উদ্ধার হয়েছিল ছাত্রের লাশ আর এখানে ১১ ঘন্টা পর জীবিত উদ্ধার হলো ছাত্রীটি।
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়নের হোসেন পুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের কারো গাফিলতি পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার।
এলাকাবাসী ও ওই ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের এসএসসি পরিক্ষার্থী পাশ্ববর্তী কচুয়া উপজেলার আশ্রাফপুর ইউনিয়নের আশ্রাফপুর দক্ষিণ পাড়া হাজী বাড়ির আনোয়ার হোসেনের কন্যা বাক প্রতিবন্ধী শারমিন আক্তার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে বিদ্যালয় ছুটির পর টয়লেটে প্রবেশ করে। সেখানে প্রাকৃতিক ডাকে সেরে বের হবার আগেই বিদ্যালয়ের আয়া শাহানারা আক্তার শানু বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দেয়। বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় কাউকে ডাকতে না পেরে টয়লেটে আটকা পড়ে থাকে শিশুটি।
এসময় বারবার কথা বলার চেষ্টা করতে গিয়ে তার গলা ও মুখ রক্তাক্ত হয়ে যায়। ছুটির পর বাড়ি না ফেরায় তার পিতা বিভিন্ন ছাত্রী ও আত্মীয়ের বাড়িতে তাকে খুঁজতে থাকে।
রাত ১০টার পর স্থানীয় স্বর্ণকার বাড়ির আল আমিন বিদ্যালয়ের পাশে পুলের উপর ঘুরতে আসলে সে বাথরুমে কারো আওয়াজ পেয়ে ওই ছাত্রীর উপস্থিতি শনাক্ত করে। খবর পেয়ে এলাকার লোকজন তালা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে।
সরেজমিনে ওই ছাত্রীর বাড়িতে গেলে সে তার ভাষায় গতকালের ঘটনা বুঝানোর চেষ্টা করে। বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয় নি।
ছাত্রীর পিতা মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, রাত সাড়ে ১০ পর্যন্ত অজানা আশংকা নিয়ে মেয়েকে খুঁজেছি। বিদ্যালয় ছুটির পর শারমিন বাড়ি না ফেরায় সহপাঠী ও স্বজনদের বাড়িতে হন্য হয়ে খোঁজ নিয়েছি। আমার মেয়ে বারবার লোকজন ডাকার চেষ্টা করতে গিয়ে তার গলা ও মুখ রক্তাক্ত হয়ে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী আল আমিন জানান, রাতে পুলের উপর ঘুরতে গিয়ে বিদ্যালয়ের বাথরুমে কারো শব্দ শুনতে পাই। মোবাইলের টর্চ জ্বেলে ভেন্টিলেটরের ফাঁকে মানুষের হাত দেখে প্রথমে ভূত ভেবে চমকে উঠি।
পরে এলাকার লোকজনকে ডেকে এনে তালা ভেঙে মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের সময় তার মুখের মাস্ক রক্তে ভেজা দেখতে পাই।
বিদ্যালয়ের আয়া শাহানারা আক্তার শানু জানান, সাড়ে ১২টায় নয়, তিনি বিকেল ৪ টার দিকে বাথরুমের তালা বন্ধ করেছেন। তবে তিনি ভিতরে কেউ আছে কিনা তা না দেখেই দরজা বন্ধ করেছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আমীর হোসেন জানান, তিনি বিকেল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত দাফতরিক কাজে বিদ্যালয়ে ছিলেন। বের হবার আগে পর্যন্ত এমন কিছু তার নজরে পড়েনি।
রাতে মুঠোফোনে ঘটনা জানতে পেরে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে ওই ছাত্রীর বাড়ি পাঠান।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আহসান উল্যাহ চৌধুরী জানান, তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার জানান, আমি ঘটনা অবগত হয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আহসান উল্যাহ চৌধুরীকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের কারো গাফিলতি পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রতিবেদকঃ মো. জামাল হোসেন