Home / সারাদেশ / সেই ‘বৃদ্ধ শিশু’ আর নেই
সেই ‘বৃদ্ধ শিশু’ আর নেই

সেই ‘বৃদ্ধ শিশু’ আর নেই

বিরল রোগ প্রজেরিয়ায় আক্রান্ত মাগুরার সেই ‘বৃদ্ধ শিশু’ বায়েজিদ সাড়ে পাঁচ বছর বয়সে মারা গেছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

গতকাল রাতেই বায়েজিদের লাশ মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের (ইউপি) খালিয়া গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় তার দাফন হয়।

বায়েজিদের বাবা রাজমিস্ত্রি লাভলু শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ২০১২ সালের মে মাসে মাগুরা মাতৃসদন হাসপাতালে বায়েজিদের জন্ম হয়। তখন থেকেই সে দেখতে বৃদ্ধ মানুষের মতো। বায়েজিদকে দেখে সবাই ভয় পেত। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়েজিদের শরীরে বার্ধক্যের ছাপ স্পষ্ট হতে থাকে। জন্মের তিন মাসের মধ্যেই তার দাঁত ওঠে। অভাবের সংসারে ছেলের মুখের ‍দিকে তাকিয়ে নানা জায়গায় বায়েজিদের চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

বায়েজিদের মা তৃপ্তি খাতুনের ভাষ্য, অন্য সব শিশু সাধারণত দশ মাস থেকে এক বছরের মধ্যে হাঁটা শিখলেও বায়েজিদ হাঁটতে শিখেছে সাড়ে তিন বছর বয়সে। অথচ জন্মের তিন মাসের মধ্যেই বায়েজিদের দাঁত উঠেছিল। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়েজিদের প্রস্রাবও বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। সেই সঙ্গে সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিয়েছিল তার। ক্রমেই তার চেহারা বৃদ্ধের মতো হয়ে যাচ্ছিল।

লাভলু শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, গত রোববার (১০ ডিসেম্বর) রাতে বায়েজিদ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। গতকাল সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে তার মৃত্যু হয়।

বিরল রোগ প্রজেরিয়ায় আক্রান্ত বায়েজিদ ছিল বাবার কাছে অলরাউন্ডার। সে ক্রিকেট খেলতে পারত। আয়নার সামনে গিয়ে মাথা আচড়াতে পারত। গোসল করতে পারত। জামাকাপড় ময়লা হলে নিজেই তা পরিষ্কার করত। বুড়া মানুষের মতো চেহারা ছাড়া আর কোনো সমস্যা ছিল না তাঁর।

বায়েজিদকে নিয়ে গত বছর প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়। ওই বছরের ২৯ মে মাগুরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিয়ে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। ওই মেডিকেল বোর্ড বায়েজিদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়। চিকিৎসকেরা বায়েজিদের রোগটি বিরল প্রজেরিয়া বলে শনাক্ত করেন। পরে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বায়েজিদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও দেড় মাস ধরে চিকিৎসা করানো পর কোনো ফল না পেয়ে লাভলু শিকদার বায়েজিদকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। বাড়ি থেকেই তিনি মাঝেমধ্যে মাগুরা সদর হাসপাতালে বায়েজিদের চিকিৎসা করাচ্ছিলেন।

মা তৃপ্তি খাতুনের কোলে প্রজেরিয়া রোগে আক্রান্ত বায়েজিদ। সে শিশু হলেও দেখতে বৃদ্ধের মতো ছিল। ফাইল ছবি: কবির হোসেন
জানতে চাইলে মাগুরা সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, শিশুটি বিরল প্রজেরিয়া রোগে আক্রান্ত ছিল। এটি একধরনের জেনেটিক অসংগতি। এক কোটি শিশুর মধ্যে একজনের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সারা পৃথিবীতে এ পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত ১০০টি শিশুর সন্ধান পাওয়া গেছে।

দেবাশীষ বিশ্বাস আরও বলেন, নানা শারীরিক সমস্যার সঙ্গে বিরল রোগ প্রজেরিয়ায় আক্রান্ত বায়েজিদের পুরুষাঙ্গের চামড়া নিচের দিকে ঝুলে যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এ ধরনের শারীরিক জটিলতাকে’ প্রিরিপিউস’ বলা হয়।

মাগুরা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু প্রথম আলোকে বলেন, প্রজেরিয়া রোগে আক্রান্ত শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি ও দৃষ্টিশক্তিসহ অন্যান্য বিষয় স্বাভাবিক থাকলেও শরীরের চামড়া বৃদ্ধ মানুষদের মতো কুঁচকানো হয়। এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। সাধারণত এ রোগে আক্রান্ত শিশু বড়জোর ১২-১৪ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। (প্রথম আলো)

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৮:২৫ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার
এএস