Home / উপজেলা সংবাদ / বিত্তবানদের দৃস্টি আকর্ষণ : ঈদের আনন্দ ওদের স্পর্শ করে না!
বিত্তবানদের দৃস্টি আকর্ষণ : ঈদের আনন্দ ওদের স্পর্শ করে না!
মতলবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের হতদরিদ্র পরিবারের শিশুরা ও তাদের অভিভাবকগণ

বিত্তবানদের দৃস্টি আকর্ষণ : ঈদের আনন্দ ওদের স্পর্শ করে না!

‎Thursday, ‎16 ‎July, ‎2015  09:17:56 PM

মোঃ কামাল হোসেন খান, মতলব (চাঁদপুর)
সামনে ঈদ। ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ। কিন্তু চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ভূমিহীন আশ্রায়ণ প্রকল্প এলাকার অধিবাসীরা ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত। ঈদ এদের জীবনে বাড়তি আনন্দ বয়ে আনে না। বছরের অন্যান্য দিনের মতই কাটবে ঈদের দিনটি।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ভূমিহীন আশ্রায়ণ প্রকল্পের ৭শ’র বেশি শিশু ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত। শিশুদের মধ্যে নেই, নতুন জামা-কাপড় পরে ঈদ উদযাপনের পরিকল্পনা। পরিবারের বড়রা ঈদের কেনাকাটা না করার কষ্ট চেপে রাখতে পারলেও ছোটদের নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। নদী ভাঙনের শিকার হয়ে এই আশ্রয়ণের হতদরিদ্র পরিবারগুলোর মাঝে নেই ঈদকে ঘিরে বাড়তি কোনো আয়োজন। এখানে নুন্যতম মৌলিক চাহিদার বেশির ভাগই অনুপস্থিত।
১৯৯৮ সালে সরকারি অর্থায়নে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার এখলাছপুর ইউনিয়নে নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে মাটি কেটে উঁচু করে তৈরি করা হয়েছিলো ভূমিহীনদের জন্য এ আশ্রয়ন পল্লীটি। যেখানে আশ্রয় দেয়া হয়েছিলো এই হতদরিদ্র জনগোষ্ঠিকে। শুধু এখলাছপুর আশ্রয়াণ প্রকল্পের বাসিন্দারাই নয়, উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়ণ ও আবাসন প্রকল্পের শিশুদের মাঝে একই চিত্র দেখা যায়।

জানা যায়, তাদের আশ্রয়ন প্রকল্পটি সিমেন্টের খুঁটির ওপর টিনের চালা ও বেড়া দিয়ে ১৩টি ব্যারাক তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি ব্যারাকে ১০টি করে কক্ষ, একটি নলকূপ ও টয়লেট রয়েছে। একটি কক্ষ মানেই একটি পরিবার। পদ্মা-মেঘনার ভাঙনে সব হারিয়ে এখানে আশ্রয় পেয়েছে ১৩০টি পরিবার। আশ্রয়ন প্রকল্পের ৮০টি ও আবাসন প্রকল্পের ৫০টি ভূমিহীন পরিবারের ১ হাজার ৩শ’রও বেশি মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

সরেজমিনে আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলো বেশির ভাগই নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। এখন নদীতে ইলশ মাছ শূন্য। ওরা অভাব-অনটনের সঙ্গে বেঁচে থাকার লড়াই তাদের নিত্যদিনের সঙ্গি। ওদের বেঁচে থাকা মানেই ভালো থাকা। দিন এনে দিন খেতেই কষ্ট। তাদের আবার ঈদে নতুন কাপড়, পোলাউ-কোরমা ও সেমাই ভাগ্যে জোটবে কি করে? তাই শতকরা ৯০ ভাগ শিশুর অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ঈদের জামা-কাপড় কিনে দিতে পারেনি।

আশ্রয়ণের বাসিন্দা খোর্শেদা বেগম জানান, তার স্বামী নদীতে মাছ ধরে যা পায় তা দিয়ে ৪ সন্তান নিয়ে খেয়ে-পরে কোনো রকম বেঁচে আছেন। নদীতে এখন মাছ নেই, পরিবারের আহার জোগাতে পারে না, আবার সন্তানদের নতুন জামা-কাপড় দিবে কোথা থেকে? আশ্রায়ন প্রকল্পে আশ্রয় নেওয়া নদীতে মাছ ধরে জিবীকিা নির্বাহ করা খোরশেদ আলমের ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র পারভেজ (১৪) জানায়, কোনো ঈদে সে নতুন জামা-কাপড় পায় না। ঈদে নতুন জামা-কাপড় পরতে না পারলে সারাদিন মন খারাপ থাকে। জামা না পেয়ে কাঁদলেও বাবা শুনেন না। মোঃ মনছুর আহম্মেদ এর মেয়ে ততৃীয় শ্রেণীর ছাত্রী নাছিমা আক্তার (৯) জানায়, ঈদকে ঘিরে কোনো নতুন জামা-কাপড় সে পায়নি। এ ঈদে নতুন জামাকাপড় না পেয়ে সে খুবই হতাশ।

এখলাছপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মোসাদ্দেক হোসেন মুরাদ অপ্রতুল বরাদ্দের কথা উল্লেখ করে জানান, ঈদে যেন না খেয়ে থাকতে হয়, সেজন্য ভিজিএফ কার্ডের আওতায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রতি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। আশ্রয়নের পরিবারগুলো বেশিরভাগ জেলে হওয়ায় নদীতে মাছ না থাকায় তাদের কষ্ট ও দুর্ভোগ এখন একটু বেশি। তবে জেলেদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তিনি সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের আশ্রয়ান প্রকল্পদের ছেলেমেয়েদের সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান।

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমএএ/২০১৫।
চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।