জুলাই ও আগস্টের পর সদ্য বিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসেও রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। সেপ্টেম্বরে তারা ২১৫ কোটি (২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা ১৪৭ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। আর গত আগস্টে প্রবাসী রেমিট্যান্স এসেছিল ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রবাসীরা ৪৫১ কোটি ৯২ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন।
কোভিড-১৯-এর ধাক্কায় সারা বিশ্বের স্বাভাবিক অর্থনীতি যখন টালমাটাল অবস্থায়, তখন বাংলাদেশে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি অর্থনীতিবিদদের মধ্যেও বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে করোনাকালে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স বেশি পাঠিয়েছেন।
করোনাভাইরাসের মধ্যে প্রবাসী আয় এত বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোতে ডলারের উদ্বৃত্ত দেখা দিয়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার কারণে ব্যাংকের হাতে প্রচুর তারল্য এসেছে। মহামারী করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। রেমিট্যান্সের কারণে ছোট ছোট ব্যবসা আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা ধারণা করেছিলেন, কোরবানির ঈদের পর রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে আসবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—প্রতি মাসেই রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েই চলেছে।
রেমিট্যান্স বাড়ার নেপথ্যের কারণ হিসেবে হুন্ডি বন্ধ হওয়া এবং সরকারের দুই শতাংশ নগদ প্রণোদনাকে দেখা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘রেমিট্যান্স বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।’ তিনি বলেন, ‘দুই শতাংশ প্রণোদনা এবং দীর্ঘদিন বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় হুন্ডি কমে যাওয়ার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বেড়ে গেছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে প্রবাসীরা ২৫৯ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। একক মাস হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনও এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। শুধু তাই নয়, ইতিহাস বলছে এখন থেকে ২০ বছর আগে অর্থাৎ ২০০১-০২ অর্থবছরের পুরো সময়ে (১২ মাসে) রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫০ কোটি ১১ লাখ ডলার। আর করোনাকালে শুধু জুলাই মাসেই প্রবাসীরা তার চেয়ে বেশি ২৫৯ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। পরের মাস আগস্টে প্রবাসীরা ১৯৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। আর সর্বশেষ মাস সেপ্টেম্বরে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২১৫ কোটি ১৮ লাখ ডলার।
এদিকে রেমিট্যান্সে ভর করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে গেছে। অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে বর্তমানে রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা এক কোটির মতো বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ। দেশের জিডিপিতে এই রেমিট্যান্সের অবদান প্রায় ১২ শতাংশের মতো।
প্রসঙ্গত, বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়াতে গত বছরের মতো এবারও ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার। সে অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ টাকা প্রণোদনা পাচ্ছেন। বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত করে কোনও কোনও ব্যাংক আরও ১ শতাংশ বেশি প্রণোদনা দিচ্ছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ (১৮.২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি।
ঢাকা ব্যুরো চীফ,২ অক্টোবর ২০২০