রাজনীতি

নানা চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে পরিবর্তন আসছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে

পরিবর্তন আসছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। আসন্ন কাউন্সিলে দলের কিছু পদে আসছে নতুন মুখ। এছাড়া পুরো কমিটি ঢেলে সাজানো হচ্ছে। সময়ের চাহিদা ও বর্তমান কমিটির নেতাদের কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করে এ পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে দলের নীতি-নির্ধারক সূত্র জানিয়েছে।

২৮শে মার্চ কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য তারিখ ঠিক করে ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে গঠনতন্ত্রেরও সংশোধন করা হবে। তবে এখনও পর্যন্ত গঠনতন্ত্র সংশোধনে কোন কমিটি গঠন করা হয়নি। আগের কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র নিয়ে যারা কাজ করেছেন তারা ছাড়াও সংশোধন কমিটিতে এবার আরও কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে যুক্ত করা হচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান গঠনতন্ত্রে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৭৩টি পদ রয়েছে। আসন্ন কমিটিতে এ সংখ্যা আরও বাড়বে। অন্তত ১০টি পদ যুক্ত হতে যাচ্ছে কমিটিতে। এর মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদকের বর্তমান ৭ টি পদের জায়গায় ১০টি, দলীয় মুখপাত্র, তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদকের পদ যুক্ত হচ্ছে গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে।

আগের কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির পদ বাড়লেও এটি একশ’র উপরে যাবে না। সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০টি পদ বাড়তে পারে।

তিনি জানিয়েছেন, গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতে কয়েকজন সিনিয়র নেতাও থাকবেন। আগের কমিটিতে দায়িত্ব পালন করা একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কমিটি গঠন হলে আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হবে। তবে এখন অনানুষ্ঠানিকভাবে আলাপ-আলেচনা চলছে।

তিনি বলেন, দলকে গতিশীল করতে এবং সময়ের চাহিদা অনুযায়ী দলে ও নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা হবে। বর্তমান কমিটিতে যারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন বা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারা আবার দায়িত্ব পাবেন কিনা এটি বিবেচনা করবে দলীয় ফোরাম।

এদিকে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বশেষ বৈঠকে কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এখন পর্যন্ত সম্মেলন হয়নি এমন জেলাগুলোর সম্মেলন করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই সব জেলার সম্মেলন শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলা সম্মেলন শেষ হলেই কাউন্সিলের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হবে। কাউন্সিলের বিষয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, জেলা সম্মেলন শেষ করার জন্য কাজ চলছে, একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের কার্যক্রমও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। সম্মেলন প্রস্তুতির জন্য একাধিক কমিটি হবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটিও সম্মেলনকে সামনে রেখে বৈঠক করবে।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ৭৭টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৬০টি জেলার সম্মেলন হয়েছে। পাঁচটি জেলার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি ১২টি জেলার সম্মেলন করতে হবে চলতি মাসের মধ্যে।

২০১২ সালের ২৯শে ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্তমান কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদ গত ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। যদিও সর্বশেষ সভায় কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদ পরবর্তী কাউন্সিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

দলীয় সূত্র বলছে, আসন্ন কাউন্সিল দুইদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। চলমান রাজনৈতিক অবস্থা এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন এ দু’টি বিষয় সামনে রেখেই নতুন কমিটিকে কাজ করতে হবে। এজন্য অভিজ্ঞ নেতাদের পাশাপাশি তরুণ ও মেধাবীদের স্থান দেয়া হবে নতুন কমিটিতে। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং নির্বাচনের জন্য দলকে প্রস্তুত করতে নতুন কমিটির নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে এমনটি মাথায় রেখেই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।

ইতিমধ্যে দলীয় সভানেত্রী সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে বাইরে নানামুখী আলোচনা থাকলেও এ নিয়ে নীতি-নির্ধারক পর্যায়ে কোন চিন্তা নেই। বিশ্বস্ত এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার বিবেচনায় দলীয় সভানেত্রীর আস্থাভাজন হিসেবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামই এ পদে থাকছেন এটি অনেকটাই নিশ্চিত। সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ আশরাফের বিকল্প নিয়ে এখনই ভাবা হচ্ছে না বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। যদিও প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, মোহাম্মদ নাসিম, ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে আলোচনা আছে বাইরে। তবে তাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের আগ্রহের বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু জানা যায়নি।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের তিনটি পদের মধ্যে পরিবর্তন আসতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। এর মধ্যে মাহবুবুল আলম হানিফ একই পদে থাকছেন এটি প্রায় নিশ্চিত। বাড়তি হিসেবে তাকে দলের মুখপাত্রেরও দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। বাকি দু’টি পদের একটিতে পরিবর্তন আসতে পারে। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজীম আহমেদ সোহেল তাজকে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হতে পারে এমন আলোচনা আছে। তবে এটি নির্ভর করছে তার ইচ্ছার উপর।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার ছেলে রেদোয়ান সিদ্দিক ববিকে নিয়েও আলোচনা আছে দলে। সজীব ওয়াজেদ জয়কে রংপুরে ইতিমধ্যে দলের প্রাথমিক সদস্য করা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের কোন দায়িত্বে নেই। জয় নানাভাবে দলকে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছেন। একইভাবে ববিও দলের গবেষণা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত। দলের অনেকে চাইছেন তারা সরাসরি দলের দায়িত্ব পালন করুক। যদিও এ নিয়ে নীতি-নির্ধারক পর্যায়ে আলোচনা নেই। আগামী কাউন্সিলে তারা কোন দায়িত্ব পাচ্ছেন কিনা এটি নির্ভর করছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের ওপর।

দলের সাত সাংগঠনিক সম্পাদকরা দায়িত্ব পালন করছেন দ্বিতীয় মেয়াদে। এ সাত সাংগঠনিক সম্পাদকের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন হচ্ছে। দক্ষতা বিবেচনায় তাদের দু’-একজনের পদোন্নতি হতে পারে। পদ শূন্য হলে এক্ষেত্রে আসতে পারেন নতুন মুখ। এছাড়া কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগ ধরে সাংগঠনিকের আরও তিনটি নতুন পদ সৃষ্টি করা হতে পারে গঠনতন্ত্রে। এক্ষেত্রে ওই তিন অঞ্চল থেকে তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে উঠে আসতে পারেন।

এছাড়া দলের তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদকের পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ পদে এ খাতে দক্ষ ও অভিজ্ঞ তরুণ নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হবে। এ পদে একজন প্রতিমন্ত্রীসহ কয়েকজনের নাম আলোচনায় আছে। প্রেসিডিয়ামেরও কিছুটা রদবদল হতে পারে। এক্ষেত্রে সম্পাদকমন্ডলী থেকে সিনিয়র কয়েকজন স্থান পেতে পারেন। এছাড়া দলের গঠনতন্ত্রে মুখপাত্রের পদের বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই। এ কারণে একেক সময় একেক নেতা দলীয় বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন। এ বিষয়ে স্পষ্টীকরণ করে গঠনতন্ত্রে মুখপাত্রের স্থায়ী পদের উল্লেখ করা হতে পারে। এক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাই দলীয় বিষয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হবেন। এদিকে নতুন কমিটিতে স্থান পেতে ইতিমধ্যে নেতাদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। তারা নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দলের শীর্ষ পর্যায়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। তাদের মধ্যে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা এগিয়ে রয়েছেন। দলের একটি সূত্র বলছে, তরুণ এসব নেতাদের মধ্যে কয়েকজনকে এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেয়া হচ্ছে।

নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৯:২৬ পিএম, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, শুক্রবার

এমআরআর  

Share