Home / তথ্য প্রযুক্তি / মুখের কথায় বাংলা টাইপ : নিশ্চিত হবে বানান বিশুদ্ধতা
মুখের কথায় বাংলা টাইপ : নিশ্চিত হবে বানান বিশুদ্ধতা

মুখের কথায় বাংলা টাইপ : নিশ্চিত হবে বানান বিশুদ্ধতা

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে বাংলা কিবোর্ডের ব্যবহার সম্প্রসারণ এবং বর্তমান সমস্যা চিহ্নিত করে তা উন্নয়নের উদ্যোগ নিচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ।

এতে কিবোর্ডকে বিভিন্ন কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম যেমন ডেস্কটপ কম্পিউটার, মোবাইল ফোনে ব্যবহারের জন্য সম্প্রসারণ করা যাবে। বাংলায় সরাসরি কথা থেকে লেখা বা লেখা থেকে কথায় রূপান্তরসহ কম্পিউটিং জগতে বাংলা ভাষার ব্যবহার সম্প্রসারণে ১৬টি ক্ষেত্রে কাজ করা হবে।

এ ক্ষেত্রে মুখে বাংলা বললেই তা সফটওয়্যারের মাধ্যমে টেক্সটে রূপান্তর করা যাবে। এ ছাড়া হাতে লেখা ও প্রিন্ট করা দলিলপত্র ইত্যাদি ব্যবহারযোগ্য বাংলা টেক্সট হিসেবে রূপান্তরের সফটওয়্যারও তৈরি হবে এ প্রকল্পের আওতায়।

এ জন্য ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ নামে ১৫৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে আইসিটি বিভাগ। গত ৪ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়।

আইসিটি বিভাগ সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় অফিস-আদালত, গ্রন্থাগার ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিপুলসংখ্যক দলিলপত্র, সাহিত্যকর্মকে টেক্সট হিসেবে রূপান্তর করা সম্ভব হবে। ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে। ইতিমধ্যে গবেষক ও বিশেষজ্ঞ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি ও বিজয় সফটওয়্যারের জনক মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘অনেক দেরিতে হলেও ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্রের জন্য এ প্রকল্প শুরু হয়েছে, এটাই বড় স্বস্তির খবর। এ উদ্যোগের জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে ৩০ বছর ধরে লেগে আছি। আমরা কম্পিউটার, স্মার্টফোনে বাংলা ভাষা লেখার ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু অন্য বিষয়গুলো উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজন ছিল। এত দেরি হওয়ার কারণে আমাদের ভাষার কিবোর্ডসহ নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। এটা আরো আগে করতে পারলে এ সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না। ’ মোস্তাফা জব্বার নিজেও এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগ সূত্র জানায়, বাংলা লেখা ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ভিন্নরূপে দেখা যায়। ভিন্ন ভিন্ন ফন্টে লেখা বাংলা টেক্সটকে পছন্দনীয় ফন্টে রূপান্তর খুব চ্যালেঞ্জিং হয়। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে ফন্ট ইন্টার-অপারেবিলিটি ইঞ্জিন উন্নয়ন করা হবে।

এর ফলে বাংলায় ডকুমেন্ট প্রসেসিং, ই-মেইলিং, হিসাব-নিকাশ সহজতর হবে। এ প্রকল্পের আওতায় বাংলা ভাষার জন্য কমন লোকাল ডাটা রিপোজিটরি উন্নয়ন করা হবে। ভাষার ইন্টারলাইজেশনের জন্য প্রমিত শব্দ ভাণ্ডার (যেমন বিদেশি শব্দ বা কারিগরি শব্দের সমার্থক বাংলা শব্দ) ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামে জমা দিতে হয়।

এর ফলে কম্পিউটিং জগতে বাংলার ব্যবহার সম্প্রসারণ, বাংলা সফটওয়্যার ও অনুবাদ সফটওয়্যার উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান।

প্রকল্পের আওতায় বাংলা বানান ও ব্যাকরণ পরীক্ষার জন্য সফটওয়্যার তৈরি করা হবে। এর ফলে ভুল পরিহার করে বাংলায় সঠিক বানান ও ব্যাকরণের ব্যবহার হবে। মৌখিক ও লিখিত প্যারাগ্রাফ যন্ত্রের মাধ্যমে অনুবাদের জন্য বাংলা মেশিন ট্রান্সলেটর উন্নয়ন করা হবে।

এর ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাষান্তর করতে সহায়ক হবে। স্ক্রিন রিডার সফটওয়্যার অর্থাৎ কম্পিউটিং যন্ত্রের স্ক্রিনে প্রদর্শিত তথ্য ও চিহ্নগুলো পাঠ করার সফটওয়্যারও তৈরি হবে, যাতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বা পড়তে অক্ষম ব্যক্তিদের কম্পিউটিং যন্ত্র ব্যবহারও সহজ হয়। এ ছাড়া সেন্টিমেন্ট (ভাব) বিশ্লেষণে টুলস উন্নয়ন, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর জন্য প্রমিত কিবোর্ড করা হবে।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘বাংলা ভাষার মাসে এটি অনেক বড় কাজ। তবে এটি তিন বছরে সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয় না। প্রাক্কলিত ১৫৯ কোটি টাকায় প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে কি না, তা গবেষক ও বিশেষজ্ঞ নিয়োগের পরই বোঝা যাবে।

তবে আশা করব, ‘এটি যেন আরেকটি তথাকথিত প্রকল্প না হয়। অন্তত আমাদের ভাষার প্রতি, শহীদদের প্রতি সম্মানের জায়গা থেকে যেন এ প্রকল্পকে দেখা হয়।’ (কালেরকণ্ঠ)

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৬: ০০ এএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, বুধবার
ডিএইচ

Leave a Reply