Home / বিশেষ সংবাদ / বেকায়দায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি !
bnp + awamiligue

বেকায়দায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি !

কমিটি-কর্মীসভা ও অস্থিরতায় বেকায়দায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি ।

পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় আওয়ামী লীগের ১০টি সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল নেতাদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। অনেকেই নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে।

জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন ও কর্মীসভা নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। দলটির হাইকমান্ড থেকে বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও সম্মেলন করে জেলা কমিটি গঠন করতে পারেননি তৃণমূল নেতারা। এতে বাধ্য হয়ে অনেক জেলায় কেন্দ্র থেকে কমিটি গঠন করে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে ৭৭টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৫০টিতে জেলা কমিটি হয়েছে। অথচ হাইকমান্ড থেকে গত ৭ মে’র মধ্যে জেলায় জেলায় কর্মিসভা করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু তৃণমূল নেতাদের গ্রুপিং-বিরোধ ও দু’পক্ষের সংঘর্ষের কারণে নির্ধারিত সময়ে অন্তত ২৫ জেলায় কর্মিসভা হতে পারেনি। দলীয় সূত্র জানায়, এতে দলের হাইকমান্ডে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

১০ জেলায় আওয়ামী লীগে অস্থিরতা:

পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় আওয়ামী লীগের ১০টি সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল নেতাদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। অনেকেই নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। ফরিদপুর, সুনামগঞ্জসহ কয়েকটি জেলার চিত্র আরও প্রকট। এই দুটি জেলায় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের মধ্যকার বিরোধ চলমান গৃহদাহ পরিস্থিতিকে আরও উস্কে দিয়েছে।

২০১৬ সালের ২২-২৩ অক্টোবর জাতীয় সম্মেলনের আগে ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে কমপক্ষে ৭৫টিতে সম্মেলন করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা। জেলা সম্মেলনগুলোতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন এবং পরে গঠনতান্ত্রিক বিধান অনুযায়ী জেলা থেকে পাঠানো পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নয়টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি নিয়ে অচলাবস্থা হয়ে আছে। এর মধ্যে কয়েকটি

জেলার কমিটি কেন্দ্রের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। কয়েকটি জেলার কমিটি অনুমোদনের জন্য এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হয়নি। কয়েকটি জেলা থেকে দুই কমিটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এ কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। অনেকেই এক ধরনের হতাশায় পড়েছেন। বিশেষ করে গত ২০ মে দলের বর্ধিত সভায় অংশ নিতে না পেরে অনেকেই অসন্তুষ্ট হয়েছেন। এই বর্ধিত সভায় প্রতিটি সাংগঠনিক জেলা ও মহানগর শাখার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকসহ দপ্তর সম্পাদক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, উপ-দপ্তর সম্পাদক, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকদের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় চাঁদপুর, ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ মহানগর, ফরিদপুর, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, শরীয়তপুর, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের নেতাকর্মীরা সভায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাননি। এ নিয়ে তারা জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের দুষেছেন।

কুমিল্লা মহানগরের চিত্র অবশ্য কিছুটা ব্যতিক্রম। এই সাংগঠনিক জেলায় কোনো কমিটিই নেই। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তো দূরের কথা, এ জেলায় আহ্বায়ক কমিটিও নেই। এ কারণে কুমিল্লা মহানগর থেকে তৃণমূল পর্যায়ের কোনো নেতৃত্বই বর্ধিত সভায় আসতে পারেননি।

চাঁদপুর জেলার সম্মেলন হয়েছে ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি। দেড় বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও এই জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন পায়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া বলেছেন, বহু আগেই পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি কমিটি অনুমোদিত না হওয়ায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে গিয়ে কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।

