Home / সারাদেশ / কুমিল্লায় এখনও জমে উঠেনি পশুর হাটগুলো
cow4
প্রতীকী ছবি

কুমিল্লায় এখনও জমে উঠেনি পশুর হাটগুলো

কোরবানির ঈদের আর মাত্র ১০ দিন বাকি থাকলেও কুমিল্লায় এখনো জমে উঠেনি কোরবানীর পশুর হাটগুলো। অন্যান্য বছর গুলোতে এমন সময় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনসহ জেলার ১৭টি উপজেলায় পশুর হাটগুলো বেশ জমজমাট হয়ে উঠতো। এ বছর এখন্ও পর্যন্ত সেরকম কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। ফলে পশুখামারীরা তাদের পশুগুলো বিক্রি এবং যথাযথ দাম পাবে কি না এ নিয়ে বেশ উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।

এদিকে হাটের বিকল্প হিসেবে অনলাইনে পশু কেনা-বেচার ব্যপক প্রস্তুতি হাতে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর জানিয়েছেন করোনা সংক্রমন রোধে এ বছর পশুর হাট কমিয়ে আনা হয়েছে। জনগণের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথাটি মাথায় রেখে হাটগুলোতে জনগণের উপস্থিতি কম হয় সে লক্ষ্যে ভার্চুয়াল পশুর হটের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ লক্ষ্যে একটি এ্যাপসও চালু করেছে জেলা প্রশাসন।

২০ জুলাই সোমবার বিকেলে জেলা প্রশাসন সম্মেলণ কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টেরের মাধ্যমে দেখানো হয় কিভাবে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে এবং ক্রেতা-বিক্রেতারা কিভাবে পশু ক্রয়-বিক্রয় করবেন।

সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ আবুল ফজল মীর জানান, কুমিল্লায় কোরবানির পশুর পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, অ্যাপ চালু করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ২০ হাজার পশুর নিবন্ধন হয়েছে। এরই মধ্যে কুমিল্লা জেলায় ৬৯ লাখ টাকার পশু অনলাইনে কেনাবেচা হয়েছে। শীঘ্রই এটির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ পশুর তথ্য জানা এবং কেনা-বেচা করা যাবে। এই এ্যাপসে নিবন্ধিত পশু সম্পর্কিত সব ধরণের ডাটা সংরক্ষন রয়েছে বলে জানান তিনি।

কুমিল্লা জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডা.নজরুল ইসলাম বলেন, এবছর জেলায় ০২ লক্ষ ২০ হাজার ৩০২টি পশুর চাহিদা রযেছে। এদিকে জেলায় ০২ লক্ষ ৩১ হাজার ৬৫৪ টি পশু পালন করেছেন খামারী ও কৃষকরা। করোনার কারনে এ বছর সচেতন মানুষরা পশু কিনতে হাটে যেতেও আগ্রহ হারাচ্ছেন। তাই এ্যাপসের মাধ্যমে কেনাবেচায় ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
তবে, অনেক খামারী এখনও জেলা প্রশাসনের এ্যাপসের বিষয়টি জানেন না বলে তারা জানান।

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের কোটবাড়ীর মাহবুব আলম ও সালমান পুর এলাকার ইসমাইল হোসেনসহ বেশ কিছু পশু মোটাতাজাকরণ খামারী মালিক জানান, এখন পরযন্ত তারা সরকারের এই অনলাইন ক্রয়-বিক্রয়ের সুবিধাটির কথা জানেন না।

খামারী ইসমাইল জানান, তার খামারে যেসব গরু রয়েছে প্রতিটি গরু গড়ে ২ লাখ টাকা করে বিক্র হবে। ইতিমধ্যেই একটি গরু বিক্রিও করেছেন। বাকী গরু গুলো নিয়ে তিনি বেশ চিন্তিত। কারন এখনও বাজার তেমন একটা জমেনি। তাছাড়া এমন বড় গরু বাজারে নেয়টা অনেক কঝামেলা। প্রথমত একটি গরু বাজারে নিতে গেলে এর সাথে দুজন শ্রমিক লাগে, যাতায়ত খরচ লাগে এবং গরুগুলো বাজারে আনাযেয়া করাটাও বেশ ঝুঁকীর বিষয়। অসুস্থ হবারও সম্ভাবনা থেকে যায়। তিনি বলেন, এসব কিছু বিবেচনায় সরকার যে অনলাইন চালু করেছে তা অন্যন্ত ভালো একটি কাজ হয়েছে। অনলাইনে পশু বিক্রি করতে পারলে তাদের অনেক সুবিধা হতো বলে জানান তিনি।

এদিকে এবছর করোনার প্রদুর্ভাবের কারনে সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী হাটের সংখ্যা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশান। জেলা প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী গেলো বছর জেলায় ৩৮০টি স্থানে পশুর হাট বসেছিলো। এবছর ৩৪০টি অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমোদন দিয়েছে প্রশাসন। অন্যদিকে, কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৩৮টি স্থায়ী হাটের পাশাপাশি কোরবানী উপলক্ষে ৩৪০টি অস্থায়ী হাট মিলিয়ে সর্বমোট ৩৭৮টি হাটে পশু কেনাবেচা হবে।

জেলা প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলা এলাকায় ২০টি, সদর দক্ষিণে ২৩টি, লালমাইয়ে ০১টি, বরুড়ায় ৪১টি, ব্রাহ্মনপাড়ায় ২০টি, নাঙ্গলকোটে ৩২টি, মনোহরগঞ্জে ২১টি, দেবিদ্বারে ৩০টি, চৌদ্দগ্রামে ৩৫টি, লাকসামে ২১টি, দাউদকান্দিতে ২১টি, তিতাসে ১৪টি, হোমনা ১৮টি, বুড়িচং ২৫টি, চান্দিনায় ১৫টি, মুরাদনগরে ৩৪টি এবং মেঘনায় ০৭টি স্থানে বসছে কোরবানির পশুর হাট।

হাটের নিরাপত্তার বিষয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার মোঃ সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, যতগুলো হাট পরিচালিত হউক না কেন সবগুলো হাটে পুলিশি নজরধারী থাকবে। হাটে শৃংঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পক্ষ থেকে সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে ১০ জুলাই শুক্রবার বিকেলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক জুম কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘কুমিল্লা অনলাইন পশুর হাট’ নামে এ্যাপস্’টির উদ্বোধন করেন।

জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জুম কনফারেন্সে সংযুক্ত হন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি, কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য হাজী আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার, কুমিল্লা- ৭ (চান্দিনা) আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ, কুমিল্লা- ৫ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট আবদুল মতিন খশরু, কুমিল্লা- ২ আসনের সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ মেরী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব এন এম জিয়াউল হকসহ আরো অনেকে। এতে সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ আবুল ফজল মীর।

ওই সভায়ও ‘কুমিল্লা অনলাইন পশুর হাট এ্যাপস’-এ কিভাবে পশু ক্রয়-বিক্রয় হবে তা দেখানো হয়।

প্রতিবেদক:জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, ২১ জুলাই ২০২০