বিচারক ছেলের বিচারকাজ দেখতে গিয়ে অন্যদের মতো ছেলেকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানালেন বাবা। এমনই ঘটনা ঘটেছে রোববার (২৭ মে) রাজশাহীর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে।
ওই আদালতের বিচারক সাঈদ শুভর আদালতে বিচার দেখতে গিয়ে তাঁর বাবা ও অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক ইয়াকুব আলী তাঁর নিজ সন্তাকেও দাঁড়িয়ে সম্মান জানান। পরে বিচারক সাইদ শুভ নিজেই বিষয়টি তুলে ধরেন তাঁর ফেসবুকে।
সাঈদ শুভ লিখেন, ‘একজন বিচারকের খাসকামরায় বিচারকের চেয়ারে বসা তার খুব সাধারণ অথচ গর্বিত বাবার স্থিরচিত্র এটি। এই স্থিরচিত্রটি খুবই সাধারণ কিন্তু অনেক কারণে তাৎপর্যমণ্ডিত।
গত কয়েকদিন আগে বাবা রাজশাহীতে এসেছেন। আজ আদালতে এসেছিলেন তাঁর সন্তানের বিচার কার্যক্রম স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করতে। নির্ধারিত সময়ের আগে এজলাসে বসে অপেক্ষা করছিলেন। আদালতে বিচারক হিসেবে আসন গ্রহণের সময় খেয়াল করলাম আইনজীবী, বিচারপ্রার্থীদের সাথে বাবাও দাঁড়িয়ে আদালতকে সম্মান জানালেন। নিয়ম অনুযায়ী আদালত আসন গ্রহণের সময় এজলাসে উপস্থিত আইনজীবী, বিচারপ্রার্থীসহ সব মানুষ দাঁড়িয়ে আদালতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন।
বিচারকদের জন্য এটা নিত্যনৈমিত্তিক একটা সাধারণ ঘটনা। কিন্তু যে ব্যাপারটাতে আমার চোখ আটকে গেলো সেটা হলো, অন্যরা নিয়ম পালনের স্বার্থে আদালতকে দাঁড়িয়ে সম্মান করলেন। আর বাবার চোখে মুখে যে সম্মানটা দেখলাম সেটা একেবারেই ভেতর থেকে এসেছে; এই সম্মানটা উনি তাঁর নিজ ঔরসজাত সন্তানের প্রতি প্রদর্শন করলেন।
সাঈদ শুভ লিখেছেন, পৃথিবীর সব বাবাই তাঁদের সন্তানদেরকে এভাবে সম্মান জানাতে পারলে সবথেকে বেশি খুশি হন। সত্যি বলতে পৃথিবীর কোনো মানুষই কারো কাছে পরাজয়কে মেনে নিতে পারেন না। দুজন মানুষ পরাজয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হন।
বাবা ও শিক্ষক এই দুই প্রজাতির মানুষ সন্তান ও ছাত্রের কাছে পরাজিত হতে পেরে সব থেকে বেশি আনন্দিত হন। এই পরাজয় মানে তাঁদের বিজয়। এই ধরণের বিজয়লাভ করার সুযোগ খুব অল্প মানুষের ভাগ্যে ঘটে। বাবা এবং শিক্ষক হিসেবে স্বার্থক মানুষদের ক্ষেত্রে এটা ঘটে থাকে। সত্যি বলতে এই অধম সন্তানও পৃথিবীতে সব থেকে বেশি সম্মান করে তাঁর পিতাকে এবং তাঁর মাতাকে।’
বিচারক সাঈদ শুভ এর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় কবলিত এক সাইকেল আরোহীকে নিজেই ড্রেন থেকে তুলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেন বিচারাঙ্গনেসহ সামাজিক গণমাধ্যমে।
বার্তা কক্ষ
২৭ মে ২০১৯
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur