কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ আর নেই (ইন্নানিল্লাহি… রাজিউন)। শনিবার (২৩ মার্চ) দিনগত রাত ১টায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন। সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমন ও গীতিকার-গায়ক শফিক তুহিন জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শওকত আলী ইমন জানান, ‘আমি একটু আগেই খবরটা পেলাম। হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে। বাসাতেই ছিলেন। উনার মৃত্যু একটা অধ্যায়ের সমাপ্তি টেনে দিল। তার জন্য দোয়া চাই সবার কাছে।’
একুশে পদকজয়ী শাহনাজ রহমতুল্লাহর জন্ম ১৯৫২ সালের ২ জানুয়ারি। তার বাবা এম ফজলুল হক এবং মা আসিয়া হক। মায়ের হাতেই ছোটবেলায় শাহনাজের গানের হাতেখড়ি।
মাত্র ১১ বছর বয়সে রেডিও এবং চলচ্চিত্রের গানে তার যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৩ সালে। পাকিস্তানে থাকার সুবাদে করাচি টিভিসহ উর্দু ছবিতেও গান করেছেন। গান শিখেছেন গজল সম্রাট মেহেদী হাসানের কাছে। পাকিস্তান আমলে রেডিওতে তার নাম বলা হতো শাহনাজ বেগম।
১৯৬৪ সালে টিভিতে প্রথম গান করেন। সে হিসাবে সংগীত শিল্পী হিসাবে তার পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হয় ২০১৪ সালে। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের ক্যারিয়ারে ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’সহ অসংখ্য কালজয়ী গান গেয়েছেন তিনি।
বিবিসি এক জরিপে সর্বকালের সেরা কুড়িটি বাংলা গানের তালিকায় তার গাওয়া চারটি গান রয়েছে। বছর সাতেক আগে হঠাৎ গান ছেড়ে ধর্ম-কর্মে মনোযোগী হন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ। বাইরে আসতেন না খুব একটা। নামাজ-কোরআনের সঙ্গেই কেটেছে তার জীবনের শেষ দিনগুলো।
শাহনাজ রহমতুল্লাহর মেয়ে সিনথিয়া থাকেন লন্ডনে। আর একমাত্র ছেলে ফয়সাল যুক্তরাষ্ট্রের এক ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করে এখন কানাডা প্রবাসী। তিনি রাজধানীর বারিধারা বাসায় থাকতেন। তার বড় ভাই সুরকার আনোয়ার পারভেজ ও ছোট ভাই প্রয়াত চিত্রনায়ক জাফর ইকবাল।
সর্বকালের সেরা যে চারটি গান গেয়েছেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ
১৯৬৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে রেডিও ও চলচ্চিত্রে গান গাইতে শুরু করেন সদ্যপ্রয়াত শাহনাজ রহমতুল্লাহ। ২০১৪ সালে পঞ্চাশ বছর পূর্তি হয় তার ক্যারিয়ারের।
দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে তিনি গেয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী গান। অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার। রাষ্ট্র তাকে সম্মানিত করেছে একুশে পদকেও। তবে শাহনাজ রহমতুল্লাহ চিরকাল শ্রদ্ধার আসনে থাকবেন বাংলা গানের ইতিহাসে সেরা বিশের তালিকার চার গানের শিল্পী হিসেবে।
২০০৬ সালের মার্চ মাস জুড়ে বিবিসি বাংলার শ্রোতারা তাদের বিচারে সেরা যে পাঁচটি গান মনোনয়ন করেছেন, তার ভিত্তিতে বিবিসি বাংলা তৈরি করেছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কুড়িটি বাংলা গানের তালিকা। সেই তালিকায় চারটি গান রয়েছেন শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া।তার মধ্যে ৯ নম্বরে আছে ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’ গানটি। এই গানের গীতিকার ও সুরকার খান আতাউর রহমান।
তালিকায় ১৩ নম্বর স্থান দখল করে আছে শাহনাজের গাওয়া ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটি। এই গানের গীতিকার মাজহারুল আনোয়ার ও সুরকার শিল্পীর বড় ভাই আনোয়ার পারভেজ। এই গানটি স্বাধীন বাংলা বেতারের সূচনা সংগীত হিসেবে তৈরি করা হয় ১৯৭০ সালে। এটি বাঙালির জাতীয় স্লোগানও।
তালিকার ১৫ নম্বর গানটি ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’। শিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া এই গানের গীতিকার মাজহারুল আনোয়ার ও সুরকার আনোয়ার পারভেজ।
‘একতারা তুই দেশের কথা বল’ গানটি রয়েছে ১৯ নম্বর স্থানে। এই গানটিও আনোয়ার পারভেজের সুরে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কথায় গেয়েছেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ।
তবে গাজী মাজহারুল আনোয়ারেরই লেখায় ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ গানটি দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি তাদের দলীয় সংগীত হিসেবে বেছে নিলে কিছুটা বিতর্কের মধ্যেও পড়ে যান শাহনাজ রহমতুল্লাহ। এই গানটিও তুমুল জনপ্রিয় বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে।
প্রসঙ্গত, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২৪ মার্চ (রোববার) রাত ১টার দিকে রাজধানীর বারিধারায় নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ।
১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করা শাহনাজ রহমতুল্লাহ ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৭৩ সালে আবুল বাশার রহমতুল্লাহর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির এক কন্যা ও এক পুত্র রয়েছে। তারা হলেন- নাহিদ রহমতউল্লাহ এবং একেএম সায়েফ রহমতউল্লাহ।
এই গায়িকার বড় ভাই সুরকার আনোয়ার পারভেজ ও ছোট ভাই প্রয়াত চিত্রনায়ক জাফর ইকবাল।
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur