Home / উপজেলা সংবাদ / মতলব উত্তর / মতলবে এসিড নিক্ষেপের দায়ে ৪ জনের ১৪ বছর কারাদণ্ড
Karadondo
প্রতীকী

মতলবে এসিড নিক্ষেপের দায়ে ৪ জনের ১৪ বছর কারাদণ্ড

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ইসলামাবাদ গ্রামে বসতঘর নির্মানকে কেন্দ্র করে ঘুমন্ত অবস্থায় একই পরিবারের ৪ জনের গায়ে এসিড নিক্ষেপের দায়ে নারীসহ ৪ জনকে ১৪বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

বুধবার (২৮ মার্চ) বিকাল ৩টায় চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) আবদুল মান্নান এ রায় দেন। রায়ে একই সাথে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ১ বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছেন।

কারাদণ্ড প্রাপ্তরা হচ্ছেন উপজেলার পূর্ব ইসলামাবাদ গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে মনির হোসেন (২৫), মেয়ে হোসনে আরা বেগম (৩০), একই বাড়ীর মৃত জুনাব আলীর ছেলে সুমন মিয়া (২৮) ও কাবিল মিয়া (২৬)। আর এসিডে দগ্ধরা হচ্ছেন একই বাড়ীর খলিলুর রহমানের বড় মেয়ে লাকী আক্তার (২৫) লাকীর স্বামী মতিউর রহমান (৪০), ছোট মেয়ে রাহিমা আক্তার (১৪) ও বড় মেয়ের কন্যা (নাতনী) জান্নাতুল ফেরদৌস (৪)।

মামলার বিবরণে জানাযায়, মামলার বাদী খলিলুর রহমান স্বপরিবারের ঢাকায় বসবাস করতেন। প্রয়োজনে মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়ীতে আসতেন। ঘটনার দিন ২০০১ সালের ২৫ এপ্রিল একই বাড়ীর উল্লেখিত আসামীদের মধ্যে মনির হোসেন ও হোসনে আরা খলিলের সম্পত্তিতে বসতঘর উঠাতে চেষ্টার করেন। এতে খলিল তাদের বাঁধা প্রদান করেন।

এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিবাদ হয়। ওইদিন রাতে পরিবারের সকলে ঘুমিয়ে পড়লে আনুমানিক ১টার দিকে খলিলের বসত ঘরের জানালা দিয়ে উল্লেখিত আসামীরা ঘুমন্ত অবস্থায় লাকী, মতিউর, রাহিমা ও শিশু জান্নাতের গায়ে এসিড নিক্ষেপ করেন। এতে করে তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থান জলশে যায়। তাদেরকে ওই অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।

এরপর খলিলুর রহমান ঘটনার ৩দিন পর ২৮ এপ্রিল মতলব উত্তর থানায় প্রথমে অজ্ঞাতানামা আসামী করে মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলাটি দীর্ঘদিন তদন্ত করে উল্লেখিত আসামীদের চিহ্নিত করেন পুলিশ। এছাড়াও আসামীদের মধ্যে মৃত জুনাব আলীর স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৫৫) তদন্তচলাকালীন সময়ে মারাগেলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পর পর ৪জন বদলী হওয়ার কারণে তৎকালীন সময়ের চাঁদপুর সিআইডির উপ-পরিদর্শক (এসআই) অরুন কুমার দত্ত ২০০২ সালের ২০ এপ্রিল তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। অভিযোগ পত্র নম্বর: ২৬।

চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউর (পিপি) এডভোকেট হাবিবুল ইসলাম তালুকদার জানান, মামলাটি প্রথমে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চলমান ছিলো। পরবর্তীতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল আদালত শুরু হলে মামলার কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়।

দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর মামলাটি চলমান অবস্থায় আদালত ২৭জন সাক্ষীর মধ্যে ১৯জনের সাক্ষ গ্রহন করেন। এতে সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে এবং আসামীরা অপরাধী সাব্যস্ত হওয়ায় তাদের উপস্থিতিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৪ (২) এর ‘খ’ ধারায় প্রত্যেক আসামীকে ১৪ বছর সশ্রম কারাদন্ড, প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে ১ বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।

সরকার পক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) ছিলেন অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া এবং আসামী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন কাজী হাবিবুর রহমান।

প্রতিবেদক : সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট