নভেম্বর মাস থেকে ফেসবুক, ইউটিউব ও গুগল নিয়ন্ত্রণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
শনিবার বিকালে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা আর পিছিয়ে নেই, অনেক দূর এগিয়েছি। ফেসবুক একসময় আমাদের কথায় কোনো কর্ণপাত না করলেও, এখন শুনছে।
আমাদের দেশীয় আইনকানুন অনুযায়ীই তারা চলবে। আগামী মাস থেকে ফেসবুক, ইউটিউব ও গুগল নিয়ন্ত্রণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এই মাসেই সব ধরনের ডিভাইস আসবে। এর মাধ্যমে নির্বাচনকে ঘিরে অপপ্রচার, গুজব ও মিথ্যা তথ্য প্রতিরোধ করতে সক্ষম হব।’
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এ আলোচনার সভার আয়োজন করে। সংগঠনের সভাপতি ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে ও শহীদ সন্তান তৌহীদ রেজা নূরের সঞ্চালনায় এতে আলোচনায় অংশ নেন সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়্যারমান মোহাম্মদ আরাফাত, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক শহীদ সন্তান ডা. নুজহাত চৌধুরী, বাংলাদেশ অনলাইন এক্টিভিস্ট ফোরামের (বোয়াফ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময় এবং ব্লগার ও লেখক মারুফ রসুল। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শহীদ সন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়।
মন্ত্রী মোস্তফা জাব্বার বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমরা অনেক এগিয়েছি। কয়েক লাখ ব্যবহারকারী যখন ছিল, তখন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ পাত্তা দেয়নি। কিন্তু কথা না শুনলে ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ করে দেয়া হবে- এমন হুমকির প্রেক্ষিতে তারা অফিসে এসে বসে থাকে। আমাদের দেশের আইন অনুযায়ীই চলবে বলেও আশ্বস্ত করেছে। আগামী মাস থেকে ফেসবুক, ইউটিউব ও গুগলে মানহানিকর তথ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।’
এ সময় তিনি গুজব ও অপপ্রচার রুখতে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। কোনো ঘটনা বা বিষয়ে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের সম্ভাবনা থাকলে সরকারকে অবহিত করারও অনুরোধ জানান তিনি। ডিজিটাল আইন প্রণয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আরও কঠিন কিন্তু আমাদের দেশে যারা এ আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তাদের সঙ্গে আলোচনার পর আইনটি দুর্বল হয়ে গেছে। আগামী ২-৩ বছর পর আবার হয়তো দাবি উঠবে আইনটি আরও কঠিন করতে হবে। যে কোনো আইনেই ভুল প্রয়োগের সম্ভাবনা থাকে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভুল প্রয়োগও হয় কিন্তু সে আইনটা কি বাদ দিয়ে দেয়া হবে? আইন হলেও অপপ্রয়োগরোধে কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাও থাকবে। সেটা নিয়েও কাজ চলছে।
এ সময় তিনি আগামী নির্বাচনকে ঘিরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কথা, উন্নয়নমূলক সংবাদ প্রচারের পরামর্শ দেন ও নির্বাচনের পরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, কেবল ব্যক্তিই নয়, সমন্বিতভাবে গুজব প্রতিহত করতে অনলাইনে সক্রিয় হতে হবে। গুজব প্রতিহতে টাকা দিয়ে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়তে হবে, যারা যারা ২৪ ঘণ্টায় অনলাইন যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে।
মোহাম্মদ আরাফাত বলেন, দীর্ঘদিন থেকেই এ ধরনের একটা আইনের দাবি জানিয়ে আসছি। যে কোনো আইন হলেও একটা গোষ্ঠী প্রতিক্রিয়া দেখাবে কিন্তু তাদের স্বার্থের চেয়ে জনগণের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিতে হবে। তবে এ আইনের যেন কোনো অপব্যহার না হয় সে বিষয়ে গুরুত্ব দেন তিনি। মূলপ্রবন্ধে আসিফ মুনীর তন্ময় আগামী নির্বাচনে গুজব কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারে আর গুজব প্রতিহত করতে সরকারের পক্ষ থেকে কী ধরনের প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন সেই বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
ব্লগার মারুফ রসুল বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হলেও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি এখনো নিষ্ক্রিয়। আমাদের অনেকেই ফেসবুকে সক্রিয় হলেও টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে সক্রিয় না। গুজব ও অপ্রচার রুখতে সবাইকে এসব জায়গায় সক্রিয় হতে হবে।
কবির তন্ময় চৌধুরী বলেন, গুজব রুখতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একটা করে প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলতে হবে এবং প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে হবে।