মতলব আইসিডিডিআরবিতে ৭ দিনে আড়াই শতাধিক ডায়রিয়া রোগী ভর্তি

চাঁদপুর জেলা ও  আশপাশের জেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে ডায়েরিয়া। প্রতিদিনই ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর প্রচুর চাপ লক্ষ্য করা যায়।

মতলব আইসিডিডিআরবি( আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র)  হাসপাতালের দেয়া  তথ্যানুযায়ী গত ৭ দিনে  (৩০ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত) ২হাজার ৫৬৭  জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৪ শতাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছে। ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে বশস্ক রোগীর সংখ্যাই বেশী। যাদের বয়স ২৫ থেকে ৭৫ বছর পর্যন্ত। যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তিনগুন বেশী।

গত বছরের তুলনায় এ বছর এসময়ে  রোগী ভর্তি হয়েছে তার দ্বিগুণ  । আবহাওয়া জনিত কারনে এবং বাহিরের খাবার ও পঁচা /বাশি খাবারের  কারনে ডায়েরিয়ার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হাসপাতালের ৩টি কক্ষে ধারণ ক্ষমতা ৭০ জন রোগীর। বারান্দায় তাবু টানিয়ে ৪ শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের ৩টি কক্ষে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বারান্দায় বেড বিছিয়ে রোগীদের চিকিৎসা-সেবা দেওয়া হচ্ছে। ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে চাঁদপুর জেলা সদর, ফরিদগঞ্জ, হাইমচর, হাজীগঞ্জ, কচুয়া, শাহরাস্তি, মতলব উত্তর ও দক্ষিণ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর, কুমিল্লা জেলার বরুড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বুড়িচং, চান্দিনা, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা সদর, কুমিল্লা সদর উত্তর, দাউদকান্দি, দেবিদ্বার, হোমনা, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, মুরাদনগর, নাঙ্গলকোট, তিতাস উপজেলা, কক্সবাজার বাজার সদর, ফেনী, কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া, লক্ষ্মীপুর জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি উপজেলা, মুন্সিগঞ্জ জেলা সদর, নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ, চাটখিল, সোনাইমুড়ী, শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ, নারিয়া ও সখীপুর উপজেলা থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা-সেবা নিচ্ছে। তবে মতলবের ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা খুবই কম।

হাসপাতালে চিকিৎসা-সেবা নিতে আসা চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহতলী গ্রামের  নুসরাত জাহান বিথি (২১), মতলব উত্তর উপজেলার সুজাতপুর গ্রামের লিপি বেগম  (৩০)  এবং সদর মহামায়া গ্রামের সৈয়দ খান (৬০) জানান, এ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান ভালো। ডাক্তাররা রোগীদের যত্নসহকারে সেবা দিচ্ছে। হাসপাতাল থেকে রোগীদের জন্য ওরস্যালাইন, ও ট্যাবলেট সরবরাহ করছে।

আইসিডিডিআরবির সিনিয়র মেডিসিন অফিসার ডা. ফজল খান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তন এবং পঁচা, বাঁশি,দূষিত পানি ও বাহিরের খাবারের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ করে তুলতে চিকিৎসকেরা তাঁদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকেন। প্রতিদিন ৫ জন ডাক্তার, ৬ জন সিনিয়র নার্স, ২০ জন স্বাস্থ্য সহকারী ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা-সেবায় নিয়োজিত থাকেন। ভর্তি হওয়া রোগীদের সুস্থ হয়ে উঠতে ২/৩ দিন সময় লাগে।

শূন্য থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুদের পরিমাণমতো খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো, ৭ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের পরিমাণমতো খাবার স্যালাইন, একটি করে বেবিজিংক ট্যাবলেট এবং বাড়তি খাবারের মধ্যে সুজি, খিচুড়ি, ডাবের পানি, চিড়াসহ তরল খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু যদি পানির মতো পাতলা পায়খানা করে, বুকের দুধ টেনে খেতে না পারে এবং অতি মাত্রায় পিপাসা ও জ্বর, ঘনঘন বমি, পায়খানার সঙ্গে রক্ত দেখা দিলে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিয়ে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন তিনি।তবে চিকিৎসা-সেবা নিতে এসে কোনো রোগী মারা যায়নি।

প্রতিবেদক: মাহফুজ মল্লিক, ৫ এপ্রিল ২০২২

Share