বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড.আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘ দেশের ব্যাংক খাতের তদারকি ব্যবস্থা আরও দক্ষ, কার্যকর ও আধুনিক করে তোলার জন্য ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সকল ব্যাংকে ‘রিস্ক বেসড সুপারভিশন’ (আরবিএস) ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ।’
তিনি বলেন, ‘আরবিএস কাঠামোর প্রাথমিক পর্যায়গুলো বেশ কয়েকটি ব্যাংকের সাথে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। ২০২৫ সালের জুলাইয়ের মধ্যে ৬১টি তফসিলি ব্যাংকে পাইলট প্রোগ্রামের অধীনে একটি সম্পূর্ণভাবে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১ জানুয়ারি,২০২৬ থেকে সকল তফসিলি ব্যাংকে আরবিএস বাস্তবায়ন করবে।’
আজ রাজধানীর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান এসব কথা বলেন। আহসান এইচ মনসুর বলেন, দক্ষতা বৃদ্ধি,তদারকি জোরদার এবং আন্তর্জাতিক বেস্ট প্র্যাকটিসেস-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য আনার করার লক্ষ্যে ব্যাংক তদারকির জন্য নিয়ন্ত্রক কাঠামোর একটি বড় ধরনের পুনর্গঠন ঘোষণা করতে পেরে বাংলাদেশ ব্যাংক আনন্দিত।
তিনি আরো বলেন, পলিসি ডকুমেন্টেশন, রিস্ক ম্যাট্রিক্স এবং মডেল সুপারভাইজারি রিপোর্ট সহ একটি পূর্ণাঙ্গ আরবিএস ফ্রেমওয়ার্ক তৈরির কাজ চলছে। এই কাঠামো ঋণ, বাজার, পরিচালনা, আইনি, নিয়ন্ত্রক এবং কৌশলগত ঝুঁকির মতো ঝুঁকিগুলো মোকাবেলার জন্য আরও লক্ষ্য ভিত্তিক ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, আরবিএস কাঠামো বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি বিস্তৃত সাংগঠনিক পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এর আওতায় গঠিত হতে যাচ্ছে ব্যাংক ফোকাস টিমের সমন্বয়ে একাধিক ব্যাংক সুপারভিশন বিভাগসহ বিশেষায়িত বিভাগ যেমন সুপারভিশন পলিসি ও কো-অর্ডিনেশন বিভাগ, সুপারভাইজরি ডেটা ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স বিভাগ, টেকনোলজি রিস্ক অ্যান্ড ডিজিটাল ব্যাংকিং সুপারভিশন বিভাগ ও মানিলন্ডারিং অথবা টেরোরিস্ট ফাইন্যান্সিং রিস্ক সুপারভিশন বিভাগ।’
এই রূপান্তর কার্যকর করতে বিভাগীয় পুনর্বিন্যাস ও প্রয়োজনীয় লজিস্টিক ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় এবং শাখা-স্তরের ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা, বিশেষজ্ঞ পুল এবং ব্যাংক তত্ত্বাবধায়কদের জন্য টার্গেটেড প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে । এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও আইএফসি- এর সহায়তায় উন্নত প্রশিক্ষণ, কারিগরি সহায়তা ও জ্ঞান বিনিময় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সকল তফসিলি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকেও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।
তিনি আরও বলেন,একটি নতুন রেশনালাইজড ইনপুট টেমপ্লেট এবং একটি কেন্দ্রীভূত তত্ত্বাবধান ড্যাশবোর্ড প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা তথ্য ভিত্তিক সুপারভিশন বাস্তবায়নে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। এসব উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো বিদ্যমান ব্যবস্থাগুলো একীভূত করে একটি কেন্দ্রীয় সুপারভাইজারি ডাটা ম্যানেজমেন্ট প্লাটফর্ম গড়ে তোলা,যা তথ্য বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে।
তিনি বলেন,আরবিএস ফ্রেমওয়ার্কের প্রাথমিক ধাপ কিছু নির্বাচিত ব্যাংকে পাইলট পর্যায়ে সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। জুলাই ২০২৫ থেকে দেশের ৬১টি তফসিলি ব্যাংকে এর বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
একটি স্ট্যান্ডার্ড সুপারভিশন চক্র প্রবর্তন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যার আওতায় থাকবে রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট, প্ল্যানিং, সুপারভাইজরি এনগেজমেন্ট, ইন্টারভেনশন এবং ফলো-আপ কমিউনিকেশন। এই কাঠামো সুপারভিশন কার্যক্রমে সামঞ্জস্যতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করবে।
উল্লেখ্য, আরবিএস-এর কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট নির্বাহী পরিচালক এবং পরিচালকদের অংশগ্রহণে আজ একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পুনর্গঠন কার্যক্রম ও বাস্তবায়ন সময়সূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ পুনর্গঠনের বিষয়টি সকল তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে।
তিনি বলেন,এ রূপান্তর দেশের ব্যাংকিং খাতে জবাবদিহিমূলক ও ঝুঁকি সচেতন সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা,সুপারভিশনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তি-ভিত্তিক উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করবে। আমরা বিশ্বাস করি,এ উদ্যোগ দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা সুসংহত করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এ গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর যাত্রায় সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে এবং ভবিষ্যতেও সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
৮ জুলাই ২০২৫
এজি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur