বরগুনার শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির দেয়া জবানবন্দীই তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ক্ষেত্রে মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছেন আদালত।
মিন্নির দেয়া জবানবন্দীকে রাষ্ট্রপক্ষের অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিয়ে সমর্থিত করা হয়েছে। বহুল আলোচিত এ হত্যা মামলায় বরগুনা আদালতের দেয়া রায় পর্যালোচনায় এমন চিত্র উঠে এসেছে।
রায়ে বলা হয়েছে, মিন্নির সাথে স্বামী রিফাত শরীফের সম্পর্কের অবনতি ও মিন্নিকে মারধর করার জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ কারণেই মিন্নিকে ওই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। রায়ে মিন্নির বিরুদ্ধে একসাথে দু’জন স্বামীর সাথে সম্পর্ক রাখার বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে।
আসামি মিন্নি তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বলেন, আইডিয়াল কলেজে পড়ার সময় ভিকটিম রিফাত শরীফের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রিফাত শরীফের মাধ্যমে তার বন্ধু আসামি নয়ন বন্ডের সাথে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে নয়ন বন্ডের সাথেও তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
রায়ে আরো বলা হয়েছে, নয়ন বন্ডের সাথে মিন্নির বিয়ে হয় ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর। এই তথ্য গোপন করে ২০১৯ সালের ২৬ এপ্রিল রিফাত শরীফের সাথে বিয়ে হয় মিন্নির। রিফাত শরীফের সাথে বিয়ের পরও নয়ন বন্ডের সাথে মিন্নির সম্পর্ক অব্যাহত থাকে। এ নিয়ে রিফাত শরীফের সাথে মিন্নির মনোমালিন্য হয়। আসামি নয়ন বন্ডের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আসামি মিন্নির উপস্থিতির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করা হয়।
এ কারণে হেলালের মোবাইল ফোনসেট আনায় হেলালের বন্ধু আসামি রিফাত ফরাজী ও মিন্নির সাথে ভিকটিম রিফাত শরীফের ঝগড়া, মিন্নিকে মারধর (তলপেটে লাথি মারা) করার ঘটনা থেকেই রিফাত শরীফকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। বিভিন্ন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও মিন্নির দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর বরাত দিয়ে রায়ে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে যা বলা হয় :
এই মামলার ভিকটিম রিফাত শরীফকে খুন করার দায়ে আসামিরা সমানভাবে দায়ী। রায়ে বলা হয়েছে, আসামি মিন্নি এ ঘটনার পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা (মাস্টারমাইন্ড) এবং তার কারণেই রিফাত শরীফ নির্মমভাবে খুন হয়েছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে তার পদাঙ্ক অনুসরণে তার বয়সী মেয়েদের বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তাই এই মামলায় তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়।
প্রকাশ্য দিবালোকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড সংঘটনকারী আসামিরা প্রত্যেকে যুবক। তথ্য-প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে যুবসমাজসহ দেশ-বিদেশের সব বয়সের মানুষ ওই নির্মমতার ভিডিওচিত্র দেখেছেন। এমতাবস্থায় তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের যুবসমাজ ভুল পথে অগ্রসর হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তাই তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়।
রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত গত ৩০ সেপ্টেম্বর এক রায়ে নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন। পাশাপাশি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চারজনকে খালাস দেয়া হয়েছে। ৩ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।
বর্তমানে শিশু আদালতে জড়িত ১৪ অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামির বিচারকার্য চলছে। গতকাল রাষ্ট্রপক্ষের জেরা শেষ হয়েছে। আজ মঙ্গলবার থেকে শিশু অপরাধী পক্ষের জেরা শুরু হবে।
বার্তাকক্ষ,০৬ অক্টোবর,২০২০;