Home / সারাদেশ / মুঠোফোনে তরুণীর সাথে সম্পর্ক : দেখা করতে গিয়ে মারধর করে অপহরণ মামলা
মুঠোফোনে তরুণীর সাথে

মুঠোফোনে তরুণীর সাথে সম্পর্ক : দেখা করতে গিয়ে মারধর করে অপহরণ মামলা

মুঠোফোনে পরিচয়ের সূত্রে গত বুধবার বিকেলে এক কিশোরীর (১৫) সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন রাকিব হোসেন (১৮) নামের এক তরুণ। খবর পেয়ে মেয়ের সঙ্গে কথা বলার অপরাধে ওই তরুণকে বাড়িতে ডেকে এনে বেধড়ক মারধর করে গুরুতর আহত করেন ওই কিশোরীর বাবা। পরে রাতে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে ওই তরুণের বিরুদ্ধে করেন অপহরণ মামলা। গুরুতর আহত ওই তরুণ দুই দিন ধরে পুলিশি পাহারায় পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।

গত বুধবার পঞ্চগড় সদর উপজেলার গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের নতুনবস্তি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত রাকিব হোসেন গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের সিপাইপাড়া এলাকার আইবুল হকের ছেলে। তিনি চাঁদপুর জেলায় পল্লী বিদ্যুতের লাইন নির্মাণের কাজ করেন। তিনি ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন বলে জানা গেছে। রাকিবের সঙ্গে মুঠোফোনে পরিচয় হওয়া ওই কিশোরী একই ইউনিয়নের স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।

পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও চিকিৎসাধীন ওই তরুণের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাকিব হোসেন ও ওই কিশোরীর বাড়ি একই ইউনিয়নে হলেও দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। প্রায় এক মাস আগে মুঠোফোনে ওই কিশোরীর সঙ্গে পরিচয় হয় রাকিবের। কর্মস্থলে চলে যাওয়ার আগে ওই কিশোরীর সঙ্গে দেখা করতে বুধবার বিকেলে কিশোরীর এলাকায় যান রাকিব। এ সময় তাঁরা কিশোরীর বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে গিয়ে কথা বলছিলেন।

খবর পেয়ে কিশোরীর বাবা সেখানে গিয়ে তাঁদের দুজনকেই তাঁর বাড়িতে আসতে বলেন। বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁরা বাড়িতে এলে রাকিবকে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করেন মেয়েটির বাবা। পরে তিনি পঞ্চগড় সদর থানা–পুলিশ খবর দিলে পুলিশ তাঁর বাড়ি থেকে আহত রাকিবকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। ওই রাতেই মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে রাকিব হোসেনের নামে একটি অপহরণ মামলা করেন। পরে ওই মামলায় ওই তরুণকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে হাসপাতালে পুলিশি পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাকিব হোসেন বলেন, ‘আমাকে তাঁদের বাড়িতে যেতে বললে সরল বিশ্বাসে আমি তাদের বাড়িতে যাই। সেখানে কিছু জিজ্ঞাসা না করেই আমাকে গাছের ডাল দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন মেয়েটির বাবা। আমি এক ঘণ্টা ধরে পানি চেয়েছি, তাঁরা আমাকে পানিও খেতে দেননি। তাঁদের বারান্দায় আমার রক্ত ভাসছিল। এ সময় তাঁরা আমার ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও নিয়ে নেন। পরে তাঁরাই থানায় ফোন করে আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।’

জানতে চাইলে ওই কিশোরীর বাবা বলেন, ‘প্রায় ছয় মাস ধরে ওই তরুণ আমার মেয়েকে বিরক্ত করত। গত বুধবার বিকেলে অসৎ উদ্দেশ্যে আমার মেয়েকে বাড়ি থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে আমি সেখানে গিয়ে তাদের বাড়িতে আসতে বলি।’ অতিরিক্ত মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভাবতে গিয়ে মাথা গরম হয়ে যায়। এ সময় আমি ছেলেটিকে দু-একটা বাড়ি দিই।’

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা ফারহানা সুলতানা বলেন, ওই তরুণের শরীরে ভোঁতা কোনো কিছু দিয়ে আঘাতের কারণে প্রচণ্ড ব্যথা রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ডান হাতের মাঝের আঙুলে ফোলা রয়েছে এবং এক্স–রে প্রতিবেদনে ফ্র্যাকচার (চিড়) দেখা যাচ্ছে। তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আককাস আহমদ বলেন, অভিযুক্ত তরুণকে বাদীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার ওই তরুণ পুলিশি পাহারায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। অপহরণের মামলা হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলাটি বাদীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নেওয়া হয়েছে। তবে ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বার্তা কক্ষ,১৪ আগস্ট ২০২০