Home / চাঁদপুর / স্কুলছাত্রী সাথীর আত্মহত্যা : প্ররোচনাকারী শিক্ষক নিয়ে বিভ্রান্তি
স্কুলছাত্রী সাথীর আত্মহত্যা : প্ররোচনাকারী শিক্ষক নিয়ে বিভ্রান্তি

স্কুলছাত্রী সাথীর আত্মহত্যা : প্ররোচনাকারী শিক্ষক নিয়ে বিভ্রান্তি

চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী গনি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাথী আক্তারের আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী শিক্ষকদের নিয়ে বিভ্রান্তি কাটছে না।

অভিযোগ উঠেছে, দায়ীদের আড়াল করতে, ঘটনার দিন অনুপস্থিত সাধারণ শিক্ষকককে মামলায় দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বাদীপক্ষ যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে তাদের নাম না দিয়ে অন্য সাধারণ শিক্ষককের নাম মামলায় দেয়া হয়েছে। যিনি ওই দিন স্কুলেই উপস্থিত ছিলেন না।

এদিকে ২০ টাকার জন্য শিক্ষকদের অপমানে সাথী অভিমানে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। সে গত ২৯ আগস্ট আত্মহত্যা করলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো খোঁজ-খবরও নেয়নি। ফলে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সর্র্বমহলে এখনো বিভ্রান্তি কাটছে না।

বাগাদী গনি উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি তাৎক্ষণিকভাবে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত না করায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অনেকেই এখন বিব্রত অবস্থায় রয়েছেন।

অভিযোগ উঠছে, একটি মহল প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে সাধারণ শিক্ষকদের হয়রানির মুখে ফেলছে। এছাড়া মামলায় উল্লেখিত শিক্ষকদের নাম নিয়েও বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। এমনকি সাথীকে আত্মহত্যার প্ররোচানার মূল হোতা ইংরেজির শিক্ষক জয় শংকর দে’র (ইনডেক্স নং-১০৫৬৩৪৯) নাম না আসায়, নিরপরাধ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

এদিকে সাথীর আত্মহত্যার ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হলে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা অপরাধীদের চিহ্নিত করতে এবং প্রকৃত সত্য উদঘাটনে ৩ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করেন। বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

শিক্ষা সচিব প্রকৃত অপরাধীদের পার পাওয়ার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন। এছাড়া সাধারণ কিংবা নিরীহ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ করেন শিক্ষা সচিব।

এদিকে এখন পর্যন্ত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত বা আইনের আওতায় আনতে কোন ভূমিকা না রাখায় সর্বমহলে বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অজ্ঞাত কারণে কেনো তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তা বলতে পারছে না শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা। তাদের এমন দায়িত্বহীন উদাসীনতায় যেমন অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে, তেমনি অনিয়মের দৌরাত্ম্য ক্রমশ বেড়েই চলছে বলে অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছে।

তবে কি কারণে বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির আহ্বায়ক আরিফ হোসেন চৌধুরী বিদ্যালয়ে আসছেন না তা খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করছেন শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি এখন অনেকটাই শিক্ষকশূন্য।

বিদ্যালয়ে কার কি দায়িত্ব তা কেউ বলতে পারছে না। আবার সাথীর আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী শিক্ষক ইংরেজির জয় শংকর দে (ইনডেক্স নং-১০৫৬৩৪৯), সামাজিক বিজ্ঞানের মো. জাহাঙ্গীর হোসেন (ইনডেক্স নং-১০৫২২৩০), গনিতের মো. জাহাঙ্গীর হোসেন (ইনডেক্স নং-১০৭০৭১৩) ও অফিস সহকারী ফাতেমা বেগম আত্মগোপনে রয়েছেন।

এসব শিক্ষকদের অনুপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট তদন্ত টিমের স্বাভাবিক কার্যক্রমও ব্যাহত হয়ে পড়ছে। কেবলমাত্র ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন মজুমদারকে পুলিশ আটক করেছে। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠায়।

বিদ্যালয়টির বর্তমান এডহক কমিটির অভিভাবক সদস্য জাহাঙ্গীর আলম খান জানান, ৪ সদস্যের কমিটির ২ জন না থাকায় শিক্ষার্থী সাথীর আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।

কমিটির আহ্বায়ক আরিফ হোসেন চৌধুরী তার ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় অবস্থান করছেন ও সদস্য সচিব প্রধান শিক্ষক কামরুল হোসেন ছুটিতে আছেন বলে তিনি জানান।

