Home / শীর্ষ সংবাদ / চাঁদপুরের মেয়ে অতিরিক্ত আইজিপি রৌশন আরার অকাল মৃত্যুতে দেশজুড়ে শোক
rowshonara-police

চাঁদপুরের মেয়ে অতিরিক্ত আইজিপি রৌশন আরার অকাল মৃত্যুতে দেশজুড়ে শোক

চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার কৃতি সন্তান, দেশের প্রথম সাবেক নারী পুলিশ সুপার ও বাংলাদেশ পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি রওশন আরা বেগম, পিপিএম, এনডিসি আর নেই। তিনি সোমবার (৫ মে) স্থানীয় সময় সাড়ে ৬ টায় কঙ্গো মিশন পরিদর্শনকালে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন (ইন্না…রাজিউন)।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (মিডিয়া) বেলুলুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়, কঙ্গোয় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনের মেডেল প্যারেডে অংশ নিতে গিয়েছিলেন রৌশন আরা বেগম। দেশটির কিনশাসা নামক স্থানে স্থানীয় সময় রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় একটি লরির সঙ্গে ধাক্কা লেগে রৌশন আরা বেগম নিহত হন।

এ সময় রৌশন আরা বেগমকে বহনকারী গাড়ির চালকসহ বাকি দুইজন আহত হন। আহতদের মধ্যে পুলিশের এসপি (কমান্ডার) ফারজানাও রয়েছেন। পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন রৌশন আরা।

রৌশনআরা চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার রায়শ্রী উত্তর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের শেখ বাড়ির কৃতি সন্তান। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম পাটওয়ারী (লিটন) চাঁদপুর টাইমসকে নিশ্চিত করে জানান, তাঁর পিতা মাতা বা পরিবারের কেউ গ্রামের বাড়িতে থাকেন না ঢাকায় থাকেন। তবে তাঁর আত্মীয়-স্বজন অনেকেই গ্রামের বাড়িতে বসবাস করেন।

পুলিশের মিডিয়ার বিভাগ সূত্রে জানা যায় রৌশনারা ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের অত্যন্ত চৌকস, মেধাবী, সৎ, দক্ষ এবং জনবান্ধব কর্মকর্তা। তিনি বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করেন রৌশন আরা বেগম। মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ঢাকায় শিক্ষানবিস সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এরপর রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমি, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৪ সালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে কক্সবাজারে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর একই পদে টাঙ্গাইল, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন।

চাঁদপুর পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির জানিয়েছেন, রৌশন আরা ১৯৯৮ সালের ৩ ডিসেম্বর পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে মুন্সীগঞ্জে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর তিনি অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে পদোন্নতি পান। বাংলাদেশের প্রথম নারী পুলিশ সুপার (জেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত)। বাংলাদেশ নারী পুলিশ নেটওয়ার্কের সাবেক প্রধান ছিলেন তিনি।

তিনি কসাভোতে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষী মিশনে অপরাধ বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করেছেন। সুদানেও কাজ করেছেন রৌশন আর বেগম।

এই মেধাবী পুলিশ কর্মকর্তা দেশের বাইরে যুক্তরাজ্যের পুলিশ স্টাফ কলেজ, ব্রামশিল থেকে স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং কোর্স এবং লিডারশিপ কোর্স ফর ফিমেললিডার’স ইন ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি কোর্সে অংশগ্রহণ করেন।

পুলিশ বাহিনীতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দুইবার আইজিপি ব্যাচপ্রাপ্ত হন এবং বাংলাদেশ সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুলিশ পদক ‘পিপিএম’ লাভ করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার থাকাকালীন ‘অনন্যা শীর্ষ দশ-১৯৯৮’ পুরস্কার ও ২০১২ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশের স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০১২ লাভ করেন।

রাজধানী ঢাকার মগবাজারের সাবেক টিএন্ডটি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ভিকারুননিসা-নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন রৌশন আরা। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসএস (অনার্স), এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ফাতেমা স্যারের পরে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের দ্বিতীয় শীর্ষ নারী কর্মকর্তা। নারীর ক্ষমতাতায়নে তিনি ছিলেন অন্যতম পথিকৃৎ।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনাব রৌশন আরা বেগমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

এছাড়া চাঁদপুরের আরেক কৃতি সন্তান ও বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রৌশন আরা বেগমের মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট
৬ মে ২০১৯