ময়মনসিংহ জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি স্থানীয়ভাবে চূড়ান্ত করা হলেও কেন্দ্রের অনুমোদনের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়নি। জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল জানিয়েছেন, গত বছরের ৩০ জুন সম্মেলনের প্রায় ছয় মাস পর জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর স্থানীয়ভাবে আলোচনার পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। কেন্দ্রের অনুমোদনের জন্য খুব দ্রুতই এই কমিটির তালিকা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে জমা দেওয়া হবে। তিনি দেরিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন প্রসঙ্গে বলেছেন, দীর্ঘ ১৪ বছর পর সম্মেলন হয়েছে। এ কারণে নেতৃত্বে জট বেঁধেছে। কাকে বাদ দিয়ে কাকে পদ-পদবিতে রাখা হবে, তা নিয়েই প্রকট সংকট তৈরি হয়েছে।

২০১৬ সালের ৩০ এপ্রিল ময়মনসিংহ মহানগরের সম্মেলন হলেও ২৮ ডিসেম্বর এহতেশামুল আলমকে সভাপতি ও মোহীত উর রহমান শান্তকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনও হয়নি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোহীত উর রহমান শান্ত জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এই কমিটি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হবে।

এমনিতেই ফরিদপুর জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেনের মধ্যে বনিবনা নেই। উপরন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে দুই নেতার মধ্যকার দূরত্ব আরও বেড়েছে। ২০১৬ সালের ২২ মার্চ এই জেলায় সম্মেলন হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি এখনও। দুই নেতাই নিজেদের মতো করে আলাদাভাবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা বলেছেন, সবাই একমত না হওয়ার কারণে আলাদাভাবে কমিটি জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বনিবনা না থাকা সম্পর্কে বলেছেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। বড় দলে সমস্যা থাকবেই। এটা কোনো বিষয় নয়। সৈয়দ মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন, এক ধরনের জটিলতা তৈরি হওয়ায় আলাদাভাবে কমিটি জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, এই জেলার সভাপতি নিজের ইচ্ছায় চলেন না। অনেকের আদেশ-নির্দেশ পালন করেন। এ কারণে দলের ভেতরে সমস্যা তৈরি হয়েছে।

সুনামগঞ্জের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়েও জেলার সভাপতি মতিউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-বিবাদে জড়িয়ে পড়েছেন। এ দুই নেতাই আলাদাভাবে কমিটির তালিকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। কিন্তু আজতক পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন মেলেনি। প্রায় ২০ বছর পর ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এই জেলায় সম্মেলন হলেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যকার বিরোধ মেটেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিউর রহমান বলেছেন, জেলার সাধারণ সম্পাদক কখনোই ছাত্রলীগ কিংবা যুবলীগের রাজনীতি করেননি। হঠাৎ নেতা হয়েছেন। তার আচরণেও সমস্যা আছে। এনামুল কবির ইমন জানিয়েছেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরেই সংকটের শুরু। দলীয় প্রার্থী হওয়ার পরও তাকে সমর্থন করেননি জেলার সভাপতি।

নেত্রকোনায় অবশ্য সুনামগঞ্জের মতো নেতায়-নেতায় বিবাদ নেই। তবে প্রায় ছয় মাস আগে প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হলেও এখনও অনুমোদন পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন জেলা সভাপতি মতিয়র রহমান খান। এ কারণে এক ধরনের সাংগঠনিক সংকট তৈরি হয়েছে বলেও মনে করছেন এই নেতা। একই মন্তব্য করেছেন জেলা সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী খান খসরুও। ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা সম্মেলন হয়েছে। শরীয়তপুরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি প্রায় দেড় বছরে। এ ব্যাপারে জেলা সভাপতি সাবিদুর রহমান খোকা শিকদার বলেছেন, স্থানীয়ভাবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ গুছিয়ে আনা হয়েছে। খুব দ্রুতই চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এই কমিটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হবে।

নারায়ণগঞ্জ জেলায় সম্মেলন না হলেও আবদুল হাইকে সভাপতি, স্থানীয় সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সহসভাপতি ও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় আট মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় সাংগঠনিক কর্মসূচি পালনে কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবদুল হাই। তিনি বলেছেন, এক মাস আগে জমা দেওয়া হলেও আজতক পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন পাওয়া যায়নি। গাজীপুরেও সম্মেলন হয়নি নারায়ণগঞ্জের মতো। ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে সভাপতি ও ইকবাল হোসেন সবুজকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর গত জানুয়ারি মাসে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়া হলেও এখনও অনুমোদন মেলেনি বলে জানিয়েছেন ইকবাল হোসেন সবুজ। –

কমিটি ও কর্মিসভা নিয়ে বেকায়দায় বিএনপি:

জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন ও কর্মিসভা নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। দলটির হাইকমান্ড থেকে বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও সম্মেলন করে জেলা কমিটি গঠন করতে পারেননি তৃণমূল নেতারা। এতে বাধ্য হয়ে অনেক জেলায় কেন্দ্র থেকে কমিটি গঠন করে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে ৭৭টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৫০টিতে জেলা কমিটি হয়েছে। অথচ হাইকমান্ড থেকে গত ৭ মে’র মধ্যে জেলায় জেলায় কর্মিসভা করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু তৃণমূল নেতাদের গ্রুপিং-বিরোধ ও দু’পক্ষের সংঘর্ষের কারণে নির্ধারিত সময়ে অন্তত ২৫ জেলায় কর্মিসভা হতে পারেনি। দলীয় সূত্র জানায়, এতে দলের হাইকমান্ডে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করে বলা হচ্ছে, নিজেদের মধ্যে মারামারির কারণে নয়, স্থান পাওয়া না যাওয়ায় কর্মিসভা করে জেলা কমিটি গঠন করা যাচ্ছে না। বিএনপি যাতে সম্মেলন করতে না পারে, সে জন্য বিভিন্নভাবে সরকারের প্রশাসন থেকে বাধা

দেওয়া হচ্ছে। যেসব নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা রয়েছে, তাদের গ্রেফতারের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। এসব কারণে জেলা কমিটি গঠনে বিলম্ব হচ্ছে।

বিএনপির ভিশন-২০৩০ ঘোষণার পর দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গা ভাব ফিরে এলেও নতুন করে জেলা কমিটি ও কর্মিসভা করা নিয়ে উপদলীয় কোন্দল ও অভ্যন্তরীণ বিরোধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কোথাও তৃণমূল পর্যায়ে নেতৃত্বের প্রভাব বিস্তার, আবার কোথাও কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়া নেতাকে জেলা কমিটির সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক করা, কেন্দ্রীয় নেতাদের আপন লোকদের কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান দেওয়া ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে মূলত তৃণমূলে মতবিরোধ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এসব দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং আগে থেকে সমাধান না করে হঠাৎ জেলায় জেলায় কর্মিসভা করায় নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ লেগে যাচ্ছে। তৃণমূল নেতাদের এসব গ্রুপিংয়ের খবর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জানার পর প্রবল বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। আর যেসব জেলায় সম্মেলন করলে সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে, সেখানে কেন্দ্র থেকে কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের ৭৭টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৫০টিতে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে অল্প ক’টি জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলেও অধিকাংশ জেলায় আংশিক কমিটি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, ৭৭টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ২৭টিতে পুরনো কমিটি রয়েছে। এই ২৭টি জেলায়ও নতুন কমিটি হবে। দলের দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, দেশের অধিকাংশ জেলায় কর্মিসভা হয়েছে। নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ ও গ্রুপিং থাকায় ১৫টি জেলায় কর্মিসভা করা যায়নি। ঈদুল ফিতরের পর এসব জেলায় কর্মিসভা করা হবে।

এদিকে দলের একটি সূত্র জানায়, নিজেদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে ৭৭টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অন্তত ২৫ জেলায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র বিরোধ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, কুমিল্লা উত্তর, ময়মনসিংহ উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ, পটুয়াখালী, ঢাকা, রাজশাহী, জয়পুরহাট, মাগুরা, বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা, মৌলভীবাজার, মাদারীপুর ও ঝিনাইদহে কর্মিসভা হয়নি। চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণের সাংগঠনিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে সেখানে কর্মিসভায় প্রকাশ্যে মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব বিরোধের নেপথ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়ী করেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

