Home / শীর্ষ সংবাদ / মতলব উত্তরে গরিবের ঘর নিয়ে ইউএনও’র খামখেয়ালি কান্ড
home
উপজেলা সংলগ্ন ছেঙ্গারচর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের ঘনিয়ারপাড় এলাকায় বেপারী বাড়িতে একসঙ্গে তিন ভাইকে তিনটি ঘর দুই মাস হয়েছে করে দিলেও ভিটে পাকা ও টয়লেট করে দেয়া হয়নি।

মতলব উত্তরে গরিবের ঘর নিয়ে ইউএনও’র খামখেয়ালি কান্ড

২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে যার জমি আছে ঘর নাই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ কার্যক্রমের মেয়াদ তিনমাস আগে শেষ হলেও এখনও একটি ঘরেরও পুরোপুরি নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।

অথচ এর আগেই হিসাবরক্ষণ কার্যালয় থেকে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ইউএনও (উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা) প্রকল্পের পুরো ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন।

সরেজমিনে মতলব উত্তর উপজেলার ছেঙ্গারচর পৌর এলাকায় ঘুরে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে যার জমি আছে ঘর নাই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ কার্যক্রমের আওতায় ছেঙ্গারচর পৌর এলাকার জন্য গত ২৮ মে ৩২৯টি ঘরের বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া হয় ৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এর আগে গত ২৩ মে একই উপজেলার এখলাসপুর ইউনিয়ন এলাকার জন্য ১৪১টি ঘরের বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া এক কোটি ৪১ লাখ টাকা।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের প্রকল্প পরিচালকের নির্দেশ মতে যাদের ঘর নেই বা ঘর থাকলেও তা ব্যবহার অনুপযোগী এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে ইউএনও নিজে এই টাকা তুলবেন। কিন্তু বাস্তবে কাজের সঙ্গে এই সিদ্ধান্তের কোনো মিল পাওয়া যায়নি।

কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও মতলব উত্তর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমীন আক্তার ২টি প্রকল্পের মোট ৪৭০টি ঘরের বিপরীতে মোট ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা গত ২০ জুন উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয় থেকে নিয়ে গেছেন। প্রকল্পের নকশা অনুয়ায়ী ১৫ ফুট বাই ১৫ ফুট ফ্লোর পাকা একটি চৌচালা বারান্দাসহ টিনের ঘর ও সংযুক্ত একটি নিরাপদ টয়লেটসহ প্রতিটি ঘরের জন্য এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ ধরা হয়। কিন্তু এখনও একটি ঘরও পূর্ণভাবে নির্মাণ করা হয়নি।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, যেসব ঘর করা হয়েছে তার প্রতিটিতে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু এখন এসব ঘরে ভিটে করা হয়নি। ছেঙ্গারচর পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের আদুরভিটি ও ৫নং ওয়ার্ডের ঘনিয়ারপাড় গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, যাদের ঘর করে দেয়া হয়েছে তারা কেউই একটি ঘরও ব্যবহার করতে পারছেন না। কারণ ঘর করা হয়েছে কিন্তু ভিটে ও পাকা করার কাজ এখনও শুরু হয়নি। এমনকি এখনও একটি টয়লেটও করা হয়নি।

ছেঙ্গারচর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের উত্তম চন্দ্র দাসের স্ত্রী সাথী রানী জাগো নিউজকে জানান, তার স্বামী পেশায় একজন রিকশাচালক। সরকার তাদের ঘর করে দিলেও ঘরের ভিটে নিজ খরচে মাটি কিনে করেছেন।

একই এলাকার স্বামী হারা লিয়াকত আলীর স্ত্রী রেজিয়া আক্তার জাগো নিউজকে জানান, তার তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে মায়ের ঘরে থাকেন। তাকে একটি ঘর করে দেয়ার কথা বলে নাম লিখে নিয়েছে স্থানীয় পৌর কমিশনার। কিন্তু আজও তার কোনো ঘর দেয়া হয়নি।

