Home / সারাদেশ / স্কাউট আন্দোলনের গুরুত্ব এবং স্মার্ট বাংলাদেশ

স্কাউট আন্দোলনের গুরুত্ব এবং স্মার্ট বাংলাদেশ

১৯৭২ সালের ৮ এপ্রিল। স্বাধীন বাংলাদেশে বয়স্কাউট সমিতি গঠিত হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে বিশ্ব স্কাউটস সংস্থার ১০৫তম সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশ স্কাউটস সমিতি। ১৯৭৮ সালে বয়স্কাউট সমিতির নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ স্কাউটস’ নামকরণ করা হয়। মেয়েদের সুযোগ দেওয়ার জন্য ১৯৯৪ সালে গার্ল-ইন স্কাউটিং চালু করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ স্কাউটসের সদস্য ২২ লাখ ১০ হাজারের বেশি। গৌরব আর অর্জনে বাংলাদেশ আজ বিশে্বর ষষ্ঠ বৃহত্তম স্কাউট দেশ। তবে বিশ্বব্যাপি সমাদৃত এ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের যাত্রা শুরু অনেক আগে। ১৯০৭ সালে রবার্ট স্টিভেন্সন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অব গিলওয়েল এ যুব আন্দোলনের প্রতিষ্ঠা করেন। ২৯ আগস্ট থেকে ৮ সেপ্টেম্বর ১৯০৭ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের ব্রাউন-সী দ্বীপে ব্যাডেন পাওয়েল পরীক্ষামূলক ক্যাম্প আয়োজন করেছিলেন এবং সেখান থেকেই শুরু হয় বিশ্বব্যাপী স্কাউটিংয়ের পথচলা।

উন্নত সোনার বাংলার স্বপ্নসারথি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রথম চিফ স্কাউট। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম প্রধান স্কাউট ব্যক্তিত্ব। স্বাধীনতার পর তিনি স্কাউটিংয়ের দীক্ষা নিয়ে চিফ স্কাউটের দায়িত্ব নেন। ১৯৭১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতির ১১১নং অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় স্কাউট সংগঠনকে স্বীকৃতি দেন।

আজকের তরুণ, আগামীর বাংলাদেশ। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ছাত্রসমাজের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, বাংলাদেশ আজ যতদূর এগিয়েছে, ভবিষ্যতে আজকের শিশু-কিশোর-তরুণ বাংলাদেশকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর তাই গত ২৫ জানুয়ারি গাজীপুরের মৌচাকে ৩২তম এশিয়া প্যাসিফিক ও একাদশ জাতীয় স্কাউট জাম্বুরির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন স্কাউট প্রশিক্ষণ পায়।’

বাংলাদেশ স্কাউটসের সোনালি পথ চলায় ৫০ বছর অতিক্রান্ত করে ২০২২ সালে আমরা উদযাপন করেছি বাংলাদেশ স্কাউটসের সুবর্ণজয়ন্তী। বর্তমান বাংলাদেশ স্কাউটসের চিফ স্কাউট হিসেবে আছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। যা যুব সংগঠন হিসেবে ২২ লক্ষাধিক স্কাউট সদস্যের গর্বের জায়গা। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ স্কাউটসের জাতীয় কাউন্সিলের ৫০তম বার্ষিক সাধারণ সভায় যোগ দিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মহোদয় বলেন,‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, স্কাউটিং কার্যক্রমই পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রগতিশীল,সৃজনশীল ও উন্নয়নের পথে সম্পৃক্ত করে দেশকে জাতির পিতার কাক্সিক্ষত সোনার বাংলায় রূপান্তর করতে।’ বাংলাদেশে বর্তমানে স্কাউটের সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের যুবসমাজকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি স্কাউটিংয়ে আরও বেশি সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদেরও স্কাউটিংয়ে সমানভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে। মেয়েরা পিছিয়ে থাকলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। স্কাউট সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের গুণগতমানও নিশ্চিত করতে হবে।’ দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় দুর্গতদের পাশে স্কাউটদের উপস্থিতিতে মুগ্ধ হয়ে মহামান্য বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, অগ্নিকাণ্ডসহ দুর্যোগকালে ক্ষতিগ্রস্তদের সেবাদানে স্কাউটরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।’

কিন্তু ছাত্ররা কেন স্কাউটিং করবে? আসুন একটা গল্প বলি। বাংলাদেশ স্কাউটসের সাবেক প্রধান জাতীয় কমিশনার মনযুর-উল-করিম একবার সারা দেশে সব কারাগারে তথ্য সংগ্রহের অভিযান চালালেন। সব আসামিদের জিজ্ঞাস করা হলো তারা কারাগারে আসার আগে জীবনে একটি দিনও স্কাউটিং করেছিল কিনা? সারা দেশের সব কারাগার খুঁজে একটিও আসামি খুঁজে পাওয়া যায়নি যে কিনা কখনো স্কাউটিং করেছে। অর্থাৎ স্কাউটরা সব সময় অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকে। একজন মানবিক মানুষের স্বাদ পেতে হলে অন্যের বিপদে এগিয়ে যেতে হবে। তাই দেশের প্রতিটি দুর্যোগে স্কাউট ও রোভার স্কাউট সদস্যরা সেবার মন্ত্রে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়। বন্যায় পানিবন্দিদের উদ্ধার কাজ, অগ্নিকা-ে উদ্ধার অভিযান, মানুষকে শীতবস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্কাউটদের সাড়া দিতে দেখা যায়। এই তো গত ৪ এপ্রিল রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৫০ ইউনিট, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করেছে বাংলাদেশ স্কাউটসের বিভিন্ন ইউনিটের রোভার স্কাউটরা।

ছাত্রজীবনে দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে অ্যাওয়ার্ড অর্জন করতে পারে কজন? একজন রোভার স্কাউট তার কার্যক্রম বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সুযোগ পায় প্রেসিডেন্টেস রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ড অর্জনের। যা দেশে রোভার স্কাউট বয়সীদের জন্য সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিজে প্রতিবছর এ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন। এমন সোনালি অর্জনের সুযোগ ছাত্রজীবনে নিশ্চয় কেউ হাতছাড়া করতে চাইবে না। শুধু দেশে নয়, প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ স্কাউটসের সদস্যরা বিভিন্ন দেশের ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করে। যা একদিকে যেমন ছাত্রজীবনকে সমৃদ্ধ করে। একই সঙ্গে দক্ষ ও যোগ্য হয়ে উঠতে সহায়তা করে।

নিজের প্রতি কর্তব্য পালন, সৃষ্টিকর্তার প্রতি কর্তব্য পালন এবং অপরের প্রতি কর্তব্য পালন এই তিন মূল মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে স্কাউটরা। স্কাউটদের মূলমন্ত্র হচ্ছে কাব স্কাউট যথাসাধ্য চেষ্ট করা, স্কাউট সদা প্রস্তুত এবং রোভার স্কাউট- সেবা। স্কাউটদের আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, সৎ, চরিত্রবান, কর্মোদ্যোগী, সেবাপরায়ণ, সর্বোপরি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্কাউটস কাজ করে থাকে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও মূল্যবোধ অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতি গঠনে স্কাউট আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিহার্য।

লেখক: মেহেদী হাসান নাঈম, সদস্য, জনসংযোগ ও মার্কেটিং বিষয়ক টাস্কফোর্স বাংলাদেশ স্কাউটস