Home / ফিচার / সাংবাদিকতা : হাতে খড়ি ও সাধারণদের ধারণা
সাংবাদিকতা : হাতে খড়ি ও সাধারণদের ধারণা

সাংবাদিকতা : হাতে খড়ি ও সাধারণদের ধারণা

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা :

মানুষের ধারণা সাংবাদিকরা মূলত অহংকারী, অসংবেদনশীল এবং পক্ষপাতদুষ্ট। তারা অসত্য বলে বা লিখে এবং চাঞ্চল্য সৃষ্টিতে পারদর্শী।

এই নেতিবাচক মনোভাবের পরও মানুষ সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমকে বিশ্বাস করতে চায়। মানুষ আর সাংবাদিকদদেরও চেষ্টা “ভালো সাংবাদিকতা” বেঁচে থাকুক।

প্রত্যাশা:
মানুষ চায় মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যম। সাহসী সাংবাদিকতা।

কিন্তু এর জন্য শুধু সাংবাদিকদের চেষ্টাই বড় নয়, চাই সমাজের সব মানুষের, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সরকারী প্রশাসন, ও সুশীল সমাজের সহযোগিতা।

সাংবাদিকদের কাছে প্রত্যাশা – সত্য তুলে ধরবেন তারা। তারা সংবাদের প্রতি, মানুষের প্রতি ন্যায্য আচরণ করবেন, সংবাদে ভারসাম্য বজায় রাখবেন। তারা পক্ষপাত করবেননা ইত্যাদি। আর এসবই হলো তার জন্য বড় নীতিমালা।

খবরের সুত্র:
সবমসময় খবরে বেনামী কোন সূত্র নয়, চাই সূত্রের নাম, পরিচয়। তা হলে খবরের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এই খবর যারা দেন, সেসব সূত্রের সাথে সাংবাদিকের আচরণ হতে হবে ভদ্র, সুরুচিসম্পন্ন এবং ন্যায্য। তার সাথে কতটুকু ঘনিষ্ঠ হওয়া যাবে, কতটুকু দূরত্ব রাখতে হবে তা নিজেকেই বিচার করে চলতে হবে।

কখন সূত্রের কাছে যেতে হবে:
প্রতিটি সংবাদেই সূত্র উল্লেখ করতে হবে। কিন্তু কিছু বিষয় আছে যেগুলো সমাজে সাধারণভাবে প্রতিষ্ঠিত সত্য, যেগুলা মানুষ এর মধ্যেই জেনে গেছে সেসব ক্ষেত্রে সূত্র উল্লেখ প্রয়োজন নেই।

সংবাদে সূত্রের ব্যবহার:
সাধারণত: প্রথম দুই অনুচ্ছেদেই সূত্র উল্লেখ করা দরকার। আর অতি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদের ক্ষেত্রে প্রথম অনুচ্ছেদেই করতে হয়। যদি চলমান ঘটনা হয়, তাহলে প্রতিটি নতুন তথ্য দিতে গেলে সূত্র উল্লেখ জরুরী। “অভিযোগ রয়েছে” এমন কথা লিখে কোন ধরনের মানহানির মামলা থেকে নিজেকে রক্ষ করা সহজ হবেনা।

সূত্রের সাথে সাংবাদিকের আচরণ:
সরাসরি উপস্থিত হয়ে, কিংবা ফোনে, ফ্যাক্সে বা ই-মেইলে, যেভাবেই হোকনা কেন, কোন খবর জানতে কারো সাথে কথা বলতে হলে অবশ্যই নিজের পরিচয়, প্রতিষ্ঠানের পরিচয় দিতে হবে। কিসের ভিত্তিতে কি জানতে চাওয়া সেটা পরিষ্কার করতে হবে। অনেকেই আছে on-the-record বা off- the-record সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত নন। তাকে তা বুঝিয়ে দেয়া সাংবাদিকের দায়িত্ব। যিনি খবর জানাচ্ছেন তিনিও জানেন কেন তিনি কথা বলছেন। যে তথ্য তিনি দিচ্ছেন তা দিতে তিনি কোন ধরনের ঝামেলায় পড়ছেননা, তাও তাকে নিশ্চিত হতে হবে। সবসময় চেষ্টা করতে হবে যতটা সম্ভব তার উদ্ধৃতি ব্যবহারে তার সম্মতি আদায় করা।

তথ্য রেকর্ড করা:
সাংবাদিক তথ্য রেকর্ড করবেন এটাই স্বাভাবিক। তা নোট নিয়ে হোক বা টেপ এ রেকর্ড করে হোক। তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে,তথ্যের ন্যায্যতা বজায় রাখতে এটা জরুরী । তবে না জানিয়ে টেপ-এ বা মোবাইলে কারো কথা রেকর্ড করা বেআইনী।

সবচেয়ে ভালো সূত্র:
কোন খবরে কার কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেলো তা যদি উল্লেখ থাকে এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারেনা। কিন্তু তার পরও মনে রাখতে হবে যার উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে তার দায় দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত সাংবাদিককেই নিতে হয়। যতটা সম্ভব সুত্রের নাম আর অবস্থান উল্লেখ থাকতে হবে। এতে পাঠক, শ্রোতা বা দর্শক থবরের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। আবার নাম উল্লেখ করলেও তথ্য যাচাই করতে পুরোপুরি, নিশ্চিত হতে হবে তথ্যের ভারসাম্য বজায় আছে কিনা। বিশেষ করে কোন দ্বন্দ্ব বা মধ্যস্ততার বিষয় যদি থাকে।

সবচেয়ে দূর্বল সূত্র হলো যার নাম দেয়া যায় না। বেনামী সূত্রের বরাতে তথ্য ব্যবহার করা যায় যখন রিপোর্টার নিশ্চিত যে তার দেয়া তথ্য সঠিক, বিশ্বাসযোগ্য এবং এই তথ্যটি তিনি ছাড়া আর কারো কাছ থেকে পাওয়া সম্ভব নয়। একটি তথ্য যা এমনিতেই পাওয়া সম্ভব সে ক্ষেত্রে বেনামী সূত্রের ব্যবহার কাম্য নয়।

‘একটি সূত্র’, ‘সুত্রসমুহ’, ‘পর্যবেক্ষক’, ‘মহল’ এ ধরনের সংবাদ সূত্র আসলে অস্পষ্ট, অগ্রহণযোগ্য। তেমনিভাবে ‘ওয়াকিবহাল মহল’, ‘নির্ভরযোগ্য সূত্র’ জানায় বলে কোন তথ্য দেয়া হলে তা সংবাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করেনা।

কোন রাষ্ট্রীয় বা কর্পোরেট চুক্তি নিয়ে রিপোর্ট করতে হলে যতটা সম্ভব সূত্রকে সুনির্দিষ্ট করতে হবে। যদি বলা হয় ‘একজন কর্মকর্তা জানান’, ‘উচ্চপর্যায়ের নির্বাহী’ জানান।। তা হলে নিশ্চিত হতে হবে এই চুক্তির সাথে তার সরাসরি সংশ্লিষ্টতা আছে যদি ঐ ব্যাক্তি নিজের পরিচয গোপন রাখতে চান।

বেনামী সূত্রের খবরে অতি সাবধানতা, অতি মাত্রায় যাচাই বাছাই প্রয়োজন।

একক সূত্র:
কোন একক সূত্রের ভিত্তিতে খবর সাধারনভাবে কাম্য নয়। যদি খবরটি খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়, যদি এই সূত্র ছাড়া আর কোথাও তথ্য পাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে একক সূত্রের খবর প্রকাশ করা যায় যদি প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যাক্তিরা রাজি থাকেন। নিশ্চিত হতে হবে যে তিনি সত্যিকার অর্থেই কর্তৃপৰীয় অবস্থানে আছেন। তা ছাড়া এসব ক্ষেত্রে রিপোর্টারের নিজস্ব track record যাচাই করা জরুরী। শুধুমাত্র নীতিনির্ধারক হলে একক সূত্র ব্যবহার করা যায়, তবে খুবই সতর্কতার সাথে।

সূত্রের সাথে সততা:
যার কাছ থেকে তথ্য নেয়া হয় তার সাথে সততা বজায রাখতে হয়। তার নাম পরিচয় ব্যবহারে, তার উদ্ধৃতি ব্যবহারে। কোন উদ্ধৃতির ক্ষেত্রে বহুবচন ব্যবহার কাম্য নয়। সব ক্ষেত্রে সংবাদের ভারসাম্য বজায় রাখতে একটি খবরে সব পক্ষের সাথে কথা বলতে হবে। আবার বুঝতে হবে কোন পথে হাটছেন তিনি? কিংবা সূত্র নিজেও সাংবাদিককে ভূল পথে নিচ্ছেন কিনা? কিংবা নিজের কোন অযাচিত স্বার্থ হাসিল করছেনসাতো?। রিপোর্টারের এই সন্দেহই তা তথ্য নিশ্চিত করকে বড় ভূমিকা রাখে। তার কাছে বড় ‘সঠিক তথ্য’, ‘ভারসাম্য’ আর ‘ন্যায্যতা’।