‘মা বলতেন ছোটদের রোজা দুপুর পর্যন্ত রাখলেই চলে’ : এরশাদ

অত্যন্ত বরকতপূর্ণ মাস হচ্ছে পবিত্র রমজান। এ মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নামাজ, রোজা ও কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যে দিয়ে সময় পার করেন। এ মাসের প্রধান ইবাদত রোজাকে ঘিরে একেকজনের রয়েছে একেক রকম স্মৃতি। আজ যারা নিজের কর্মগুণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত তাদের জীবনের প্রথম রোজার স্মৃতিকথা জানার চেষ্টা করেছি।

এমন একজন বিশেষ ব্যক্তি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি একাধারে নয় বছর দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। এর আগে সেনাবাহিনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে জেলে যাওয়ার পরপরও পাঁচ-পাঁচটি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এরপর থেকে যতবার যেখান থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, সেখানেই নির্বাচিত হয়েছেন। তার হাতেগড়া সংগঠন জাতীয় পার্টি এখন সংসদের বিরোধী দলের ভূমিকায় রয়েছে। আর তিনি মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব পালন করছেন। সাবেক এই রাষ্ট্রপতি অনলাইন গনমাধ্যম এর স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট সেরাজুল ইসলাম সিরাজ’র সঙ্গে জীবনের প্রথম রোজা নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন। সেই স্মৃতিচারণের চুম্বুকাংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হল।

এরশাদ বলেন, প্রাইমারীতে থাকতেই প্রথম রোজা করেছিলাম। তখন বন্ধুদের মধ্যে মনস্তাতিক প্রতিযোগিতা হতো। ক্লাস অথবা খেলার মাঠে বলাবলি হতো, তুই কয়টা রোজা করেছিস। এ নিয়ে অনেক বাহাসও চলত। তখন রোজা সম্পর্কে খুব একটা জানা ছিল না। বাবা-মা বলতেন রোজা রাখলে আল্লাহ খুশি হন। তাই রোজা রেখেছিলাম। তখন রোজা রাখাটা সামাজিক রীতি ছিল।

তিনি বলেন, এখনতো অনেক ধরনের খাবার পাওয়া যায়। কিন্তু তখন এতো খাবার পাওয়া যেতো না। ইফতার করতাম খেজুর আর মায়ের হাতে তৈরি বড়া (পেঁয়াজু জাতীয় খাবার বিশেষ) দিয়ে। খেজুর পাওয়া যেতো কিন্তু এখনকার মতো ভালোমানের খেজুর পাওয়া যেতো না। আপেল, আঙ্গুর, জিলাপী পাওয়া যেতো না। কমলা ওই অঞ্চলে উৎপাদিত হতো বলে সহজলভ্য ছিল। কিন্তু সারাবছর পাওয়া যেতো না। অন্য ফল তেমন একটা পাওয়াই যেতো না বলে জানান এরশাদ।

সাবেক এই রাষ্ট্রপতির বেড়ে ওঠা হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চল কুচবিহারের দিনহাটায়। দিনহাটা উচ্চ বিদ্যালয় থেকেই এসএসসি পাশ করেন এরশাদ। এরপর সেই সময়ের নামকরা প্রতিষ্ঠান রংপুর কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন।

এরশাদ বলেন, তখন হিন্দু মুসলিমের মধ্যে অনেক সম্প্রীতি ছিল। এখনকার মতো প্রতিহিংসা ছিল না। আমাদের ঈদে ওরা সহযোগিতা করতো। আবার ওদের বিভিন্ন পুজা-পার্বণে আমরা সহযোগিতা করাতাম, দলবেঁধে দেখতে যেতাম।

শুক্রবারের জুমার নামাজের জন্য প্রায়ই আমি টিফিনের পরের ক্লাস ধরতে পারতাম না। স্যাররা হিন্দু হলেও সে বিষয়ে কোনো আপত্তি করতেন না।

কোনো কোনো দিন দুপুরবেলায় গিয়ে রোজা ভেঙ্গেছেন আর থাকতে পারেননি। সে কথাও অকপটে বলেছেন এরশাদ। তখন মা শান্তনা দেওয়ার জন্য বলতো, ছোটদের দুপুর পর্যন্ত রোজা রাখলেই কবুল হয়ে যায়।

ছোটবেলার সব স্মৃতি এখন আর মনে নেই। আবছা আবছা মনে আছে তার। সেই সময়ে ঈদের আনন্দের মধ্যে ছিল চাঁদ দেখা আর নতুন কাপড় পড়া। চাঁদ দেখার জন্য বিকেলবেলা থেকেই পশ্চিম আকাশে তাকিয়ে থাকতেন। কে আগে চাঁদ দেখতে পায়।

চাঁদ দেখতে পেলে শিহরণ জাগত। চাঁদ দেখা নিয়েও অনেক বড়াই হতো। যে আগে দেখতে পেতো সে বুক ফুলিয়ে বলত আমি আগে চাঁদ দেখেছি। আবার কেউ কেউ না দেখে মজা করে বলত, আমি চাঁদ দেখেছি। চাঁদ দেখার পর হৈ-হুল্লোড় হতো। কিন্তু এখনকার দিনের মতো কোনো বাজি ফুটানো হতো না। বাজি ফুটানো এই অঞ্চলের সংস্কৃতি নয়। ইসলামেও আসতবাজি নিষেধ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন এরশাদ।

এরশাদ বলেন, আমাদের ছিলো যৌথ পরিবার। আমার বাবারা ছিলেন ৫ ভাই। সব ভাই তাদের সন্তানরা এক টেবিলে বসে খেতেন। একটি টেবিলে কুলাত না। দু’টি বিশাল বিশাল টেবিল জোড়া দিয়ে ইফতার পরিবেশন করা হতো। তবে আমাদের মা-চাচিরা কিন্তু তখন খেতেন না। আমরা যখন খেতাম তারা তখন শুধু পানি পান করে রোজা ভাংতেন। আমাদের খাওয়া শেষ হলে তারা ইফতার করতেন।

এখনও রোজা রাখি। সারামাস রোজা রাখলে শিশুর মতো পবিত্র হয়ে যাই। রোজা থেকে অনেক কিছু শেখার রয়েছে বলে মন্তব্য করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।(সাক্ষাতকার বাংলানিউজ)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট ৫:০৮ পিএম, ০৮ জুন ২০১৬, বুধবার

এইউ

Share