Home / জাতীয় / জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংসদীয় সীমানা পুনর্নিধারণ !
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংসদীয় সীমানা পুনর্নিধারণ !

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংসদীয় সীমানা পুনর্নিধারণ !

গত ২০০৮ সালের আগে যেসব সংসদীয় আসন নিয়ে নির্বাচন হতো, সেই মোতাবেক আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্নিধারণের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বললেন, ‘আমরা কিছুটা পরিবর্তন করতে চাই।’ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে সিইসি কার্যালয়ে রোববার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিএনপির অবস্থানের কথা জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

তিনি বলেন, ১৯৮৪ সালে গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে ৩০০ আসন নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সেটার পরে ৮৬, ৯১, ৯৬, ৯৮ ও ২০০১ সালের নির্বাচন এই আসনের ভিত্তিতে হয়েছে। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ওই আসনগুলোকে ভেঙে প্রায় ১৩৩টি আসনে পুনর্বিন্যাস করেছে।

‘যেখানে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব যে আইন-কানুন আছে তার ব্যত্যয় ঘটিয়ে এটা করা হয়েছিল। ভৌগলিক সীমারেখা, প্রশাসনিক সুবিধা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা এগুলো বিবেচনা না করে ১৩৩টি আসনে পুনর্বিন্যাসের নামে একটা জগাখিচুড়ি করা হয়েছে। অথচ ২০০১ পর্যন্ত এভাবে নির্বাচন হয়েছে এবং এতে কারো কোনো আপত্তি ছিল না’ বলেন এই বিএনপি নেতা।

তিনি বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের সময় যে নির্বাচন কমিশন ছিল, তাদের কাছে কোনো দল বা গোষ্ঠী বা সুশীল সমাজ কারো কোনো দাবি ছিল না। কোনো দাবি না থাকা সত্ত্বেও তারা নিজেরা যে পুনর্বিন্যাসটা করেছে তাতে অনেক অসামঞ্জস্যতা আছে।’

ড. মোশাররফ বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে যে আসন বিন্যাস ছিল, সেই সম্পর্কে এর পরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী ও সুশীল সমাজ আপত্তি করেনি, সেজন্য আমরা ২০০৮ সালের আগের অবস্থায় আসনগুলো পুনর্বিন্যাস করার দাবি জানাতে ইসির কাছে দাবি জানাতে এসেছি।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু ইসির হাতে নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্নিধারণের ক্ষমতা আছে, তাই ১৩৩টি আসনে যে অসামঞ্জস্যতা আছে তা দূর করে ৩০০ আসন পুনর্বিন্যাস করার জন্য আমরা কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের সময় সরকারটা জনগণের সরকার ছিল না। এটা একটা জরুরি আইনের সরকার ছিল। তারা কী মনে করে করেছে এবং কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করেছে সেটা আমরা জানি না। তবে ওই কাজগুলো সঠিক হয়নি।’

এ বিষয়ে সিইসি কে এম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সীমানা পুনর্নিধারণ নিয়ে কথা হয়েছে। সীমানা পুনর্নিধারণ নিয়ে তারা ১৯৮৪ সালের যে সীমানা পুনর্নিধারণ করা হয়েছিল, সেই নীতিতে ফিরে যাওয়ার কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। এ বিষয়ে আমাদেরও কিছু চিন্তা-ভাবনা থাকবে। আমাদের যে রোডম্যাপ আছে, সেখানে সীমানা পুনর্নিধারণের বিষয়টি আছে। এ বিষয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করবো।’

তবে সিইসি বলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে বলতে পারব না যে, আমরা ৮৪-তে থাকবো, ২০০৮ সালে যেটা ছিল সেটায় থাকবো নাকি ২০১৪ এর নির্বাচনে যেটা ব্যবহার করা হয়েছে সেটা ব্যবহার করবো। তবে হ্যাঁ, সীমানা পুনর্নিধারণের ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা পরিবর্তন আনতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘বিষয়টা প্রথম একটা বড় রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে শুনলাম। এরপর আমরা পর্যায়ক্রমে অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমের সঙ্গে আলোচনা করব। কাজেই এই মুহূর্তেই ৮৪ সালে ফিরে যাব এটা বলা যাবে না। আমরা চিন্তা-ভাবনা করবো।’

বিএনপির দাবির সঙ্গে একমত কিনা জানতে চাইলে নূরুল হুদা বলেন, ‘সীমানা পুনর্বিন্যাস নিয়ে তারা যেমন কনসার্ন, আমরাও কনসার্ন। ৮৪-তে ফিরে যাবে এ কথা বলিনি। তারা যেই প্রস্তাবটা দিয়েছে এটা পরিবর্তনের বিষয়ে, সেটার ব্যাপারে আমরা একমত। কিছুটা পরিবর্তন আমরা আনতে চাইব।’

তিনি বলেন, ‘সেই পরিবর্তনটা হবে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এবং আমাদের নিজস্ব কিছু চিন্তা-ভাবনা আছে সেগুলো সমন্বয় করে। কতটুকু করা হবে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেই এটা ঠিক করা হবে।’

এ সময় ড. মোশাররফ বলেন, ‘আজকে বিএনপির মতো সবচেয়ে জনপ্রিয় দলের মহাসচিবের ওপর হামলা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’

তিনি বলেন, ‘শুধু তাই নয়, আমরা ইফতার পার্টি করতে পারছি না পুলিশের অনুমতি ছাড়া। আমি নিজেও গত ১৫ জুন কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ইফতার পার্টির আয়োজন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদেরকে অনুমতি দেয়নি। ড. মঈন খান এখানে আছেন। উনি নরসিংদী ইফতার পার্টিতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে দেখেন পুলিশ আক্রমণ করে সেই ইফতার পার্টি নস্যাৎ করে দিয়েছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘আমরা কমিশনকে বলেছি- এই অবস্থার যদি নিরসন না হয়, নির্বাচন কমিশন একা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সকল দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানের জন্য যথেষ্ট নয়। সেটার জন্য প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা।’

তিনি বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে যদি নির্বাচন হয় তাহলে এটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয় না। এটা আজকে যিনি প্রধানমন্ত্রী তিনিই ১৯৯৬ সালে প্রথম উত্থাপন করেছিলেন, আন্দোলন করেছিলেন।’

ড. মোশাররফ বলেন, ‘আজকেও কিন্তু ঠিক একই পরিস্থিতি দেশে, আজকে আরো খারাপ অবস্থা। যেখানে আমাদের ত্রাণ বিতরণ করতে দেওয়া হয় না, সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না এমনকি ইফতার করতে দেওয়া হয় না, সেখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কিভাবে হয়?’

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে বিএনপিকে কী বলেছেন- জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘আমাদের এটা টেননিক্যাল অফিস। আমরা আইন, সংবিধানের আলোকে নির্বাচন পরিচালনা করব। আইন যেটা আমাদের হাতে আছে, সেইটাই আমাদের একমাত্র অবলম্বন।’

বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুর রশীদ সরকার ও ক্যাপ্টেন সুজাউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

সিইসির সঙ্গে আরো উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহাবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসোন চৌধুরী, ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ্।

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:০০ পি.এম, ১৮ জুন ২০১৭,রবিবার
ইব্রাহীম জুয়েল

Leave a Reply