কচুয়ায় ঘূর্ণিঝড়ে পড়া গাছ নিয়ে শত্রুতা

কচুয়ায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কবলে পড়ে যাওয়া গাছ নিয়ে শত্রুতা জেরে গাছ উদ্ধারের অভিযোগ করেছে এক অসহায় পরিবার। এছাড়া সম্পত্তি সংক্রান্ত ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মামলা ও হামলার হয়রানি হতে বাঁচতে চায় ওই পরিবারটি। উপজেলার গোহট দক্ষিণ ইউনিয়নের উচিতগাবা ভূঁইয়া বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ওই গ্রামের মৃত খলিলুর রহমান দুই বিয়ে করেন। উভয় সংসারের ৮ সন্তান রেখে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। প্রথম পরিবারে ২ ছেলে, ২ মেয়ে এবং দ্বিতীয় পরিবারে ৩ ছেলে, ১ মেয়ে রয়েছে। দুই পরিবারের মধ্যে বড় সন্তান স্থানীয় রহিমানগর বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ মোস্তফা ভূঁইয়া বাবার মৃত্যুর পর দায়িত্ব নিয়ে সকল ভাইবোনদের বড় করেন। আপন এবং সৎ উভয় ভাইবোনদের কখনো অবহেলার লেশমাত্র দেখাননি। দুই পরিবারের সকল ভাইবোনদের দেখভাল করতে গিয়ে নিজে একটু সুখের দেখা পাননি। ভাই বোনেরা বড় হয়ে তার সকল ত্যাগ ভুলে গিয়ে সম্পত্তি সহ পারিবারিক নানা দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়েন। আপন ছোট ভাই ও সৎ ভাইদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গত ৩ বছর যাবত পুরনো বাড়ি ছেড়ে নতুন বাড়িতে অবস্থান করছেন মোস্তফা ভূঁইয়া। এতেও কোন সার উদ্ধার হয়নি।

স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তির ছত্রছায়ায় ভাইয়েরা মিলে প্রতিনিয়ত তাকে নানা ধরনের হয়রানির মুখে ফেলছেন। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড়ে তার নিজস্ব সম্পত্তিতে থাকা একটি গাছ উপড়ে পড়লে নতুন করে সমস্যার ঝট বাঁধে। গাছটি সৎ ভাই রেফায়েত হোসেনের রান্না ঘরের উপর পড়লে তিনি গাছটি কেটে সরিয়ে ফেলতে যান। তখন ওই গাছটি পড়ে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা সহ আনুষাঙ্গিক খরচ দাবি করেন তার ভাই। মোস্তফা ভূঁইয়া স্থানীয় লোকদের মাধ্যমে বেশ ক’বার চেষ্টা করেও বিষয়টি সুরাহা করতে পারেননি। পূর্বের ন্যায় গাছকে পুজিঁ করে পারিবারিক সকল বিরোধ মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠে। প্রতিনিয়ত হুমকী ধমকী সহ প্রাণনাশের আশংকায় রয়েছে পরিবারটি। ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার পারিবারিক নানাবিধ বিষয়ে মারধর ও হামলা মামলার ঘটনা ঘটেছে তাদের। স্থানীয় ভাবে অনেক চেষ্টার পরও সমস্যা থেকে মুক্তির পথ মিলেনি।

ক্ষতিগ্রস্থ মোস্তফা ভূঁইয়া জানান, আমি আমার বাবার দুই পরিবারের ৮ সন্তানের সবার বড়। বাবার মৃত্যুর সকল ভাইবোনদের আমি মানুষ করার চেষ্টা করেছি। বোনদের নিজ খরচে বিবাহ দিয়েছি। ভাইদের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আজকে আমি তাদের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করে সকলের রোষানলে পড়ে গিয়েছি। যাদের জন্য শরীরের রক্ত পানি করে নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে তাদের ভালো থাকার ব্যবস্থা করেছি। আজকে তারাই আমাকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি ও হামলা মামলা করে মেরে ফেরার চেষ্টায় উঠেপড়ে লেগেছে। আমার আপন ছোট ভাই বেলায়েত হোসেনকে বিদেশ পাঠানো ও তার প্রথম স্ত্রীর সাথে পারিবারিক কলহ সৃষ্টির কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের সময় দেয়া সকল টাকা ও বিভিন্ন সময়ে আমার কাছ থেকে নগদ হাওলাত নেয়া টাকা নিয়ে মূল বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। সৎ ভাইয়েরা বাবার পৈত্রিক কিছু সম্পত্তি আমার কাছে বিক্রয় করে। অদ্যাবদি ওই সম্পত্তি রেজিষ্ট্রি কিংবা আমার দেয়া টাকা কিছুই ফেরত দিচ্ছে না। আমার আপন ছোট ভাই ও সৎ ভাইয়েরা মিলে আমার টাকা পয়সা আত্মসাৎ করা এবং বাবার সম্পত্তি হিস্যা অনুপাতে পাওয়ার অতিরিক্ত সম্পত্তি জোর পূর্বক দখল করার কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের পারিবারিক বিরোধ শুরু হয়েছে। আমি ন্যায্য দাবি থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তাদের পিছনে সারাজীবনের যা ব্যয় করেছি তা ফেরত চাইলে শরীরের রক্ত বিক্রি করে পরিশোধ করতে পারবে না। শুধু মাত্র তারা বড় হয়ে আলাদা হওয়ার পর তারা যে অর্থ ও সম্পত্তি নিয়েছে তা ন্যায্য ভাবে পেতে চাই।

মোস্তফা ভূঁইয়ার সহদোর বোন খালেদা বেগম জানান, আমাদের বড় ভাই মোস্তফা কখনও দু’পরিবারের কাউকে পর ভাবেনি। আমাদের সকলকে সমান চোখে দেখে আসছে। বাড়িতে তারা কি নিয়ে ঝামেলা চলছে তা আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে মোস্তফা ভূঁইয়ার সৎ মা জীবন নেছা জানান, আমি কখনো দুই পরিবারের কোন সন্তানকে আলাদা চোখে দেখিনি। সবাই আমার নিজের সন্তানের মতো। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আমার ছোট ছেলের ঘরের উপর মোস্তফার গাছ পড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বড় ভাই হয়ে মোস্তফা ছোট ভাইদের সব সময় অসহযোগিতা করেছে। সে সকলের বিষয়ে মিথ্যাচার করছে। পুরনো বাড়িতে থাকতে কিছু সমস্যা হলেও নতুন বাড়িতে যাওয়ার পর তেমন কোন সমস্যা হচ্ছে না। তবে মাঝে মধ্যে ভাইয়ে ভাইয়ে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মারধর ও ঝগড়া হতো।

এ ব্যাপারে রেফায়েত হোসেনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

আপন ছোট ভাই ও সৎ ভাইদের নানাবিধ , অন্যায় জুলুম ও সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার হাত থেকে মুক্তি পেতে মোস্তফা ভূঁইয়া ও তার পরিবার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

কচুয়া প্রতিনিধি, ২০ নভেম্বর ২০২২

Share