Home / ইসলাম / রোজার পরম্পরা ইতিহাস
রোজার পরম্পরা ইতিহাস

রোজার পরম্পরা ইতিহাস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :

আজ শনিবার, ৯ রমজান।

রোজা ফরজের বিষয়টি শুধুমাত্র উম্মাতে মুহাম্মাদীর ওপর করা হয়েছে। আর কোনো জাতির ওপর এটি ফরজ ছিল না। বিষয়টি এমন নয়। তবে বৈশিষ্ট্যময় আমাদের ওপর ফরজকৃত রোজা।

পরম পরওয়ারদেগারে আলম বলছেন, ‘যেমন করে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছিল।’

এ ঘোষণায় জানা যাচ্ছে রোজা আগের জাতিগুলোর ওপরও ফরজ ছিল।

হাদিসে এসেছে, হজরত দাউদ (আ.) রোজা রাখতেন। কিন্তু কতক্ষণ রাখতেন বিষয়টি জানা যায় না। তিনি একদিন পর একদিন বছরে ৬ মাস রোজা রাখতেন। তবে তিনি পুরোদিন রোজা রাখতেন কি না, পরিষ্কার নয়।

ইহুদিরা ১০ মহররম আশুরার রোজা রাখে। কেননা দিনটি বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য, আল্লাহ মুসা [আ.] কে নীলনদের পানিতে নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন এবং ফেরাউনকে পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করেছেন।

পারস্য, রোমান, হিন্দু, গ্রিক, ব্যাবিলনীয় ও পুরাতন মিসরীয়রা রোজা রাখত। ক্যাথলিক গির্জা রোজার কোনো নির্দেশ ও নীতিমালা জারি করেনি। তবে গির্জার দৃষ্টিতে কোনো কোনো সময় পূর্ণ উপবাস কিংবা আংশিক উপবাসের মাধ্যমে কিছু গুনাহ মাফ হয় এবং তা এক প্রকারের তওবা হিসেবে গণ্য হয়।

রোমান গির্জা, মাঝে মাঝে দিনে এক বেলা খাবার গ্রহণের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আংশিক রোজার পরামর্শ দেয়।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রাচীন খ্রীস্টানরা বুধবার, শুক্রবার ও শনিবারে রোজা রাখত। তারা তাদের ওপর আপতিত বিপদ মুক্তির জন্য রোজা রাখত। চতুর্থ খ্রীষ্টাব্দের শুরুতে খ্রীস্টানদের ওপর মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসে। সে বিপদ থেকে মুক্তির জন্য নবী মুসা [আ.] এর অনুকরণে তারা ৪০ দিনব্যাপী বড় রোজা রাখত।

এ ছাড়াও ওই সময়ে মানুষের মধ্যে এ ধারণা বিরাজ করে যে, মানুষের খাওয়ার সময় শয়তান শরীরের ভেতর প্রবেশ করে। আল্লাহ্‌র সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করা জরুরী। যাতে শয়তানকে তাড়িয়ে নফসকে পবিত্র করা যায়। সে জন্য তারা রোজা রাখত। মথি লিখিত সু-সমাচারে বর্ণিত আছে- নামাজ ও রোজা দ্বারা শয়তান বেরিয়ে যায়।

প্রাচীন হিব্রুরা শোক কিংবা বিপদের মুহূর্তে রোজা রাখত। বিপদ দূর হয়ে গেলে আল্লাহ্‌র শুকরিয়াস্বরূপ রোজা রাখত। হিব্রু ক্যালেন্ডারে আজও মা দিবসে ইহুদিদের রোজা রাখার নিয়ম আছে। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকরা বছরের কয়েকদিন একাধারে রোজা রাখত। তাদের মতে, এটা আত্মাকে বিশুদ্ধ করার উত্তম পদ্ধতি। বিখ্যাত গণিতজ্ঞ ও দার্শনিক পিথাগোরাস ৪০ দিন রোজা রাখতেন। তার মতে, রোজা চিন্তার সহায়ক। সক্রেটিস ও দার্শনিক প্লেটো ১০ দিন রোজা রাখতেন।

প্রাচীন সিরিয়ানরা প্রতি সপ্তম দিনে রোজা রাখত। আর মঙ্গোলিয়ানরা রাখত প্রতি দশম দিবসে রোজা। মোট কথা সবযুগেই রোজার প্রচলন ছিল। অনুরূপভাবে বৌদ্ধ, হিন্দু, তারকা পূজারী ও আধ্যাত্মবাদিদেরও উপবাস সাধনার নিয়ম রয়েছে। তারা বেশ কিছু খাবার পরিহার করে আত্মাকে উন্নত করার চেষ্টা করে।

তাদের ধারণা, দেহকে দুর্বল করার মাধ্যমে আত্মা শক্তিশালী হয়। আত্মাকে সবল করার জন্য তাদের এই উপবাস প্রথার আবিষ্কার হয়েছে।

মূলকথা, রোজা প্রায় সকল জাতি ও ধর্মের মধ্যে রয়েছে। যদিও তার ধরন-প্রকৃতি আমাদের এক্ষণে অজানা।

প্রিয় পাঠক, এটা মনে রাখতে হবে, আমাদের রোজা পালনের কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমত, আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জন। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন। তৃতীয় উদ্দেশ্য জান্নাত লাভ করা। চতুর্থ উদ্দেশ্য হচ্ছে, রোজার মাধ্যমে পাপ থেকে দূরে থাকা। পঞ্চম উদ্দেশ্য আল্লাহ্‌র সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করা। ষষ্ঠ উদ্দেশ্য গুনাহ থেকে মার্জনা লাভ করা। আপনি যদি রোজা পালন করেন আল্লাহ আপনাকে মাফ করে দেবেন। সপ্তম উদ্দেশ্য জ্ঞান অর্জন, হুসনুস সুলুক তথা বিনয় ও নম্রতা শিক্ষা।

আপনি যদি রোজা রাখেন তাহলে আপনি সংযমী হবেন, বিনয়ী হবেন, অনুশোচনা করবেন, সংযমী হওয়া আপনার জন্য ফরজ।

অষ্টম উদ্দেশ্য আল্লাহ্‌র বিধিনিষেধ সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া। নবম উদ্দেশ্য আত্মিক শক্তি বৃদ্ধির ওপরে আধ্যাত্মিকতাকে প্রাধান্য দেওয়া, আধ্যাত্মিক শক্তিকে বৃদ্ধি করা। দশম উদ্দেশ্য সৎকাজে অগ্রগামী হওয়া, সৎকাজে নিজেকে অভ্যস্ত করে তোলা। একাদশ উদ্দেশ্য সততা অর্জন। দ্বাদশতম উদ্দেশ্য আকাঙ্ক্ষা, লোভ লালসা কমানো। তেরতম উদ্দেশ্য রোজা যেহেতু মুমিনের জন্য ঢালস্বরূপ তাই রোজাদার ব্যক্তিকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখা। চৌদ্দতম উদ্দেশ্য অপ্রয়োজনীয় ও অশ্লীল কর্মকাণ্ড ও কথা থেকে বিরত থাকা।

আপডেট :   বাংলাদেশ সময় : ১৩ আষাঢ় ১৪২২ বঙ্গাব্দ, শনিবার ২৭ জুন ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ, ০১:২১ অপরাহ্ন

 

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫

চাঁদপুর টাইমস ডট কম-এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি