সারা দেশে মৃদু থেকে তীব্র দাবদাহ বইছে। প্রচণ্ড গরমে দেশে হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর খবরও পাওয়া যাচ্ছে। শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, দাবদাহে শিশু, বয়স্ক ও কোমরবিডিটি (বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি) রোগীরা বেশি বিপাকে পড়ছেন। তাদের পরিচর্যায় তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা জানান, এ মুহূর্তে দেশের উত্তরাঞ্চল দিয়ে যে বাতাস প্রবেশ করছে, তা কিছুটা জলীয় বাষ্প বয়ে আনছে। এতে বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঢাকার তাপমাত্রা ১৯৬৫ সালে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০১৪ সালে সর্বোচ্চ ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছিল।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বহির্বিভাগের মেডিসিন বিভাগের প্রধান আবাসিক চিকিৎসক (আরএস) শাইখ আবদুল্লাহ জানান, সারা দেশে কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা তীব্র আকার ধারণ করেছে। গরমে মানুষ হাঁসফাঁস করছে। অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ মানুষ হাসপাতালে আসছে। তাদের অনেকে হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা, হিটস্ট্রোক, বমি, ডায়রিয়া, অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টের কথা বলছেন। গলাব্যথা, কাশি, সর্দি ও ঘুমের সমস্যা বেড়ে যওয়ার কথাও বলছেন অনেকে।
ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, সারা দেশে কয়েকদিন ধরে চলা তীব্র গরমে যে কেউ যে কোনো সমস্যায় অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। কৃষক ও রিকশা চালকদের মতো যারা রোদে পুড়ে ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করেন তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও কিডনি বিকলসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, বয়স্ক ও শিশুরাও ঝুঁকিতে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তীব্র গরমে ডিহাইড্রেশন অর্থাৎ শরীরে পানিশূন্যতা বা স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে। অনেকের রক্তচাপ ও প্রস্রাব কমে যেতে পারে। গরমে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রির উপরে উঠলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া ও পালস (নাড়ির স্পন্দন) কমে যেতে পারে। এ সময় ঘরের বাইরে যতটা কম যাওয়া যায়, ততই ভালো। যারা প্রয়োজনে বাইরে যাচ্ছেন তারা পানির সঙ্গে একটু লবণ মিশিয়ে স্যালাইনের মতো করে খেতে পারেন। এতে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে বের হওয়া লবণের ঘাটতি পূরণ হবে। এছাড়া ঢিলেঢালা সুতি কাপড় পড়তে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফজলে রাব্বি বলেন, রোজার মাসে তীব্র দাবদাহে বড় সমস্যা হচ্ছে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা। ষাটোর্র্ধ্ব এবং ১০ বছরের কম বয়সিরা বারবার পানি পান না করলে ডিহাইড্রেশন অর্থাৎ শরীরে পানিশূন্যতা বেশি দেখা দিতে পারে। এতে শরীরের রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
কিডনি বিকল রোগীদের কিডনিতে চাপ পড়তে পরে। যারা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাচ্ছেন গরমে তাদের শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। প্রখর রোদে বেশি সময় বাইরে অবস্থান করলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। মাথা ঝিম ঝিম করা, মাথা ঘোরা, হার্টের ওপর চাপ তৈরি হয়ে কলাপস (রক্তচাপ কমে গিয়ে অজ্ঞান হওয়ার প্রবণতা) হতে পারে। মোটা বা স্থূল ব্যক্তিদের শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেড়ে গিয়ে সংকট তৈরি হতে পারে। তীব্র রোদে ত্বক পুড়ে যেতে পারে। ডায়রিয়া হতে পারে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ইফফাত আরা শামসা বলেন, ঋতু পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে শিশুদের চিকেন পক্স, মামসসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি হচ্ছে। গরমকালে ধুলাবালি বেড়ে যাওয়া শিশুদের অ্যাজমা ও কাশির প্রকোপ বেড়ে যায়। অনেকের ঘামাচি ও পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তবে আতঙ্কিত না হয়ে শিশুদের স্বাভাবিক পানি পান করাতে হবে। কাপড় ভিজিয়ে শিশুদের কিছুক্ষণ পরপর মুছে দিতে হবে। নিয়মিত গোসল করাতে হবে। রোদ এড়িয়ে চলতে হবে।
চিকিৎসকরা জানান, তীব্র গরমে অ্যাজমা রোগীদের ২৪ ঘণ্টায় অন্তত দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করতে হবে। অতিরিক্ত ঘামে ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স বা শরীরে লবণের ভারসাম্য কমে যেতে পারে। এতে স্থূল, কিডনি বিকল রোগী ও বয়স্কদের বেশি ঝুঁকি হতে পারে। ডায়াবেটিস, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, কেমোথেরাপি চলা ক্যানসার রোগী ও স্টেরয়েড ওষুধ সেবনকারীদের তাপপ্রবাহ এড়িয়ে চলতে হবে। হাঁপানি, অ্যালার্জি, রাইনাইটিস, গলাব্যথা, গলার প্রদাহ থাকলে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান থেকে বিরত থাকতে হবে। ছায়া-শীতল পরিবেশে থাকতে হবে।
টাইমস ডেস্ক/ ১৭ এপ্রিল ২০২৩
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur