ভারতের অংশগ্রহণ ছাড়া মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অপূর্ণ মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, সেখানে ক্ষমতায় কোন সরকার তা বিবেচ্য নয়।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতার বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ১৭ মার্চ মুজিববর্ষ শুরু হচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বেশ কয়েক মাস আগে। সেটি গ্রহণও করেছেন বেশ কয়েক মাস আগে। বাংলাদেশের জাতির পিতার জন্মবার্ষিকীতে তিনি আসবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে কোনো দেশের যদি এককভাবে সবচেয়ে বেশি অবদান থাকে, সেটি হচ্ছে ভারত। আমাদের দেশের এক কোটি মানুষ ভারতে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। তৎকালীন ভারত সরকার আমাদের সহযোগিতা করেছিল।’
‘বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য তৎকালীন ভারত সরকার, তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বিভিন্ন দেশে ছুটে গিয়েছিলেন। সেই আন্তর্জাতিক চাপের কারণে, বিশ্ব জনমতের কারণেই কিন্তু পাকিস্তান বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। স্বাধীনতা পূর্ণতা পেয়েছিল।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা স্বাধীনতা অর্জন করলেও ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন পাকিস্তানের কারাগার থেকে, সেদিনই প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতা পূর্ণতা পেয়েছিল।
হাছান মাহমুদ বলেন, সে কারণেই মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের অবদান, বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার জন্য ভারতের যে অবদান- এসব বিবেচনা করেই মুজিববর্ষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
মুজিববর্ষ সামনে রেখে বাংলাদেশে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ উন্মুখ হয়ে বসে আছে, সেই কারণে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোর অনেককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
‘মুজিব জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান যদি ভারতের অংশগ্রহণ না থাকে আমি মনে করি তাহলে মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পূর্ণতা পায় না।’
তিনি বলেন, ‘ভারতে কি ঘটেছে কি ঘটেনি, সেটিই ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। বাংলাদেশ তো এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে না যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী আসার ক্ষেত্রে প্রশ্ন তোলার মতো পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে।’
‘যারা এ প্রশ্ন তুলছে বিএনপি, তাদের মূল রাজনীতি হচ্ছে ভারত বিরোধিতা। ভারত বিরোধিতাই তাদের রাজনীতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। ভারত বিরোধিতার রাজনীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্যই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব এ অবান্তর কথাগুলো বলছেন। এ প্রশ্নগুলো তুলছেন’ বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ করছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর সামনে উদাহরণ। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এ ধরনের প্রশ্ন উপস্থাপন করার দুটি উদ্দেশ্য রয়েছে- একটি হচ্ছে ভারত বিরোধিতার রাজনীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা, আরেকটি হচ্ছে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে উসকানি দেয়া। আমি আশা করব, তারা সেই পথ পরিহার করবেন।’
শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে মোদির আগমনের বিরোধিতা করছেন- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা সবসময় ভারত-বিরোধিতার রাজনীতি করে এবং সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দেয়ার চেষ্টা করে, তাদের পক্ষ থেকে এগুলো করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী শান্তিপ্রিয়। তারা যে কথাগুলো বলছে এগুলো কখনও হালে পানি পাবে না।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এখানে ভারতের সরকারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ভারতে কোন সরকার ক্ষমতায় আছে সেটি আমাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। ভারতের মান্যবর প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে শিল্প ঘোষণার জন্য আইনি নোটিশের বিষয়ে একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একজন আইনজীবী উকিল নোটিশ দিয়েছেন। এটি আপনার কাছ থেকে শুনে জবাব দেয়া আমি মনে করি সমীচীন নয়। আমাকে জানতে হবে- কি উকিল নোটিশ দিয়েছেন, আমাকে দেখতে হবে। তারপর আমি সেটার জবাব দিতে পারব।’
ঢাকা ব্যুরো চীফ,৩ মার্চ ২০২০