শরীয়তপুরের জাজিরার আলোচিত লিটন বেপারী হত্যা মামলায় ১১ জনকে যাবজ্জীবন ও দুইজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. তারিক এজাজ এ রায় দেন।
ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পেশকার মো. আমিনুল ইসলাম হিরণ।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মজিবর মাদবর, আওলাদ মাদবর, সুজন মাদবর, মোকাদ্দেস মোল্লা, রবুল্লা মাদবর, আব্বাস মাদবর, জলিল খা, এস্কেন্দার মোল্লা, চাঁন মিয়া মাদবর, মকবুল মাদবর ও আল আমিন মাদবর।
তিন বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত নুরুল আমিন খা আটক রয়েছেন। এক বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মনির মোল্লা পলাতক রয়েছেন। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে শেষের ছয়জন পলাতক রয়েছেন।
আদালত ও মামলার বাদী সূত্রে জানা যায়, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ২০১০ সালের ৯ মার্চ দুপুর ১২টার দিকে জাজিরা পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের রাড়ীপাড়া গ্রামের শামছুল মাদবরের বাড়ির সামনে জলিল খা, এসকান্দার মোল্লা, চান মিয়া মাদবর গংরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে লিটন বেপারীকে (৩০) আহত করেন। ঘটনার তিন দিন পর লিটন বেপারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা ৬টার দিকে মারা যান। নিহত লিটন বেপারী রাড়ীপাড়া এলাকার মৃত আবু সিদ্দিক বেপারীর ছেলে। ঘটনার সময় লিটন বেপারীর স্ত্রী সাবানা ৮ মাসের গর্ববতী ছিলেন।
এ ঘটনায় জাজিরা থানায় বাদী হয়ে ৩৩ জনকে আসামি করে মামলা করেন লিটন বেপারীর ভাই মতিউর রহমান। কিন্তু মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ আরও দুইজনকেসহ মোট ৩৫ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেয়। ৩৫ জন আসামির মধ্যে মামলার রায়ে ২২ জনকে খালাস দেন আদালত। ১১ জনকে যাবজ্জীবন ও দুইজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বাবা লিটন বেপারীর হত্যাকাণ্ডের সময় মায়ের গর্ভে ছিল রাতুল বেপারী। জন্মের পর বাবাকে না দেখলেও বাবার হত্যাকারীদের দেখতে আদালত প্রাঙ্গণে এসেছে ১৩ বছরের শিশু রাতুল বেপারী।
রাতুল বেপারী ঢাকা পোস্টকে বলে, জন্মের পর বাবা ডাকতে পারিনি আমি। বাবাকে ছুঁয়ে দেখতে পারিনি। আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে তাদের দেখে ঘৃণা জানাতে এসেছি। আদালত বাবার হত্যাকারীদেরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। কিন্তু আমি উচ্চ আদালতে বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।
মামলার বাদী মতিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, যারা আমার ভাইকে দিনেদুপুরে কুপিয়ে হত্যা করেছে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এই রায়ে প্রাথমিকভাবে আমি খুশি। উচ্চ আদালতে যেন এই রায় বহাল থাকে সেই দাবি জানাই।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, লিটন বেপারী ঘটনার তিন দিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। আদালতের রায়ে আসামিরা সন্তুষ্ট নন। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মির্জা হযরত আলী বলেন, দীর্ঘ এক যুগ পর আলোচিত লিটন বেপারী হত্যার রায় দিয়েছেন আদালত। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ খুশি। আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে গেলে আমরা জবাব দেব।
টাইমস ডেস্ক/ ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur