Home / শীর্ষ সংবাদ / চাঁদপুরে ‘রোগীর পেটে গজ রেখে সেলাই’ আদালতে মামলা
রোগীর পেটে গজ রেখে সেলাই

চাঁদপুরে ‘রোগীর পেটে গজ রেখে সেলাই’ আদালতে মামলা

চাঁদপুর দি-ইউনাইটেড হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে সিজারের সময় রোগীর পেটে গজ রেখে সেলাই করার অভিযোগে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন এক ভুক্তভোগী নারীর স্বামী।

গেলো ২৭ জানুয়ারি হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ৮ জনকে আসামী করে দাদন নামে এ ভুক্তভোগী চাঁদপুর আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।

মামলায় হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস.এম. শাহ আলম রবিন, ডাক্তার শামছুন নাহার তানিয়া, ওটি ইনচার্জ সুলতানা আক্তার সেতু, ফার্মেসির আ. খালেক কিরণ, মার্কেটিং অফিসার আব্দুল গাফফার মাহিম ও ইমাম হোসেন, নার্স হাসিনা আক্তার শেলি, ওটি ক্লিনার সমিতা বেগম ওরফে সকিনাকে আসামি করা হয়।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গেলো বছরের ২৫ জুলাই সন্ধ্যায় মামলার বাদী চাঁদপুর পুরাণ বাজার এলাকার দাদনের স্ত্রী রাহেলা আক্তারকে চাঁদপুর দি-ইউনাইটেড হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করান। ভর্তির পর ওইদিন রাতেই সিজার করা হয়। তিনদিন পরে রিলেজ দেওয়ার ফলে বাড়িতে গেলে অপারেশনের স্থানে ব্যাথা শুরু হয়। কয়েকদিন পর অপারেশনের স্থান দিয়ে পুঁজ ও পানি বের হলে পুনরায় হাসপাতল কৃর্তপক্ষকে জানালে তারা হাসপাতালে নিয়ে আসতে বলেন। হাসপাতলে আসলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডাক্তার শামছুন্নাহার তানিয়ার কাছে পাঠালে তিনি চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয় এবং সে অনুযায়ী ১৯ আগস্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

সরকারি জেনারেল হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ তার অবস্থা আশঙ্কা জনক হওয়ায় ঢাকা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। সেখানে গেলে হাসপাতালের ডাক্তারগণ তার অবস্থা আশঙ্কা জনক হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। ২০ আগস্ট সেখানে ভর্তি হয়ে দীর্গ ১ মাস ২ দিন চিকিৎসা নেওয়াবস্থায় দুইবার অপারেশন করতে হয়।

মামলার বাদী দাবি করেন, ‘দি ইউনাইটেড হাসপাতালে অপারেশনের সময় তার পেটের ভিতরে গজ রেখে সেলাই করে দেয়া হয়েছে। একারনেই তার পেট ফুলে যায় এবং পুঁজ রক্ত বের হতে থাকে। এ কারণে আমার ১০ লাখ টাকারও বেশি চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যায় হয়েছে। আমার স্ত্রী বর্তমানে মৃত্যুর মুখে রয়েছে, যে কোন সময় মারা যেতে পারে।

এ বিষয়ে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস.এম. শাহ আলম রবিন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, গেলো ৬-৭ মাস পূর্বে আমার এখানে বাদীর দাদন মিয়ার স্ত্রী সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করে। সিজারের চিকিৎসক ছিলেন ডা. শামছুন্নাহার তানিয়া ও এনেস্থেশিয়া ছিলো ডা. আরিফ। রোগী সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কিছুদিন পর আমার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পেটের ব্যাথ্যা হচ্ছে এমনটি জানানোর পর ওই রোগীর চিকিৎসক ডা. শামছুন্নাহার তানিয়াকে জানানো হয়। তিনি তখন সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ডিউটিরত। সে হিসেবে রোগীকে তার কাছে পাঠানো হয়। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রোগীর সিজারের স্থান ইনফেকশনের বিষয়টি স্পষ্ট হয় এবং রোগী পক্ষ জানায় রোগীটি বাড়িতে সিজার অবস্থায় পড়ে গিয়ে আহত হয়েছিলো।

কিন্তু পরের দিন সরকারি জেনারেল হাসপাতালে এসে ডা. শামছুন্নাহার তানিয়া ম্যাডামকে না পেয়ে অন্য একজন ডিউটি ডাক্তারকে দেখানো হয়, তিনি হাসপাতালের সিনিয়র কাউকে না জানিয়ে রোগীকে ঢাকায় রেফার করে দেন। বিষয়টি পরবর্তীতে বিএমএর নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে মিমাংসা বৈঠকে জানা যায়।

বিএমএ নেতৃবৃন্দের সাথে মিমাংসা বৈঠকের সম্পর্কে মি. রবিন জানান, ‘বিএমএ’র সভাপতি ডাক্তার মাহমুদুন নবী মাছুম, ডাক্তার শামছুন্নাহার তানিয়ার স্বামী ডাক্তার হাসানুর রহমান, মফিজ পাটওয়ারীসহ শহরের গণ্যমান্যদেরকে নিয়ে বাদী দাদনের সাথে আমাদেরে বৈঠক হয়। সেখানে অপারেশনে ডাক্তার শামছুন্নাহার তানিয়ার কোন ত্রুটি পাওয়া যায়নি। বাদী দাদন আমার বন্ধুর সম্পর্কিত আত্মীয়। সে হিসেবে তার সাথে আমার ওই বৈঠকেই স্বাভাবিক কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান হয়ে যায়।

রবিন আরো জানায়,‘আমার দায়িত্ব ছিলো ডাক্তারদের সাথে তাকে মিট করিয়ে দেয়া আমি সেটি করেছি। তিনিও সে বৈঠক থেকে সন্তুষ্ট চিত্তে বাড়ি ফিরে গেছেন এবং এখন এসে আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তা আমার বোধগম্য নয়।’

এ বিষয়ে কথা বলার জন্যে বিএমএ’র সভাপতি ডাক্তার মাহমুদুন নবী মাছুমের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ডা. শামছুন্নাহার তানিয়া জানান, সিজারের সময় রোগীর কোনো গজ ব্যবহার করা হয় না ব্যবহার করা হয় মব (অপারেশনের সময় ব্যবহৃত বড় ব্যান্ডেজ)। সংশ্লিষ্ট রোগীর ক্ষেত্রে তাই ভেতরে গজ থেকে যাওয়ার কোনো আশংকা নেই আর মব হলো বড় আকৃতির যা আদৌ ভেতরে থাকা সম্ভব না। অপারেশনের কোনো সামগ্রী ভেতরে থেকে থাকলে সাথে সাথে রোগী প্রচণ্ড ব্যথার শিকার হতেন। এতোদিনও অপেক্ষা করার সুযোগ ছিলো না।

তিনি আরো জানান, ‘রোগী ঢাকায় যে চিকিৎসা ও পরীক্ষা নিরিক্ষা করেছে তাতেও এমন কোনো প্রমাণ আমরা কয়েকজন চিকিৎসক রিপোর্টগুলোতে পাইনি। ঢাকার রিপোর্টে বলা হয়েছে রোগীর ক্ষতস্থানে ইনফেকশন হয়েছে।