Home / শীর্ষ সংবাদ / হাইমচর উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তার বিরোধ
হাইমচর উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তার বিরোধ

হাইমচর উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তার বিরোধ

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম. সারোয়ার কামাল এর মধ্যকার বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছেচে। হাইমচর উপজেলা পরিষদে থমথমে অবস্থা বিরাজ করেছে এবং পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় ইউএনও এস.এম সরোয়ার কামালকে বান্দরবান জেলায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় বদলি করা হয়েছে।

বদলির বিষয়টি চাঁদপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল হাই নিশ্চিত করে চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে ঝামেলা হয়েছে, তাকে স্বাভাবিক বদলি করা হয়েছে। তার স্থলে সেখানে চাঁদপুর সদর ইউএনওকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরের ২ কোটি ২২ লাখ টাকার এডিবি প্রকল্প বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম. সারোয়ার কামাল এর সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেন পাটওয়ারীর মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়।

২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরের এডিবির বরাদ্দ যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নের পর ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরের বরাদ্দের টাকা যা উপজেলা উন্নয়ন তহবিলে অবৈধভাবে রাখা আছে, তা ঠিকাদারদের মধ্যে পরিশোধ করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চাপ দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাতে রাজি না হওয়ায় তাদের মধ্যে বাক-বিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে হাইমচর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

পরিস্থিতির অবনতি হলে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের উপস্থিতে জেলা প্রশাসক বিরোধের সাময়িক মীমাংসা করলেও ইউএনও ছুটি অজুহাতে কর্মস্থলে অনপুস্থিত থাকেন। দীর্ঘদিন পর ইউএনও কর্মস্থলে যোগ দিলেও উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটেনি।

সোমবার (১৭ অক্টোবর) বিকাল ৪ টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ৩নং আলগী (দঃ) ইউপি চেয়ারম্যান এম.এ বাশার ইউএনও এর কাছে ‘২ লাখ টাকা পাওনা’ দাবি করে বসেন। বিষয়টি হাইমচর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মাহ্বুবুর রহমান জানলে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে ইউএনও তা অস্বীকার করেন এবং বাশার চেয়ারম্যানকে তাঁর সামনে রেখে জিজ্ঞাসা করতে অনুরোধ করেন।

এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাইমচর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ২নং আলগী (উঃ) ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন দুলাল, ৩নং আলগী (দঃ) ইউপি চেয়ারম্যান সর্দার আব্দুল জলিল মাস্টার, হাইমচর উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক আতিকুর রহমান পাটওয়ারী উপস্থিত ছিলেন।

বিরোধ মিমাংসার জন্য যুবলীগ আহবায়ক আতিকুর রহমান পাটওয়ারী এম.এ বাশার চেয়ারম্যানকে ইউএনও কার্যালয়ে ডেকে নেন। তিনি গত ৩১ মার্চের ইউপি নির্বাচনে নিজের বিজয়ে সহযোগিতা করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ইউএনওকে ‘২ লাখ টাকা উৎকোচ’ দিয়েছেন বলে দাবি করেন।

ইউএনও এস.এম সারোয়ার কামাল তাৎক্ষনিক তা অস্বীকার করলে হাইমচর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফোনে উপজেলা চেয়ারম্যানকে ইউএনও অফিসে আসতে অনুরোধ করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তা সকলের সামনেই তর্কে জড়িয়ে পড়েন। উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ‘তুই শব্দ’ ব্যবহার করে ‘অশ্লীল মন্তব্য’ করেন বলে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানিয়েছেন।

এক পর্যায়ে ইউএনও পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে ফোন করেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিকাল ৫টায় হাইমচর এসে বিষয়টি শুনবেন বলে উপজেলা চেয়ারম্যানকে জানালে তর্কের সমাপ্তি ঘটে। এই সংবাদ ছড়িয়ে পরলে বিপুল পরিমান লোক উপজেলায় সমবেত হয়।

ঘটনার কিছুক্ষণ পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাসার উদ্দেশ্যে বের হলে উপজেলার পরিষদ থেকে কিছু লোক হই-হুল্লোড় করে তাকে গাল মন্দ করলে নিচ তলা থেকে অন্যরাও আবার তাঁর পক্ষ নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন মন্তব্য করে চিৎকার চেঁছামেচি করতে শুনা যায়।

বিকাল অনুমান ৫টার দিকে ইউএনও চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে চলে গেলে কিছুক্ষণ পর উপজেলা চেয়ারম্যানও চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে চলে যান। তবে এসময় উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়ির পেছনে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করা যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাইমচর উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মোতালেব জমাদার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘আগামি ৩০ অক্টোবর তারিখে ত্রাণ অধিদপ্তরে কিছু ব্রিজের টেন্ডার রয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান টেন্ডার গুপছি করার জন্য ১০% টাকা নিয়ে কোন কোন ঠিকাদারের কাছে কাজ বিক্রি করা শুরু করছে। এই ইউএনও এখানে থাকলে তার পক্ষে টেন্ডার গুপছি করা সম্বভ নয় বলে মনে করে টেন্ডারকে নির্ভেজাল করতে ইউএনওকে গাল-মন্দ শুরু করে পরিকল্পিতভাবে উৎকোচের অভিযোগ তুলে পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। তবে উপজেলা চেয়ারম্যানের এ খায়েশ পূরণ হবে না।’

তিনি এ বিষয়ে মাননীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আ’লীগ নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

৩নং আলগী (দঃ) ইউপি চেয়ারম্যান সর্দার আব্দুল জলিল মাস্টার ও উপজেলা যুবলীগ আহবায়ক আতিকুর রহমান পাটওয়ারী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, হাইমচর : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:৫০ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০১৬, সোমবার
ডিএইচ