Home / সারাদেশ / গোলাপ শাহ মাজারকে স্বাক্ষী রেখে বিয়ে অতঃপর…
গোলাপ শাহ মাজারকে স্বাক্ষী রেখে বিয়ে অতঃপর...

গোলাপ শাহ মাজারকে স্বাক্ষী রেখে বিয়ে অতঃপর…

নাম এএসআই মো. কামরুল হাসান। কর্মরত ছিলেন রাজধানীর খিলগাঁও থানায়। সম্প্রতি বদলি হয়েছেন খুলনা রেঞ্জে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ স্ত্রী জীবিত থাকতেও মৃত হিসেবে জাহির করে ২০ বছর বয়সী এক তরুণীর সঙ্গে গুলিস্তান গোলাপশাহ মাজারকে স্বাক্ষী রেখে বিয়ের নামে করেছেন প্রতারণা তিনি। প্রায় ৪ মাস ওই তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের পর এখন সটকে পড়েছেন ওই এএসআই।

তরুণীর অভিযোগ, বিষয়টি তিনি খিলগাঁও থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। কর্মকর্তারা একদিকে তরুণীকে সমাধানের আশ্বাস দিয়ে দিয়ে কালক্ষেপণ করেছেন, অন্যদিকে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে সুযোগ করে দিয়েছেন বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার। শেষ পর্যন্ত এএসআই কামরুলের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা করতে চেয়েছিলেন তরুণী। কিন্তু পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া যাবে না বলে তাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন থানার কর্মকর্তারা। অভিযোগ না নিয়ে তাকে থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই তরুণী।

এসব ব্যাপারে গতকাল রোববার পুলিশ সদর দপ্তর, ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয় ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই তরুণী। অভিযুক্ত এএসআইয়ের সঙ্গে তার নিজের বেশ কয়েকটি অন্তরঙ্গ ছবি, মোবাইল ফোনে কথোপকথনের ভয়েস রেকর্ড এবং বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া অভিযোগের কপি রয়েছে তরুনির কাছে।

মামলা নেওয়া হচ্ছে না তরুণীর এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে খিলগাঁও থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম বলেন, এএসআই মো. কামরুল আগে খিলগাঁও থানায় ছিলেন। ঈদের পর বদলি হয়ে তিনি এখন খুলনা রেঞ্জে কর্মরত। যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে বিষয়টি তার ব্যক্তিগত সমস্যা। এ বিষয়ে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কারো ব্যক্তিগত দায় থানার পুলিশ নেবে না বলেও জানান তিনি।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কার্যালয়ের সামনে গতকাল দুপুরে কথা হয় খিলগাঁওয়ের শান্তিপুর এলাকার বাসিন্দা ভুক্তভোগী ওই তরুণীর সঙ্গে। তরুনী গণমাধ্যেমকে জানান, তিন বছর আগে তিনি সপরিবারে বসবাস করতেন শাহজাহানপুর থানার রেলওয়ে কলোনিতে। এএসআই কামরুল তখন শাহজাহানপুর থানায় কর্মরত ছিলেন। আসা-যাওয়ার পথে ওই সময় তাদের পরিচয় হয়। ওই সূত্র ধরে কামরুল তার ফেসবুক আইডি নিয়ে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন।

তিনি জানান, বিয়ের বছরখানেকের মধ্যে তার স্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। পাত্রী খুঁজছেন তিনি। একপর্যায়ে দুইজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। পরবর্তী সময়ে মেয়েটিকে বিয়ের প্রস্তাব দেন এএসআই কামরুল। প্রস্তাবটি অভিভাবকদের কাছে দিতে বললে এএসআই বলেন, সামাজিকভাবে বিয়ে হলে তার চাকরির ক্ষতি হবে। একপর্যায়ে গোপনে বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি।

কিন্তু গোপন বিয়েতে রাজি না হলে ওই তরুণীকে সামনে রেখে গোলাপশাহ মাজার ছুঁয়ে বিয়ের শপথ করেন এএসআই কামরুল। এসময় কামরুল বলেন, তাকে কোনোদিনই ছেড়ে যাবেন না। সরল বিশ্বাসে মেয়েটি নিজেকে কামরুলের স্ত্রী ভাবতে থাকেন। এর মধ্যে খিলগাঁও থানায় বদলি হন কামরুল। তার কথামতো খিলগাঁওয়ের শান্তিপুর ঝিলপাড় এলাকায় সপরিবারে বাসা ভাড়া নেন মেয়েটিও।