আদুরভিটি এলাকায় সেলিম লস্করের বাড়িতে প্রায় একমাস আগে ঘর করে দিলেও ভিটে পাকা ও টয়লেট করে দেয়া হয়নি বলে জানান তার স্ত্রী জীবন নেছা। এ কারণে তার আগের ভাঙা ঘরেই পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাপন করছেন এখনও।

একই ওয়ার্ডের বকাউল বাড়ির স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা রেজাউল বকাউল জানান, তাকে একটি ঘর প্রায় একমাস আগে করে দিলেও ভিটে পাকা ও টয়লেট করে দেয়া হয়নি।

আদুরভিটি প্রধানিয়া বাড়ির মৃত হযরত আলীর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম জানান, তাকে ঘর নির্মাণ করে দিলে ভিটে নিজ খরচ করতে বলা হয়। তাই তিনি ৩ হাজার ৫০০ টাকার বালু ফেলে ঘরের ভিটে করেন। একই এলাকার মৃত ছিডু মিয়ার স্ত্রী খোরশেদা বেগম ঘর করার মিস্ত্রি খরচ দেন ১ হাজার ৫০০ টাকা। ঘরের ভিটে করতে ১৪ গাড়ি বালু ফেলেছেন তিনি। এতে তার আরও ৭ হাজার টাকা ব্যয় হয়।

মতলব উত্তর উপজেলা সংলগ্ন ছেঙ্গারচর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের ঘনিয়ারপাড় এলাকায় মেহের আলী জানান, দু’মাস আগে ঘর করে দিলেও ভিটে পাকা ও টয়লেট করে দেয়া হয়নি। মেহের আলীর স্ত্রী নূর জাহান জানান, তার নিজের কোনো জমি নাই। অন্যের জমিতে এই ঘরটি করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তা ব্যবহার অনুপযোগী।

জমি আছে ঘর নাই প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে এখলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোছাদ্দেক হোসেন মুরাদ বলেন, আমার ইউনিয়নে এখনও কোনো ঘর নির্মাণ করা হয়নি। কত ঘর বরাদ্দ আছে তার তালিকা ইউএনওর কাছে।

মতলব উত্তর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও প্রকল্পের সদস্য সচিব বেলাল হোসেন দাবি করেন, ৪৭০টি ঘরের বিপরীতে প্রায় ২০০টির মতো ঘরের কাজ শেষ হয়েছে। এতে প্রায় ২ কোটি টাকা এরইমধ্যে ব্যয় হয়ে গেছে। বাকি টাকা ইউএনওর কাছে রয়েছে। কিন্তু কোথায় কাকে ঘর করে দেয়া হয়েছে এর তালিকা চাইলে তা দিতে রাজি হননি তিনি।

এ ব্যাপারে মতলব উত্তর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শারমীন আক্তার বলেন, আমরা এই প্রকল্পের বরাদ্দ দেরিতে পেয়েছি। তাই কাজও দেরিতে শেষ হচ্ছে।’

তিনি স্বীকার করেন ২০০টি ঘরের কাজ সম্পন্ন করেছেন। তবে কিছু ঘরের ভিটে পাকা ও টয়লেট নির্মাণ কাজ চলমান। এছাড়া প্রকল্পের বাকি কাজও ধীরে ধীরে করা হচ্ছে। আর কাজের জন্য কমিটি থাকলেও এসব কাজ তিনি নিজেই করছেন বলে দাবি করেন।
প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়ে বলেন, অর্থ বরাদ্দ দেরিতে পাওয়ায় ওই টাকা এখনও তিনি ফেরত দেননি। তবে কাজ শেষ হলে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তার হিসাব দেবেন। (তথ্যসূত্র- ইকরাম চৌধুরী, জাগোনিউজ)

১২ অক্টোবর, ২০১৮

Leave a Reply