Home / আন্তর্জাতিক / মালয়েশিয়ার পরিত্যক্ত অভিবাসী শিবিরে আরো ৩৭টি কবর ও খাঁচা উদ্ধার
মালয়েশিয়ার পরিত্যক্ত অভিবাসী শিবিরে আরো ৩৭টি কবর ও খাঁচা উদ্ধার
গভীর জঙ্গলে পাচারকারীদের তৈরি খাঁচা

মালয়েশিয়ার পরিত্যক্ত অভিবাসী শিবিরে আরো ৩৭টি কবর ও খাঁচা উদ্ধার

‎Wednesday, ‎27 ‎May, ‎2015   12:06:44 AM

চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক :

মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলের এক গভীর জঙ্গলে আরও একটি ক্যাম্পের সন্ধান পাওয়া গেছে। যেখানে প্রায় ৩৭টি কবর ও খাঁচা রয়েছে। এই ক্যাম্পে মাটি খুঁড়ে অনেক কাফন পাওয়া গেছে। দেশটির ফরেনসিক টিম জঙ্গলের বাদামী মাটি খুঁড়তে গিয়ে এটি খুঁজে পান। সাদা রঙের এই কাফনটি মুসলমান মৃতদেহ কবর দেওয়ার সময় ব্যবহার করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জায়গাটি বেলচা দিয়ে গভীরভাবে খুড়তেই একটি লাশ খুঁজে পান তারা। কয়েকদিন আগে মানুষের দাঁত সমেত চোয়াল ঝুলতে দেখে পুলিশ এলাকাটিতে পরীক্ষা শুরু করে। তবে কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা এখনো অনেক লাশই আবিষ্কার হবে।

মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা সম্প্রদায় এবং দারিদ্র্যতার বেড়াজাল থেকে মুক্তির আশায় পাড়ি জমানো বাংলাদেশিরা দালালের খপ্পরে পড়ে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের এসব গভীর বনে আটকা পড়ে। এটি সাম্প্রতিককালে এশিয়ার অভিবাসী সঙ্কটের সবচেয়ে হতাশজনক সাফল্য।

এর আগে মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী শহর ওয়াং কেলিয়ানের বিভিন্ন পাচার শিবিরের প্রায় ১৪০টি কবর স্থান খোঁড়া হয়েছে।

ফরেনসিক টিমের লাশ প্রাপ্তির ১০০ মিটারের মধ্যে বুকিত ওয়াং বার্মা নামে আরও একটি ক্যাম্প আবিষ্কার করা হয়েছে। ক্যাম্পটি খুব সম্প্রতিই পাচারকারী কর্তৃক পরিত্যক্ত হয়েছে।

ক্যাম্পটির মাঝখানে ভগ্নপ্রায় একটি কাঠের খাঁচা আছে। কাঁটাতার দিয়ে বাঁধা খাঁচাটি মানুষের থেকে পশুদের বসবাসেরই বেশি উপযোগী।

ক্যাম্পটির এক কোণে পর্যবেক্ষণ ছাউনীও আছে। ছাউনির পাশে পড়ে থাকা তারের খাঁচা পাচারকারীদের বর্বতার এক চাক্ষুষ প্রমাণ। কর্মকর্তাদের হিসাবমতে, প্রায় ২ ঘন্টার খাড়া পথ বেয়ে আসা এই দুর্গম ক্যাম্পটিতে অন্তত ৫০০ জনকে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।

ক্যাম্পের চারপাশে জামা-কাপড় ও পানি খাওয়ার গ্লাস ছড়ানো-ছিটানো পাওয়া গেছে। এক কোনায় গর্তে প্রায় ৫০টির মত পরিত্যক্ত থালা-বাসনও পাওয়া গেছে।

পুলিশের তথ্যানুসারে, শুধু এই ক্যাম্পটিতেই এখনও ৩৭টি সন্দেহভাজন কবরস্থান আছে। ফরেনসিক টিমের সদস্যরা এসব সন্দেহভাজন কবরস্থান গুলো অনুসন্ধান করছেন। তারা বলেন, এসব কবরগুলোর বেশির ভাগই পাথর এবং লাঠি দিয়ে চিহ্নিত করা।