অবশ্য এসব সমস্যা আমলে নিচ্ছেন না বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সমকালকে বলেন, বিএনপি দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল। বিএনপির কর্মকাণ্ড সরকারি দলের নেতাকর্মীরা ভালো চোখে দেখছেন না। ফলে বিএনপির কর্মিসভা যাতে সুষ্ঠুভাবে হতে না পারে, সে জন্য সরকার বিভিন্নভাবে বাধা দিচ্ছে। আর বড় রাজনৈতিক দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবেই। ফলে ছোটখাটো সমস্যা হতেই পারে।

বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা জেলা বিএনপির মধ্যে দীর্ঘদিন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের অনুসারী নেতাকর্মীদের গ্রুপিং ও বিরোধ চলছে। গত মাসে ঢাকা জেলা কমিটির সম্মেলনে দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি হলে সম্মেলন পণ্ড হয়ে যায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাক এবং ঢাকা জেলা যুবদলের আহ্বায়ক নাজিম উদ্দিন ওরফে ভিপি নাজিম ঘটনার জন্য ওই দু’জনকে দায়ী করে দলের চেয়ারপারসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

গোপালগঞ্জ জেলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কোনো কর্মসূচি পালিত হয় না। জেলা বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম নতুন করে জেলা কমিটি গঠনে আগ্রহী নন। কারণ, তিনি আবার সভাপতি হতে চান। এ জন্য তিনি বেশিরভাগ সময় ঢাকায় থাকেন। আর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মনসুর আলী এলাকায় থাকলেও সভাপতির সহযোগিতা না পাওয়ায় কমিটি গঠন কিংবা দলীয় কর্মসূচি পালন করতে পারছেন না বলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানান।

জয়পুরহাট জেলা বিএনপির অবস্থাও একই রকম। দু’পক্ষের বিবাদ-দ্বন্দ্বের মধ্যে জেলা বিএনপির একাংশের নেতৃত্বে আছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত আবদুল আলীমের ছেলে ফয়সল আলীম। অন্য অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা বিএনপির সভাপতি মোজাহার আলী প্রধান ও সাধারণ সম্পাদক নাফিজুর রহমান পলাশ। কমিটিতে ফয়সাল আলীমকে সভাপতি করার জন্য দলের একটি গ্রুপ কাজ করছে। অন্যদিকে জেলা কমিটি গঠন না হলে বর্তমানে যারা দায়িত্বে আছেন, তারাই থাকবেন। এ বিষয়টি চিন্তা করেই গত ৯ মে জয়পুরহাট টাউন হলে বিএনপির কর্মিসভায় নেতৃত্বের প্রভাব বিস্তার করা হয়। এ নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। যদিও বিএনপি এ ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থক নেতাকর্মীদের দায়ী করেছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের কারণে চুয়াডাঙ্গা জেলায় দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি তার ছোট ভাই জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়েদুজ্জামান বুলাকে জেলা কমিটির সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক দেখতে চান। অন্যদিকে, প্রয়াত সাবেক এমপি শহীদুল ইসলাম বিশ্বাসের ছোট ভাই জেলা কমিটির আহ্বায়ক ওহিদুল ইসলাম বিশ্বাস নিজেই জেলা বিএনপির সভাপতি হতে চান। এ নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় দফায় দফায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, যে কারণে জেলা কমিটিও হচ্ছে না।

পটুয়াখালীতে বিরোধের নেপথ্যে দায়ী করা হয়েছে সাবেক স্ব্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ারভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে। তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, আলতাফ চৌধুরী তার পছন্দের লোকদের হাতে কমিটি তুলে দিতে চান।

পিরোজপুরে বিরোধ গাজী বাবুল ও আলমগীর হোসেনের দুই গ্রুপের মধ্যে। বরগুনার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে নিতে চান চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। মৌলভীবাজার জেলায় দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব চলছে সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম সাইফুর রহমানের ছেলে নাসের রহমান ও সাবেক এমপি খালেদা রাব্বানীর মধ্যে।
(সূত্র প্রাইমনিউজবিডি.কম)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময়১২:৩০ পি.এম, ০৯ জুন ২০১৭,শুক্রবার
ইব্রাহীম জুয়েল

Leave a Reply