Home / জাতীয় / রাজনীতি / মৌলভীবাজার থেকে মিন্টো রোড তারপর সংসদ
মৌলভীবাজার থেকে মিন্টো রোড তারপর সংসদ

মৌলভীবাজার থেকে মিন্টো রোড তারপর সংসদ

‘একি সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে’ এই গান… আর… “দেশটাকে দেখে রেখ” এই ছিল স্বামীর শেষ কথা। স্বামীর রেখে যাওয়া এই দুটো স্মৃতিকে আঁকড়ে জীবনের আধাবেলায় এসে আবারো নতুন পথচলা শুরু করলেন সায়রা মহসীন।

এক বাক্যে চিনে ফেলার মতো এমন কোনো মহাতারকা এই মহিয়সী নন। কিন্তু কিছু সময় পাশে থাকলে বুঝতে সময় লাগে না তিনি আসলে মেঘে লুকানো সূর্য । কথা না বাড়িয়ে বরং সেই সূর্যের গল্পটা শুরু করি।

শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি আর আভিজাত্যের মোড়কে বেড়ে উঠা সায়রা মহসীনের জন্ম সিলেট শহরে। রাজনৈতিক পরিবারে বড় হওয়া সায়রার বড় দাদা ছিলেন আসামের শিক্ষামন্ত্রী খান বাহাদুর সৈয়দ আব্দুল মজিদ কাপ্তান মিয়া।

সায়রা মহসীনের বড় চাচা অপরাজেয় বাংলার ভাস্কর সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালেদ। জনপ্রিয় অভিনেতা হিল্লোলও আরেক চাচার ছেলে। পরিবারের অনেকেই ছিলেন বিভিন্ন সরকারের মন্ত্রী।

আর সায়রা মহসীনের স্বামীর নাম প্রয়াত সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী। পারিবারিক ভাবে দেখাশোনার মধ্য দিয়ে সায়রার বিয়ে হয় মৌলভীবাজারের আরেক রাজনৈতিক ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান মহসীন আলীর সঙ্গে। এর পর একসঙ্গে ৩৫ বছর।

পড়াশোনা করার বয়সে সংসার আর রাজনীতিবিদ স্বামীর রাজনীতির নানা ঝক্কি-ঝামেলা সামাল দিতে দিতে নিজেই হয়ে উঠলেন সরাসরি রাজনীতির পরিপূর্ণ মানুষ। স্বামী মহসীন আলীর মৃত্যুর পর নানা রাজনৈতিক সমীকরণের পর তিনিই হাল ধরলেন স্বামী মহসীন আলীর সংসদীয় আসনের। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে।

দুই একদিনের মধ্য শপথ নিবেন তিনি। শপথের আগেই নিজ এলাকা নিয়ে তার নতুন কিছু করা.. রাজনীতির এই নতুন যাত্রাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঘণ্টাখানেকের আড্ডা ছিল ৩৪, মিন্টো রোডের বাসায়। বললেন নানা কথা। তবে সব কথাকে ছাপিয়ে একটি কথাই ছিলো বার বার। সেটা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সম্মান আর আস্থা।

তিনি কি পাবেন.. কিংবা তিনি কি পারবেন এমন ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে সায়রা মহসীনকে মনোনয়ন দিয়ে চমক দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

সেই ভরসার জায়গাটাকে তিনি সফল করার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যেতে চান সামনে। সব সময় এলাকার রাজনীতিসহ বিভিন্ন সমাজ সেবার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। এবার সুযোগ আরও বড়। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চান এলাকার জন্য। কিন্তু এলাকার উন্নয়ন করার কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা দুর্ভাবনার ছাপও ছিল চোখে-মুখে ।

স্বামীর অসমাপ্ত স্বপ্ন পুরণ করা আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বাসকে সফল করার জন্য এলাকার বহুদিনের ভাঙ্গনকে ঐক্যে ফিরিয়ে আনাটাই সায়রার প্রথম চাওয়া। ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিকে মেডিক্যাল কলেজও করতে চান তিনি।

স্বামী হারানোর শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে না পারলেও সাদাসিধে এই মানুষটিকে দেখে বুঝে উঠার উপায় নেই মনের দিক থেকে কতোটা মজবুত তিনি।

নারীদের জন্য রাজনীতির মাঠ ফুল বিছানো না হলেও তিন কন্যার জননী সায়রা জানালেন, আগামীতে তার কন্যারাই হাল ধরবেন রাজনীতির। স্বামীর ইচ্ছা অনুযায়ী এরইমধ্যে রাজনীতিতে নেমেও পড়েছেন কন্যারা।

আলাপ এর পুরোটা জুড়েই ভর করেছিল স্বামীর স্মৃতি। স্মৃতি বাড়াতে ইচ্ছা না করলেও লোভ সামলাতে পারলাম না তাই বলেই ফেললাম …স্বামী হিসেবে কেমন ছিল মহসীন আলী। বললেন আজকের রাজনীতির সায়রা হবার শতভাগ অবদান মহসীনের। গান বাজনা পাগল মানুষটির গানকে সব সময় তিনি প্রশ্রয় দিয়েছেন।

তিনি রান্না ঘরে ঢুকলেই তাকে গান শোনাতেন মহসীন আলী। সারা জীবন তার জন্য একটি গানই বার বার গেয়েছেন… একি সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে…।

যদিও অন্যজীবনে চলে গেছেন মহসিন আলী তারপরও প্রতিদিনই সেই সুর তাড়া করে সায়রাকে। খুব দুঃখ করে জানালেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে একটাই চাওয়া ছিলো: একসময়কার সমাজকল্যাণ মন্ত্রী যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদের শাস্তি দেখে যাওয়া আর সেই মন্ত্রণালয়কে পাপমুক্ত করা।

দেখে যেতে পারলেন না বলে আক্ষেপ আছে কিন্তু আজ আর দুঃখ নেই সায়রা মহসীনের।

শেষ মুহূর্তে এসে জানালেন, মৃত্যুকালে স্বামীর বলে যাওয়া শেষ কথাটি। জল ভরা চোখে জানালেন শেষ কালে মহসীন আলী একটা কথা বলেছিলেন, “দেশটাকে দেখে রেখো।”

বাকী জীবন মানুষ আর দেশের মাঝেই কাটাতে চান তিনি। অন্যদেরও চাওয়া মেঘে লুকানো সূর্য সায়রা মহসীনের সামনের জীবন এমনই হোক।

নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৫:০৩  পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০১৫, বৃহস্পতিবার

এমআরআর