“আপু, আমার একজন বয়ফ্রেন্ড আছে। ও খুব কেয়ারিং, বয়স কম হওয়ার পরও। সে আমার খুব খেয়াল রাখে, আমার পাশে থাকে সবসময়। ও আমার জন্য এমন অনেক কিছুই করে যা অন্য প্রেমিকেরা করে না।
ওর সাথে রিলেশন জানার পর আমার আমার পরিবার খুব ঝামেলা হয়। কারণ তাঁরা চায় আমি অনেক ভাল কাউকে বিয়ে করি।
রিলেশন জানার পর পারিবারিক কারণে আমি অনেক কষ্ট পাই। তখন অনেক সম্ভাবনা ছিল প্রেমিক আমাকে ছেড়ে দেওয়ার, কারণ তখন আমাদের রিলেশনের বয়স মাত্র কয়েক মাস। কিন্তু সে তা করেনি।
আপু বলতে লজ্জা লাগছে, কিন্তু অনেক সময় কাছাকাছি থাকার ফলে আমাদের মাঝে অনেক কিছু হয়েছে। ও বলে, আর যাই করি বিয়ের আগে এটা করব না। কিন্তু ও চাইলেই অনেক কিছু করতে পারতো। সবসময় বলছে আমিও চাইনা তোমার ইচ্ছার বাইরে কিছু করতে।
সবই ঠিক আছে কিন্তু সমস্যা হল, ওর লেখাপড়া শেষ হয়েছে বাট সে নিজের ক্যারিয়ারের ব্যাপারে খুবই অচেতন। কিছু করে না। চেষ্টাও নেই। আর সব থেকে বড় কথা কিছু নিয়ে রেগে গেলে মাথা ঠিক থাকেনা।
অল্পতেই রেগে যায়, খুবই রাগারাগি করে, বকা দেয়। যা আমি কোনভাবেই মানতে পারিনা। অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু যা তা-ই। আর সে খুব বন্ধু পাগল। বন্ধু বান্ধবীদের সাথে খুব মেলামেশা করে। আমি ওর বান্ধবীদের সাথে মেলামেশাও মেনে নিতে পারি না। ওর একজন বান্ধবী আছে, তাঁর উদ্দেশ্য আমার মোটেও ভালো লাগে না কিন্তু সেই মেয়েটি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। কী করব এখন?
ওর আরও একটা সমস্যা আছে, ও সব কথা আমার কাছ থেকে লুকায়। মনে হয় যেন অনেক কিছুই ও আমাকে বলছে না। আমি শুনেছি যে সে আজকাল নেশা করতেও শুরু করেছে। সিগারেট খায়, ফেনসিডিল আর ইয়াবাও খায় শুনেছি। ওই মেয়েটিই তাঁকে এই পথে নিয়ে গেছে। অন্তত আমার তাই মনে হচ্ছে।
এখন আমার কী করা উচিত আপু একটু বলবেন প্লিজ। ওর এই জিনিসগুলো আমাকে অনেক কষ্ট দেয়। কিন্তু আমি নিশ্চিত ও আমাকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু মেয়েটিকে আমার সহ্য হয় না।
পরামর্শ:
তোমার চিঠি পড়ে মনে হচ্ছে ছেলেটি তোমাকে বেশ ভালোবাসে। এবং তোমার প্রতি তাঁর ভালোবাসা সৎ। তবে তোমাদের বয়স খুবই কম, আমি পরামর্শ দেব এখনোই বিয়ের কথা ভাববে না। যাই হোক, বেশী রাগ করা বা ক্যারিয়ার সচেতন না হওয়া আসলেই বেশ বড় একটি সমস্যা। এই রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য তোমরা মনরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করতে পারো। নিয়মিত থেরাপি নিলে ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। অতিরিক্ত রাগ এক রকমের মানসিক সমস্যাই। টাকা খরচে অসুবিধা থাকলে অনেক স্থানেই ফ্রি কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা আছে। একটু খোঁজখবর করে সেখানে যেতে পার।
আর ক্যারিয়ারের ব্যাপারটি হাতে তুলে নিতে হবে তোমাকেই। তুমি তাঁকে খুব ভালো করে বোঝাবে যে ক্যারিয়ার না হলে তোমাকে পাওয়া সম্ভব নয়। তুমি চাও ওর হাত ধরে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে। তাই ছেলেমানুষি ত্যাগ করে সিরিয়াস হতেই হবে। পাশপাশি তুমি নিজে ক্যারিয়ার নিয়ে খুবই সিরিয়াস হয়ে ওঠো। তাহলে দেখবে চক্ষুলজ্জায় পড়ে সেও হয়ে উঠবে। থেরাপি নেয়ার সময় এই সমস্যাটির কথাও বলবে।
তোমার প্রেমিক এখনো অনেক ছেলে মানুষ, ওর ম্যাচিউর হতে সময় লাগবে। এই সময়টি তোমার ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতেই হবে আপু। তুমিই পারবে জীবনের প্রতি ওকে সিরিয়াস করে তুলতে। তবে সেটা একদিনে হবে না, একটু একটু করে হবে। তুমি নিজের ছোট খাট অনেক প্রয়োজনের দায়িত্বই আস্তে আস্তে ছেলেটিকে দিয়ে দিতে শুরু করো। দেখবে সে আস্তে আস্তে উপার্জন করার গুরুত্ব অনুভব করতে শুরু করবে।
আর আপু, বান্ধবীদের সাথে মেলামেশা তো খারাপ না। খালি ব্যাপারটা বিপদজনক না হলেই হলো। আর ওই মেয়েটির কাছ থেকে ওকে দূরেই রেখো। তোমাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়লে কথা লুকানোও আর থাকবে না, মেয়েটিও দূরে চলে যাবে। আর খুব ভালো করে খোঁজ নাও যে সে আসলেই নেশা করে কিনা। শোনা কোথায় কান দেবে না। যদি তেমন কোন প্রমাণ পাও, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসার ব্যবস্থা করো। সম্ভব হলে তাঁর পরিবারকেও জানাও।
।। ০৪:৩০ এএম, ২৭ নভেম্বর ২০১৫, শুক্রবার
ডিএইচ