কেবল শিক্ষক প্রতিনিধি এসকে মাহমুদা আক্তার বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জেলহাজতে থাকায় এসকে মাহমুদা আক্তারকে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

এসকে মাহমুদা আক্তার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘তাদের বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ১ হাজার ৩শ’ ১৪ জন এবং শিক্ষক ১৯ জন। শিক্ষার্থীদের মাঝে ছাত্র ৪শ’ ৮৮ ও ছাত্রী ৮শ’ ২৬ জন।’

সাথীর আত্মহত্যার ঘটনায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা এখনো কেন গ্রহণ করেনি তা তিনি বলতে পারেননি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আরিফ হোসেন চৌধুরীর প্রতিনিধি হেদায়াতুল ইসলাম চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘গত ২৯ আগস্ট ঘটনার সময় তিনি বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। তবে আহ্বায়ক না থাকায় কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। প্রশাসন থেকে যে তদন্ত চলছে তার প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।

অপরদিকে নিহত সাথীর পরিবারের পক্ষ হতে চাঁদপুর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হলে পুলিশ তাৎক্ষণিক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে আটক করে।

বর্তমানে মামলাটি চাঁদপুর মডেল থানার এসআই মাহবুব আলমের তদন্তনাদীন রয়েছে। মামলায় শিক্ষদের নাম নিয়ে যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়ে তা তদন্ত শেষে বের হয়ে আসবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এদিকে মামলায় উল্লেখিত অভিযুক্ত শিক্ষদের মধ্যে ইংরেজির জয় শংকর দে’র পরিবর্তে (ইনডেক্স নং-১০৫৬৩৪৯) ব্যবসা শিক্ষার জাকির হোসেনের নাম (ইনডেক্স নং-১০৭৬৫৬৫) এসেছে বলে চাউর রয়েছে। তবে এ বিষয়ে জাকির হোসেনের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

শিক্ষক জাকির হোসেনের স্ত্রী ফারজানা বেগমের দাবি, ঘটনার সাথে তার স্বামী জড়িত নয়। ওই দিন জাকির হোসেন বিদ্যালয়ে যাননি বলে তিনি দাবি করেন।

তবে শিক্ষকদের মাঝে পারস্পারিক সম্পর্ক না থাকায় একটি মহল মামলায় তার স্বামীর নাম জড়িয়ে দেয়।

ফারজানা বেগম প্রশাসনের কাছে দাবি করেছেন প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করে যেন তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করা হয়।

তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহবুব আলম জানান, ‘কে নির্দোষ, আর কে দোষী তা এখন বলা সম্ভব নয়। তদন্ত শেষে প্রকৃত দোষীকে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে বাদীর অভিযোগের বাইরে অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে বলে।’

এদিকে শিক্ষকদের বিভ্রান্তির বিষয়ে মামলার বাদী দেলোয়ার হোসেন খানের বাড়িতে গিয়ে তাকে না পাওয়া যায়নি। এমনকি তার মুঠোফেনে (০১৮৭৯-৭৫৯১৭৩) একাধিকবার যোগাযোগ করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বাদীর জামাতা ও সাথীর ভগ্নিপতি রুবেল তালুকদার জানান, ‘মামলা দায়ের করার পর থেকে স্থানীয় ইউপি সদস্য এসহাক হুমকি-ধমকি প্রদান করে আসছেন। যার ফলে আমার শ্বশুর এখন অনেকটাই আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছেন।’

এ বিষয়ে চাঁদপুর মডেল থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মাহবুব আলম চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘মামলার তদন্ত শেষে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে। তবে কেউ নির্দোষ হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে।’

তবে বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা দাবি করছেন কেবল বিদ্যালয়ের বর্তমান এডহক কমিটির আহ্বায়ক আরিফ হোসেন চৌধুরীর অনুপস্থিতি এবং ইতোপূর্বে যারা কমিটিতে ছিলো তারা বিভিন্ন কৌশলে পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করছে।

ঘটনার সাথে জড়িত নয়, অহেতুক এমন শিক্ষকদের হয়রানি, আর প্রকৃত দোষীদের আড়াল করা চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের সামগ্রিক চিত্র ও সাধারণ শিক্ষকদের হয়রানি বন্ধসহ সাথীর পরিবারের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে কমিটির আহ্বায়ক আরিফ হোসেন চৌধুরীর বিদ্যালয়ে উপস্থিত দরকার বলে অভিমত দিয়েছেন তারা।

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১২:৪০ এএম, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ

Leave a Reply