মে মাসের প্রথম দিকে থাইল্যান্ড সীমান্তে আবিষ্কৃত গণকবর থেকেও বৃহৎ এই গণকবরের কুকীর্তির কথা জেনে রীতিমত হতাশ হয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

থাইল্যান্ডের পাচার শিবিরের আবিষ্কার, মানব পাচার এবং হাজারো অভিবাসীদের দ্বারা সৃষ্ট থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার আঞ্চলিক সংকটের আগুনকে উসকে দেয়।

মিয়ানমারের নির্যাতিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রোহিঙ্গা এবং ভাগ্যন্নোয়নের আশায় নৌকায় করে দেশ পাড়ি দেওয়া বাংলাদেশিরা দীর্ঘ ও যন্ত্রণাদায়ক ভ্রমণ শেষে জঙ্গলের ভিতর এসব ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়।

ক্যাম্পগুলোতে তারা মানব পাচারকারীদের দ্বারা নির্যাতিত হয়। পরিবার কর্তৃক বড় অংকের মুক্তিপণ দেওয়ার পরই তাদের ছাড়া হয়। পরবর্তীতে মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে বিভিন্ন ধরনের সস্তা কাজ শুরু করে এসব অভিবাসীরা।

পুলিশ জানায় শুধুমাত্র ‍ওয়াং কেলিয়ানেই ২৮টি বন্দী শিবির আবিষ্কার করা হয়েছে। সবগুলো ক্যাম্পই থাইল্যান্ডের সুপ্রতিষ্ঠিত পাচার গোষ্ঠীর বিস্তৃত নেটওয়ার্ক।

গত মঙ্লবার ক্যাম্পটিতে যাওয়া সব সাংবাদিকদের সাথেই পুলিশ বাহিনী প্রহরায় ছিল। কারণ কর্তৃপক্ষের ধারণা পাচারকারীরা আশে-পাশের জঙ্গলে ঘাপটি মেরে থাকতে পারে।

থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিরা মানব চোরাচালানে পাচারকারীদের সহায়তা করার অভিযোগ নাকচ করেছেন। তবে মানবাধিকার কর্মীরা এলাকাগুলোতে আবিষ্কৃত দীর্ঘ ক্যাম্পগুলোর অস্তিত্ত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

ক্যাম্প আবিষ্কারের পর মালয়েশিয়া পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলে দাবি জানায়। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তরা জানায়, ওয়াং কেলিয়ান শহরের এই পাচার শিবিরের সাথে জড়িত মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদের ফোন নাম্বার ট্রাক করার চেষ্টা করছেন তারা।

এই অভিযানের সাথে জড়িত এক স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “তারা এই জঙ্গলের প্রত্যেকটি কোণা খুব ভালো করে চেনে। তারাই পাচারকারীদের মালয়েশিয়ার এই গহীন জঙ্গল চিনিয়েছে।”

তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার এই প্রতিনিধিরা প্রত্যেকটি অভিবাসীকে জঙ্গলে আনা বাবদ ৫০ রিঙ্গিট করে পায়। পুলিশরা জঙ্গলের বাকি ক্যাম্পগুলো সম্বন্ধে জানতে পারলেও সেখানে যাওয়ার সঠিক রুট আবিষ্কার করতে পারেনি।

ওয়াং কেলিয়ানের বিভিন্ন রাস্তায় এখন প্রচুর আহত অভিবাসীকে ভিক্ষাবৃত্তি করতে দেখা যায়।

ওয়াং কেলিয়ানের এক খাবারের দোকানের মালিক লিজা ইব্রাহিম বলেন, “আহত হাত-পা ঢেকে অনেকেই আমার দোকানে আসে। কেউ কেউ এতই দূর্বল ছিল যে ঠিকমত কথা বলতে পারছিল না। একজন আমাকে বলল, এটা কি মালয়েশিয়া? তার পর সে অন্য দিক দেখিয়ে বলে, থাইল্যান্ড এবং তার মাথা ডানে বামে নাড়িয়ে বোঝাতে চাইছিল যে, সে সেখানে যেতে চায় না।”

চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫

 

নিয়মিত ফেসবুকে নিউজ পেতে লাইক দিন : www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes

 

চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আপনার মন্তব্য লিখুন…