Home / সারাদেশ / দেশে এমপিওভুক্ত হচ্ছে ১,৭৬৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
কার্যক্রম শুরু
প্রতীকী ছবি

দেশে এমপিওভুক্ত হচ্ছে ১,৭৬৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

দেশের ১হাজার ৭ শ’৬৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামি ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেই তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো.সোহরাব হোসাইন।

মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে ১ হাজার ৭ শ’৬৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের প্রস্তুত করা এ নথি শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনির কাছে পেশ করা হয়েছে। মন্ত্রীর অনুমোদন মিললে এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে বলে সংশ্লিষ্ঠ সুতে জানা গেছে।

২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৮ শ ৬৫ কোটি টাকা। ১ হাজার ৭ শ’৬৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হলে তাতে ব্যয় হবে ৭৯৬ কোটি ৪৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। বাকি ৬৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা মন্ত্রণালয়ের হাতে উদ্বৃত্ত থাকবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সারাদেশের মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার জন্য পৃথকভাবে কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। আগামি দু-একদিনের মধ্যে এ তালিকাও চূড়ান্ত হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন কালে এমপিওভুক্তির তালিকায় আরো কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যুক্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান আরো বাড়বে।

যে ১ হাজার ৭ শ ৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে এমপিওভুক্তির সব শর্তপূরণ করে বাছাইয়ে টিকেছে ১ হাজার ৬ শ’৪৯টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বুয়েটের তৈরি করা বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়েছে।

এমপিওভুক্তির নীতিমালা-২০১৮-এর ১৪ ধারা অনুযায়ী-এসব প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান বাছাই করার পর দেখা যায় সারাদেশের ৮৯টি উপজেলার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। সমতার স্বার্থে এসব উপজেলায় এমপিওভুক্তির নীতিমালার ২২ নম্বর ধারা প্রয়োগ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।

এ ধারায় বলা হয়েছে,‘শিক্ষায় অনগ্রসর,ভৌগোলিকভাবে অসুবিধাজনক,পাহাড়ি, হাওর-বাঁওড়, চরাঞ্চল, নারী শিক্ষা,সামাজিকভাবে অনগ্রসর গোষ্ঠী,প্রতিবন্ধী,বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় শর্ত শিথিল করা যেতে পারে।`

নীতিমালার এ ধারা প্রয়োগ করে ৮৯টি উপজেলার মধ্যে এমপিওভুক্তির শর্ত পূরণে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য হিসেবে বাছাই করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মানদণ্ড হিসেবে শিক্ষার্থীর সংখ্যা নূ্নতম ১০০ জন এবং কমপক্ষে দু’ বছরের স্বীকৃতি থাকার বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। বাদপড়া প্রতিটি উপজেলা-থানা থেকে একটি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হয়েছে। এ মানদণ্ডে ৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়েছে।

বিশেষ বিবেচনায় বাছাই করা হয়েছে কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ছিটমহলের একমাত্র স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান `মইদাম কলেজ`-যেটির ছাত্র সংখ্যা ৮৫ জন। ২২ ধারা প্রয়োগ করে ৬১ টি প্রতিষ্ঠানকে তালিকায় স্থান দেয়া হয়েছে।

এছাড়া দেশের দুর্গম ও পার্বত্য এলাকা,পাহাড়ি, হাওর-বাঁওড়, চরাঞ্চল এবং উপকূলীয় এলাকায় নীতিমালার ১৪ ধারা অনুসারে এমপিওভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি এমন ৫৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৫শ জন বা তার বেশি এবং কমপক্ষে দু’বছরের স্বীকৃতি থাকার শর্ত পূরণ করতে হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাদপড়া ৮৯টি উপজেলায় ২২ ধারা প্রয়োগ করে ৬১টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার পরও ২৯টি উপজেলা ও থানা বাদ থেকে যায়- যেগুলোর মধ্যে উপজেলা ১২টি ও থানা ১৭টি। এ ১২ উপজেলার ৭ টি থেকে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়েছে। যোগ্য না হওয়ায় অপর ৫ টি উপজেলার কোনো প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। দেশের ২৩টি উপজেলা-থানা এলাকা থেকে এমপিওভুক্তির জন্য এ বছর কোনো আবেদনই পাওয়া যায়নি।

নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সর্বশেষ এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল ৮ বছর আগে ২০১০ সালের ১৬ জুন। সারাদেশের ১ হাজার ৬ শ’৯টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে (স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা ও কারিগরি) এমপিওভুক্তি করা হয়। সাড়ে ১৩ হাজার বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী তখন সরকারি বেতনের আওতায় এসেছিল। বর্তমানে সারাদেশের সাড়ে ৮ হাজার নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

জানা গেছে-সারাদেশে এমপিওভুক্তির জন্য চূড়ান্ত করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫শ’৫১টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১ হাজার ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬৭টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ৯৪টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ এবং ৫৩টি ডিগ্রি (অনার্স-মাস্টার্স) পর্যায়ের।

এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন জমা পড়েছিল ৬ হাজার ১শ’৪১টি। যাচাই-বাছাই শেষে সব শর্তপূরণ করে অথবা বিশেষ বিবেচনায় যোগ্য হয়েছে ১ হাজার ৭ শ ৬৭টি। এমপিওভুক্তির জন্য অযোগ্য বিবেচিত হয়েছে ৪ হাজার ৪ শ’৯২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো.সোহরাব হোসাইন বলেন,‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন এমপিও দেয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। যে কোনো সময় তা ঘোষণা করা হবে। নীতিমালা অনুযায়ী-যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে সে সব প্রতিষ্ঠানই এমপিও পাবে। মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। অবশ্য কতগুলো প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেয়া হবে সে বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে চান নি।’

বার্তা কক্ষ
২ আগস্ট ২০১৯

এজি