কয়লা সংকটের কারণে আজ সোমবার (৫ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় বন্ধ হয়ে গেল পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি শুরু হওয়ার পর থেকে এই প্রথম পুরোপুরি বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়েছে। কয়লা সংকটে ২৫ মে একটি ইউনিট বন্ধ হলেও অবশিষ্ট ইউনিট আজ বন্ধ হয়ে গেল।
এতে পটুয়াখালীসহ সারাদেশে ভয়াবহ লোডশেডিং দেখা দিয়েছে। এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সমগ্র বরিশাল, খুলনা ও ঢাকার বেশ কিছু অংশের বিদ্যুতের নির্ভরযোগ্য উৎস ছিল।
এদিকে পটুয়াখালীতে লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাতের বেলা চার থেকে পাঁচ বার লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ১৩ হাজার থেকে সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে প্রায় ১২ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ৩ হাজার ৪৪০ মেগাওয়াটের বিপরীতে গড়ে ২ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করছে। আর পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৭০০ থেকে ১ হাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে থাকে। এতে প্রতিদিন ১২ হাজার টনের বেশি কয়লা পোড়ানো হচ্ছে।
জানা যায় যে, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ও চীনের সরকারি প্রতিষ্ঠান সিএমসির মাধ্যমে এতদিন পরিচালনা হয়ে আসছিল। পরে দুই প্রতিষ্ঠানের সমান মালিকানায় বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) নামে আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। বিগত দিনে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ৬ মাস বাকিতে কয়লা দিয়েছে সিএমসি। পরে আরও ৩ মাসের বকেয়াসহ ৯ মাসে এই বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে অন্তত ৩৯ কোটি ডলার। এই বকেয়া ডলার সংকটের কারণে পরিশোধ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। যে কারণে চীন থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ডলার সংকট মেটাতে কয়েক দফা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেও সমাধানে আসতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা।
বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ওজোপাডিকো পটুয়াখালী নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, পটুয়াখালী জেলায় প্রতিদিন ১০ থেকে ১৩ ইউনিটের বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় সেখানে আমরা প্রতিদিন গড়ে ১০ ইউনিটের মত বিদ্যুৎ পেয়ে থাকি এজন্য লোডশেডিং হচ্ছে। চাহিদা মত বিদ্যুৎ পাওয়া গেলে তাহলে আর লোডশেডিং হবে না।
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহ আব্দুল হাসিব বলেন, কয়লা সংকটের কারণে দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। তবে ডলার সংকটের কারণে এই কয়লার সংকট দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কয়লা আনার জন্য এলসি খোলা হয়েছে। আশা করছি এই মাসের শেষের দিকে কয়লাবাহী প্রথম জাহাজ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে এসে পৌঁছাবে। তখন আবার পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হবে।
টাইমস ডেস্ক/৫ জুন ২০২৩