ওই তরুণী জানান, গত ১ মার্চ খিলগাঁওয়ের বাসায় তাদের দুইজনের শারীরিক সম্পর্ক হয়। এরপর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মতোই তারা বসবাস করতে থাকেন। মাস পেরিয়ে গেলেও আনুষ্ঠানিক বিয়ের বিষয়ে কামরুল কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় তাকে চাপ দেন তরুণী। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করেন কামরুল।

তরুণী আরও জানান, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি যান এএসআই কামরুল। ঈদের দিন কুশল জানতে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে ওপাশ থেকে এক নারী জানান, তিনি কামরুলের স্ত্রী। তাদের সন্তানও রয়েছে। এরপর কামরুলের কাছে স্ত্রী-সন্তানের বিষয় গোপন করার কারণ জানতে চান ওই তরুণী।

তখন কামরুল জানান, ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে গোপন করেছেন। বিষয়টি দুর্ভাগ্য হিসেবে মেনে নিয়ে একপর্যায়ে মেয়েটি এএসআই কামরুলকে বিয়ের জন্য সামাজিকভাবে চাপ দেন। এতে ক্ষেপে গিয়ে কামরুল মোবাইল ফোনে মেয়েটিকে ক্রমাগত হুমকি দিতে থাকেন। অনন্যোপায় তরুণী ঈদের চার দিন পর পুরো ঘটনা জানান কামরুল যে থানায় কর্মরত, সেই খিলগাঁও থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।

ঘটনা শুনে কর্মকর্তারা ‘অভিভাবক হিসেবে তোমার আম্মাকে নিয়ে আসো, তার সঙ্গে কথা বলে আমরা তোমাকে সব ব্যাপারে সহযোগিতা করব, সব সময় পাশে থাকব’ বলে মেয়েটিকে আশ্বাস দেন। এর পাঁচ দিন পর ওই তরুণী তার মাকে নিয়ে থানায় গেলে ‘এএসআই কামরুল তো বিয়ে করেছেন, তার স্ত্রী-সন্তান আছে, তার সঙ্গে আপনার মেয়ের কীভাবে বিয়ে হবে?’ শাসানোর সুরে এমন প্রশ্ন রেখে ভুক্তভোগী মা-মেয়েকে তদন্ত কর্মকর্তা তার কক্ষ থেকে বের করে দেন।

পরে থানার ওসির কাছে অভিযোগ জানালে তিনি বলেন, ‘কামরুল খারাপ। তার ব্যাপারে আরও কয়েকটি খারাপ রিপোর্ট আছে। তাই থানা থেকে তাকে বদলি করে দিয়েছি।’ এরপর তরুণীর অভিযোগ আমলে না নিয়ে ওসির নির্দেশে তাকে ও তার মাকে থানা থেকে বের করে দেন কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা। এদিকে এএসআই কামরুলও তার মোবাইল ফোন বন্ধ করে মেয়েটির সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

ভুক্তভোগী ওই তরুণী বলেন, উপায়ান্তর না পেয়ে গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এএসআই কামরুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও প্রতারণার অভিযোগে খিলগাঁও থানায় মামলা করতে গিয়েছিলাম। তখন কর্তব্যরত কর্মকর্তা সাবিনা ‘ওসি স্যার এলে আপনার সঙ্গে কথা বলবেন’ জানিয়ে অপেক্ষা করতে বলেন।

দুই ঘণ্টারও বেশি থানায় অপেক্ষা করার পর ওসির রুম থেকে কর্মকর্তা সাবিনা এসে বলেন, ‘ওসি স্যার আপনার সঙ্গে দেখা করবেন না। আপনি থানা থেকে চলে যান।’ রাত ৯টা ৪৩ মিনিটে ওসির সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করি। এ সময় এএসআই কামরুলের বিষয়ে ব্যবস্থা (মামলা) নেওয়ার অনুরোধ করলে ‘আমি এখন ব্যস্ত আছি’ বলে লাইনটি কেটে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী তরুণী আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ‘সরলতার সুযোগে কামরুল দীর্ঘদিন ধরে আমার সঙ্গে প্রতারণা করল। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় এখন সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না আমরা। এদিকে পুলিশ সদস্য হওয়ায় এএসআই কামরুলের বিরুদ্ধে মামলাও নিচ্ছেন না ওসি। এর বিচার না হলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আমার সামনে আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বেশ কয়েকবার এএসআই কামরুল হাসানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি। সুত্র: আমাদের সময়।

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ ৮ : ৫৩ পিএম, ১ আগস্ট ২০১৭, সোমবার
এইউ

Leave a Reply